ঢাকা ০২:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুখের দূর্গন্ধ? কথা বলতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করছেননা?

ডেন্টিষ্ট মুরাদ

মুখে দুর্গন্ধ (Halitosis)- অত্যন্ত বিব্রতকর এক সমস্যা বটে। এটি ভুক্তভোগীর জন্যে যেমন পীড়াদায়ক, তেমনি তাঁর আশেপাশের মানুষের জন্যেও। অনেকেই অভিযোগ করেন যে, “দাঁত দুই বেলা ব্রাশ করি, নামী কোম্পানির টুথপেস্ট/মাউথওয়াশ ব্যবহার করি, তারপরেও মুখে দুর্গন্ধ!”

কিন্তু মুখের দুর্গন্ধ রোধে শুধু এটুকুই কি যথেষ্ট?

আসুন দেখে নিই মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়ার কিছু সম্ভাব্য কারণ:
🔸 মুখগহ্বরের পরিচ্ছন্নতায় ঘাটতি-
* প্রতিদিন দুই বেলা দাঁত ব্রাশ করতে অবহেলা,
* দাঁত ব্রাশ করা হয় ঠিকই, কিন্তু তা সঠিক পদ্ধতিতে নয়,
* প্রতিদিন জিহ্বা পরিস্কার না করা- মানুষের জিহ্বা স্বাভাবিক অবস্থায় পুরোপুরি মসৃণ হয় না, অনেকটা কার্পেটের মত হয়, যার ফাঁকে ফাঁকে দুর্গন্ধযুক্ত volatile sulphur compound উৎপন্নকারী ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। তাই নিয়মিত জিহ্বা পরিষ্কার না করলে মুখে দুর্গন্ধ হওয়া মোটামুটি অবধারিত।
* যাঁদের মুখে ক্ষয়প্রাপ্ত বা ভাঙা দাঁত, আকাবাঁকা দন্তবিন্যাস, ত্রুটিযুক্ত restoration (filling), ত্রুটিযুক্ত fixed prosthesis (artificial crown, bridge) আছে; fixed orthodontic appliance (braces) পরানো আছে তাঁরা খাবার খাওয়ার পর সেগুলো ভালভাবে পরিষ্কার না করতে পারলে মুখগহ্বরে খাদ্যকণা আটকে থাকতে পারে।
🔸মুখগহ্বরের বিভিন্ন রোগ, যেমন- দাঁত ও মাড়ির মধ্যস্থলে calculus (পাথর) জমা হওয়া, periodontitis, acute necrotising ulcerative gingivitis, abscess, লালাগ্রন্থির সংক্রমণ, মুখে ঘা, মুখের ক্যান্সার প্রভৃতি।
🔸খাবার – কাঁচা পেঁয়াজ বা রসুন, ব্রকোলি, ফুলকপি, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার (দুধ, পনির, মাছ) ইত্যাদি গ্রহণের পর সাময়িক দুর্গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে।
🔸 মুখ শুষ্ক থাকা:
* মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া,
* কফি, অ্যালকোহল গ্রহণ,
* ধূমপান,
* লালাগ্রন্থির বা শরীরের অন্যান্য রোগ,
* কিছু সুনির্দিষ্ট ঔষধের প্রভাবে মুখগহ্বর শুষ্ক হয়।
🔸 টনসিলোলিথ, ক্রনিক সাইনুসাইটিস, ব্রংকাইটিস, ফুসফুসের সংক্রমণ, গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ, অটোইমিউন রোগ, ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস, লিভার ফেইলিওর, রেনাল ফেইলিওর সহ বিভিন্ন রোগে মুখে অস্বাভাবিক গন্ধ পাওয়া যেতে পারে।

এসবের কোনও টি উপস্থিত থাকলে তা না সারিয়ে কেবল সুগন্ধিযুক্ত টুথপেস্ট, মাউথওয়াশ বা মাউথ ফ্রেশনার ব্যবহার করে কখনওই মুখের দুর্গন্ধ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া সম্ভব না। বরং এদিকে সাময়িক সমাধানের পেছনে ছুটতে ছুটতে ওদিকে মূল সমস্যা গভীরে বিস্তৃত হওয়ার ঝুঁকি থাকে‼️

কীভাবে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়া রোধ করা যায়?
👉 প্রতিদিন সকালে নাশতা খাওয়ার পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে “সঠিক পদ্ধতিতে” দাঁত ব্রাশ করা।
আমরা অনেকেই খুব তাড়াহুড়া করে দায়সারাভাবে দাঁত ব্রাশ করি। দাঁতের ভেতরের দিক (যেটি তালু বা জিহ্বার দিকে থাকে), মাড়ির কিনারা, ওপরের ও নিচের পাটির শেষ দাঁতের পেছন পর্যন্ত পরিষ্কার করা হচ্ছে কিনা, অতকিছু কয়জন খেয়াল করি?
অথচ এভাবে কিন্তু ব্রাশিংয়ের মূল উদ্দেশ্য সাধিত হয় না! দাঁত ব্রাশ করতে হবে অন্তত দুই মিনিট সময় নিয়ে এবং সে সময় উল্লেখিত দিকগুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
👉 জিহ্বা পরিষ্কার করতে হবে প্রতিদিন।
👉 দুই দাঁতের মধ্যবর্তী অংশে যেখানে টুথব্রাশ পৌঁছায় না, সেখানে জমে থাকা ডেন্টাল প্লাক ও খাদ্যকণা দূর করতে ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে হবে।
👉 খাবার খাওয়ার পর ভালভাবে মুখ কুলকুচি করতে হবে।
👉 প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা হচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
👉 ধূমপান থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
👉 ডিটারজেন্ট ফুড, যেমন শসা, গাজর, আখ, আপেল, নাশপাতি, সেলেরি, লেটুস প্রভৃতি দাঁতে আটকে থাকা খাদ্যকণা দূর করতে সহায়ক। এগুলো চিবিয়ে খেলে মুখ পরিস্কার থাকে, দুর্গন্ধ হ্রাস পায়।
👉 লবণ-হালকা গরম পানি দিয়ে মাঝেমধ্যে মুখ কুলকুচি ও গড়গড়া করা যেতে পারে।

যদি ইতোমধ্যে মুখে দুর্গন্ধের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে, তাহলে নিকটস্থ ডেন্টিষ্টকি দেখিয়ে নেন, সমস্যার কারণ নির্ণয় করে, তা দূর করার ব্যবস্থা নিন। ফিরে পান হারানো আত্মবিশ্বাস, সামাজিক পরিমণ্ডল মুখরিত হোক আপনার সাবলীল বিচরণে।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

লক্ষ্মীপুরের উত্তরচরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির বিলুপ্ত  

মুখের দূর্গন্ধ? কথা বলতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করছেননা?

আপডেট : ০৭:৫৯:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ অক্টোবর ২০২২

মুখে দুর্গন্ধ (Halitosis)- অত্যন্ত বিব্রতকর এক সমস্যা বটে। এটি ভুক্তভোগীর জন্যে যেমন পীড়াদায়ক, তেমনি তাঁর আশেপাশের মানুষের জন্যেও। অনেকেই অভিযোগ করেন যে, “দাঁত দুই বেলা ব্রাশ করি, নামী কোম্পানির টুথপেস্ট/মাউথওয়াশ ব্যবহার করি, তারপরেও মুখে দুর্গন্ধ!”

কিন্তু মুখের দুর্গন্ধ রোধে শুধু এটুকুই কি যথেষ্ট?

আসুন দেখে নিই মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়ার কিছু সম্ভাব্য কারণ:
🔸 মুখগহ্বরের পরিচ্ছন্নতায় ঘাটতি-
* প্রতিদিন দুই বেলা দাঁত ব্রাশ করতে অবহেলা,
* দাঁত ব্রাশ করা হয় ঠিকই, কিন্তু তা সঠিক পদ্ধতিতে নয়,
* প্রতিদিন জিহ্বা পরিস্কার না করা- মানুষের জিহ্বা স্বাভাবিক অবস্থায় পুরোপুরি মসৃণ হয় না, অনেকটা কার্পেটের মত হয়, যার ফাঁকে ফাঁকে দুর্গন্ধযুক্ত volatile sulphur compound উৎপন্নকারী ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। তাই নিয়মিত জিহ্বা পরিষ্কার না করলে মুখে দুর্গন্ধ হওয়া মোটামুটি অবধারিত।
* যাঁদের মুখে ক্ষয়প্রাপ্ত বা ভাঙা দাঁত, আকাবাঁকা দন্তবিন্যাস, ত্রুটিযুক্ত restoration (filling), ত্রুটিযুক্ত fixed prosthesis (artificial crown, bridge) আছে; fixed orthodontic appliance (braces) পরানো আছে তাঁরা খাবার খাওয়ার পর সেগুলো ভালভাবে পরিষ্কার না করতে পারলে মুখগহ্বরে খাদ্যকণা আটকে থাকতে পারে।
🔸মুখগহ্বরের বিভিন্ন রোগ, যেমন- দাঁত ও মাড়ির মধ্যস্থলে calculus (পাথর) জমা হওয়া, periodontitis, acute necrotising ulcerative gingivitis, abscess, লালাগ্রন্থির সংক্রমণ, মুখে ঘা, মুখের ক্যান্সার প্রভৃতি।
🔸খাবার – কাঁচা পেঁয়াজ বা রসুন, ব্রকোলি, ফুলকপি, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার (দুধ, পনির, মাছ) ইত্যাদি গ্রহণের পর সাময়িক দুর্গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে।
🔸 মুখ শুষ্ক থাকা:
* মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া,
* কফি, অ্যালকোহল গ্রহণ,
* ধূমপান,
* লালাগ্রন্থির বা শরীরের অন্যান্য রোগ,
* কিছু সুনির্দিষ্ট ঔষধের প্রভাবে মুখগহ্বর শুষ্ক হয়।
🔸 টনসিলোলিথ, ক্রনিক সাইনুসাইটিস, ব্রংকাইটিস, ফুসফুসের সংক্রমণ, গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ, অটোইমিউন রোগ, ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস, লিভার ফেইলিওর, রেনাল ফেইলিওর সহ বিভিন্ন রোগে মুখে অস্বাভাবিক গন্ধ পাওয়া যেতে পারে।

এসবের কোনও টি উপস্থিত থাকলে তা না সারিয়ে কেবল সুগন্ধিযুক্ত টুথপেস্ট, মাউথওয়াশ বা মাউথ ফ্রেশনার ব্যবহার করে কখনওই মুখের দুর্গন্ধ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া সম্ভব না। বরং এদিকে সাময়িক সমাধানের পেছনে ছুটতে ছুটতে ওদিকে মূল সমস্যা গভীরে বিস্তৃত হওয়ার ঝুঁকি থাকে‼️

কীভাবে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়া রোধ করা যায়?
👉 প্রতিদিন সকালে নাশতা খাওয়ার পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে “সঠিক পদ্ধতিতে” দাঁত ব্রাশ করা।
আমরা অনেকেই খুব তাড়াহুড়া করে দায়সারাভাবে দাঁত ব্রাশ করি। দাঁতের ভেতরের দিক (যেটি তালু বা জিহ্বার দিকে থাকে), মাড়ির কিনারা, ওপরের ও নিচের পাটির শেষ দাঁতের পেছন পর্যন্ত পরিষ্কার করা হচ্ছে কিনা, অতকিছু কয়জন খেয়াল করি?
অথচ এভাবে কিন্তু ব্রাশিংয়ের মূল উদ্দেশ্য সাধিত হয় না! দাঁত ব্রাশ করতে হবে অন্তত দুই মিনিট সময় নিয়ে এবং সে সময় উল্লেখিত দিকগুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
👉 জিহ্বা পরিষ্কার করতে হবে প্রতিদিন।
👉 দুই দাঁতের মধ্যবর্তী অংশে যেখানে টুথব্রাশ পৌঁছায় না, সেখানে জমে থাকা ডেন্টাল প্লাক ও খাদ্যকণা দূর করতে ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে হবে।
👉 খাবার খাওয়ার পর ভালভাবে মুখ কুলকুচি করতে হবে।
👉 প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা হচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
👉 ধূমপান থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
👉 ডিটারজেন্ট ফুড, যেমন শসা, গাজর, আখ, আপেল, নাশপাতি, সেলেরি, লেটুস প্রভৃতি দাঁতে আটকে থাকা খাদ্যকণা দূর করতে সহায়ক। এগুলো চিবিয়ে খেলে মুখ পরিস্কার থাকে, দুর্গন্ধ হ্রাস পায়।
👉 লবণ-হালকা গরম পানি দিয়ে মাঝেমধ্যে মুখ কুলকুচি ও গড়গড়া করা যেতে পারে।

যদি ইতোমধ্যে মুখে দুর্গন্ধের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে, তাহলে নিকটস্থ ডেন্টিষ্টকি দেখিয়ে নেন, সমস্যার কারণ নির্ণয় করে, তা দূর করার ব্যবস্থা নিন। ফিরে পান হারানো আত্মবিশ্বাস, সামাজিক পরিমণ্ডল মুখরিত হোক আপনার সাবলীল বিচরণে।