বড় ভাই বিএনপি করার অপরাধে ছোট ভাই পদোন্নতি বঞ্চিত ১৬ বছর!
লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও লক্ষ্মীপুরের জনপ্রিয় আইনজীবী হাসিবুর রহমান তার আপন ছোট ভাই সদ্য পদোন্নিত প্রাপ্ত এডিশনাল ডিআইজি জাহিদুল হাসানের পদোন্নিত বঞ্চিতের দুর্দশা তুলে ধরেছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পাঠকদের জন্য হুবহু তা তুলে ধরা হলো :-
শিক্ষক পিতার ঘরে আমাদের ছয় ভাইয়ের জন্ম। শিক্ষাণুরাগী মায়ের একাগ্রতায় এবং আব্বার প্রচেষ্টায় লেখাপড়া শেষে আমরা যার যার মতো কর্মজীবনে প্রবেশ করি। কুষ্টিয়া জেলা স্কুলে অধ্যয়নকালে জেলা স্কুল সংলগ্ন সার্কিট হাউজ গেইটে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সাথে হাত মেলানোর সুযোগ হয়। শহীদ জিয়ার ভক্ত থেকে তাঁর আদর্শের একজন কর্মী হই। আমি ছাড়া আমার পরিবারে আর কেউ রাজনীতির সাথে আজও সংশ্লিষ্ট নয়। ১৯৮৬ সালে আমি যখন লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হই তখন আমার ছোট ভাই “মোঃ জাহিদুল হাসান” পঞ্চম শ্রেণির একজন ছাত্র মাত্র। রাজনীতি সম্পর্কে তখনও তার বুঝার বয়স হয় নাই। আমার ছোট ভাই “মোঃ জাহিদুল হাসান (সাচ্চু)” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে স্নাতক শেষে ২০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশ সার্ভিসে যোগদান করে।
২০০৬ সালে তার অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে অতিঃ পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পায়। ১/১১ এর পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে। পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতির সময় এলে ভেবেছিলাম যথা নিয়মে সে পদোন্নতি পাবে। কিন্তু প্রথমবার তার আর পদোন্নতি হলো না। যখনই প্রমোশনের সময় আসে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তৎপর হয়ে খোঁজখবর নেয়।ছোট ভাইয়ের চাইতে তারা আমার রাজনৈতিক অবস্থা ও অবস্থানের খোঁজখবর নিতেই বেশি তৎপর হতো। প্রত্যেকবারই আমি বিএনপি করার কারণে আমার ভাইকে পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়।এভাবে ১০/১২ বার সুপারসিডেড হতে হতে আমরা তার পদোন্নতির আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম।অথচ তার ব্যাচমেটরা অনেকেই ডিআইজি হয়েছেন আরো আগে।ছোট বেলায় দেখতাম ছোটরা অপরাধ করলে বড়রা এসে তার পক্ষে ক্ষমা চাইতেন, অথচ জীবনে এই প্রথম দেখলাম বড় ভাইয়ের অপরাধে ছোট ভাইকে সাজা দেয়া হলো।
রংপুরের মরহুম শরফ উদ্দিন ঝন্টু জাতীয় পার্টির এমপি থাকাকালে তার ভাই ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ বিএনপির আমলে লক্ষ্মীপুরের এসপি ছিলেন। আওয়ামীলীগের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের ভাই ইমামুল হোসেন ফিরোজ বিএনপির আমলে দাপটের সাথে চাকরি করেছেন।আওয়ামী নেত্রী মতিয়া চৌধুরীর ভাই শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বিএনপির আমলে (১৯৯১-১৯৯৬) অতিঃ আইজিপি ছিলেন।অথচ আমার মতো একজন নগণ্য রাজনৈতিক কর্মীর ভাই হওয়ার অপরাধে আমাদের সবার ছোট ভাইকে দীর্ঘ ১৫ বছর পদোন্নতি বঞ্চিত রাখা হয়।
অবশেষে হাজারো ছাত্র জনতার জীবন এবং বিশ সহোস্রাধিক ছাত্র জনতার আহত হওয়ার মধ্য দিয়ে চরম কর্তৃত্ববাদী, দলবাজ এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার দুঃশাসনের অবসান হয়। আল্লাহ তা’য়ালা অধিকার হারা মানুষ গুলোর অধিকার ফিরে পাওয়ার সুযোগ করে দেন। চলমান অন্তবর্তীকালীন সরকার দুই দফায় পদোন্নতি দিয়ে আমার ভাই সহ আরো অনেককে অতিঃ ডিআইজি পদে আসীন করেন।তার পদোন্নতির মাধ্যমে আমার বিএনপি করার অপরাধের কিছুটা হলেও দায় মুক্তি হলো। আফসোস আব্বা,মা এবং সাইফুল ভাই (করোনায় মৃত) আমাদের এই সুখস্মৃতির স্বাক্ষী হতে পারলেন না। ন্যায্যতার ভিত্তিতে আমার ছোট ভাই আরো একটি পদোন্নতি পাবার হকদার। আশা করি বর্তমান সরকার বঞ্চিত অফিসারদের হৃত অধিকার এবং সম্মান যথাশীঘ্র সম্ভব ফিরিয়ে দিবেন।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আমার ভাই যেন বাংলাদেশ পুলিশের একজন গর্বিত সদস্য হিসেবে পুলিশ বাহিনীর সম্মান ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে কাজ করার সুযোগ পায়। সবার কাছে তার জন্য দোয়া চাই।পরিশেষে এটুকুই কামনা বিনা আপরাধে কেউ যেন কর্মক্ষেত্রে কোন প্রকার বঞ্চনার শিকার না হয়।
ইন্নি জাঝাই তুহুমুল ইয়াও মা বিমা স’বারু; আন্নাহুম হুমুল ফা-ইজুন”- সূরা (আল মুমিনুন-১১১)
#অর্থ: নিশ্চয় আমি(আল্লাহ) আজ তাদেরকে তাদের ধৈর্য্যের কারণে এমনভাবে পুরস্কৃত করলাম যে, তারাই হল সফলকাম।
ট্যাগ :