জিয়া উল্লাহ মামুন ,নিজস্ব প্রতিনিধি
লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন চাষ দিন দিন বিকশিত হচ্ছে। বর্তমানে জাতীয় উৎপাদনের প্রায় ৭০ ভাগ সয়াবিন এ জেলায় উৎপাদিত হচ্ছে। সর্বপ্রথম একসাথে ১৯৮২ সালে এ জেলার রামগতি উপজেলায় মাত্র ১ হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে সয়াবিনের চাষ করা হয়। এরপর ১৯৯২ সালে এমসিসি ও ডর্প নামক দুটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সয়াবিন চাষে কৃষকদেরকে ব্যাপক উদ্বুদ্ধ করে। তখন থেকেই ধীরে ধীরে অন্য রবি ফসলের সাথে সয়াবিনের আবাদ বৃদ্ধি পেতে থাকে। উৎপাদন খরচ কম, ভালো দাম ও ফলন পাওয়ায় বর্তমানে জেলার চাষীরা অন্য রবি শস্যের পরিবর্তে দিন দিন সয়াবিন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এভাবে প্রতিবছর ক্রমন্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে বিগত রবি মৌসুমে (২০১৫-১৬) এজেলায় ৫২,৭২০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদ হয় এবং প্রায় ১ লক্ষ মেঃ টনের বেশি সয়াবিন উৎপন্ন হয় যার বাজার মূল্য তিনশত কোটি টাকার বেশি।
এক সময় লক্ষ্মীপুর জেলার চরাঞ্চলে প্রচুর খেসারী, মরিচ, বাদাম, তিল, তিশি, মিষ্টি আলু, কাউন, খিরা, তরমুজ, বাঙ্গি, অড়হর, মুগ ও অন্যান্য ডালসহ বিভিন্ন রবিশস্যের চাষ করা হলেও এখন সয়াবিনের কারণে এ সকল ফসলের আবাদ দিন দিন কমে যাচ্ছে। তার পরিবর্তে এখন মাঠ জুড়ে শুধু সয়াবিন ছাড়া অন্য ফসল তেমন চোখে পড়ে না। রবি মৌসুমে মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সময়ে সয়াবিন বপন করে ৯০ থেকে ১১০ দিন সময় পর সংগ্রহ করা হয়। অন্যান্য রবি ফসলের চেয়ে সয়াবিন চাষ অনেক বেশি লাভজনক। তাছাড়া এখানে রায়পুর উপজেলায় হায়দরগঞ্জ বাজারে সয়াবিনের একটি বড় পাইকারী বাজার আছে।
দেশের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ সয়াবিন লক্ষ্মীপুরে উৎপাদন হয়। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি আবাদ, বাম্পার ফলন, টানা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় লক্ষ্মীপুর সয়াবিনের রাজধানী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে।
অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বীজ সংকট, বীজের দাম বৃদ্ধি, কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টিতে ব্যাপক ফসল নষ্ট ও কৃষকদের পুঁজির অভাবে হুমকির মুখে পড়েছে সয়াবিন উৎপাদন।
কৃষক ও কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায়, গত বছর লক্ষ্মীপুর জেলায় ৫০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে।
গত বছরের দুর্যোগে স্থানীয় কৃষকদের প্রায় ২৫২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এরপর থেকে কৃষকদের পূঁজির ওপর প্রভাব পড়ে।
১৬ নভেম্বর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত রবি মৌসুম। এ মৌসুমে লক্ষ্মীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা সয়াবিনের চাষ হওয়ার কথা।
সয়াবিন চাষ করলে ফসল ঘরে তোলার আগে বর্ষায় বৃষ্টির মুখে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এসব পরিস্থিতিতে কৃষকদের সয়াবিন চাষে আগ্রহ নেই। কৃষকরা জানান, গত বছরের ফসল নষ্ট হওয়ার কারণে অর্থসংকট রয়েছে। যে কারণে সয়াবিন চাষে কৃষদের আগ্রহ কম।
দেশের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ সয়াবিন লক্ষ্মীপুরে উৎপাদন হয়। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি আবাদ, বাম্পার ফলন, টানা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় লক্ষ্মীপুর সয়াবিনের রাজধানী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে।
লক্ষ্মীপুরে এক বছরের ব্যবধানে সয়াবিন উৎপাদন বেড়েছে ১১ হাজার টন। আবাদ বেড়েছে ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। সয়াবিনচাষীরা বলছেন, কয়েক বছরের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উৎপাদন। এতে সয়াবিন চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন অনেক চাষী। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে অনুকূল আবহাওয়ায় সয়াবিনের ভালো ফলন হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিনের লোকসান পুষিয়ে নেয়ার প্রত্যাশা করছেন তারা।
চলতি বছর কৃষি বিভাগের পরামর্শে উচ্চফলনশীল বিইউ ও বিনা জাতের সয়াবিন চাষ করে বাম্পার ফলন হয়েছে। এরই মধ্যে আবার আবাদের জন্য জমি তৈরি করছে কৃষকরা।