বাচ্চাদের দাঁত তো একসময় পড়েই যাবে। এর অত খেয়াল রাখার কী দরকার? আমাদের অনেকেরই চিন্তাধারা এমন। কিন্তু এমন ভাবা কি সঠিক? শিশুর দাঁত কি এতই গুরুত্বহীন!
🦷 দাঁতে ক্ষয় থাকলে শিশু ব্যথার ভয়ে খেতে অনীহা বোধ করে, কম পরিমাণে খায় বা ভালোভাবে না চিবিয়েই খাবার গিলে ফেলে। এতে তার হজমে সমস্যা হতে পারে। প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে তার বাড়ন্ত শরীরর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।
🦷শিশুদের মধ্যে খুবই কমন একটি সমস্যা হচ্ছে dental caries, যা প্রতিরোধযোগ্য, কিন্তু চিকিৎসার অভাবে এক সময় তীব্র যন্ত্রণাদায়ক pulpitis এ রূপ নেয়। এরপর abscess পুঁজ জমে, মাড়ি ফুলে নিদারুণ ভোগান্তি! এই ধরণের ইনফেকশন আসন্ন স্থায়ী দাঁতেরও ক্ষতি করতে পারে। এসব নিরাময়যোগ্য রোগের দ্রুত চিকিৎসা করানো উচিত। “দাঁত পড়ে গেলেই ব্যথা দূর হয়ে যাবে”- এই আশায় চিকিৎসা না করিয়ে শিশুকে দিনের পর দিন কষ্টে রাখা নিশ্চয়ই কোনও দায়িত্বশীল অভিভাবকের কাজ হতে পারে না।
🦷দুধ দাঁতের যত্নে অবহেলা করলে যেসব স্থায়ী দাঁত ৬-৭ বছরেই মুখে চলে আসে, সেগুলোও একই সাথে অবহেলার শিকার হয়। যার মাশুল দিতে হয় পরিণত বয়সে!
🦷একটি সুস্থ দুধ দাঁত নির্ধারিত বয়স পর্যন্ত চোয়ালের নির্দিষ্ট একটি স্থান দখল করে থাকে। এরপর নির্ধারিত সময়ে সেটি পড়ে গেলে তার উত্তরাধিকারী স্থায়ী দাঁত এসে ঐ বরাবর অবস্থান নেয়। এভাবেই দুধ দাঁত স্থায়ী দাঁতকে সঠিক পজিশানে উঠতে পথ দেখায়। দুধ দাঁত ক্ষয়ে গেলে বা অকালে হারালে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে, ফলে স্থায়ী দাঁত আকাবাঁকা হয়ে ওঠে।
🦷 শুধু দুধ দাঁতকে রক্ষা করাই নয়, বরং সময়মত তা পড়ছে কিনা, সেটি খেয়াল রাখাও শিশুর দাঁতের যত্নেরই অংশ। সঠিক সময়মত দুধ দাঁত না পড়লেও স্থায়ী দাঁত আকাবাঁকা হয়ে উঠতে পারে।
🦷আঙুল চোষা, ঠোঁট কামড়ানো, দাঁত দিয়ে নখ কাটা, মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া এসব অভ্যাস শিশুর দাঁত, ঠোঁট, চোয়াল ও চেহারার সুন্দর স্বাভাবিক গঠনকে ব্যাহত করে। তাই এসব অভ্যাস গড়ে উঠতে না দেওয়ার ব্যাপারেও অভিভাবকের সক্রিয় ভূমিকা জরুরী।
🦷অনেক সময় শিশুর এক পাশে দাঁত নষ্ট থাকায় শুধু অন্য পাশ দিয়ে খাবার চিবানোয় অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। ফলে তার চোয়াল ও চেহারার গড়নে এর প্রভাব পড়ে।
🦷রোগগ্রস্ত, ভাঙা, দুর্বল দাঁতের কারণে শিশু সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হতে পারে। এসব নিয়ে হয়রানি করা অনুচিত, সেটা নিয়ে আলাদা আলোচনা চলতে পারে। তবে সুস্থ, সুন্দর দুই পাটি দাঁত তাই শিশুর নির্বিঘ্ন জীবনযাপন ও আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠার জন্যেও দরকারী। কল্পনা করুন, কোনও সামাজিক সমাগমে মিষ্টিমুখ করতে গিয়ে প্রচণ্ডভাবে দাঁত শিরশির বা ব্যথা করে উঠলো। ব্যথায় সারা দিনটাই মাটি! এমনটি কখনও কোনওভাবেই কাম্য নয়।
🦷শুদ্ধ, সঠিক উচ্চারণে কথা বলার ক্ষেত্রেও দাঁতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই ছোট বয়স থেকেই সঠিক উচ্চারণ চর্চার জন্যে মুখে সব দাঁত সুস্থভাবে উপস্থিত থাকা খুব দরকার।
মোট কথা শিশুর দুধ দাঁত ক্ষণস্থায়ী হলেও তা যথেষ্ট গুরুত্ববহ। বরং দুধ দাঁতের বহিরাবরণ (enamel) তুলনামূলক পাতলা, ছোট বাচ্চারা মিষ্টি খাবার খেতে বেশি পছন্দ করে এবং তারা নিজেনিজে দাঁতের সঠিক যত্নও নিতে পারে না- এসব কারণে প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুদের দাঁতের দিকে কিছুটা বেশিই নজর রাখতে হয়।
এছাড়াও শিশুর দাঁত না উঠলে সময়মতো কি করতে হবে তা ছবিতে দেয়া আছে।
পরামর্শক্রমে
ডেন্টিষ্ট ওয়াহিদুর রহমান মুরাদ
ম্যাক্স ডেন্টিষ্ট পয়েন্ট, রায়পুর
[ডেন্টিষ্ট মুরাদ/caption]