ঢাকা ১০:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দাদন-এনজিও কিস্তিতে জেলেদের ইলিশ নিষেধাজ্ঞায় দুর্দিন চলছে লক্ষ্মীপুরের জেলে পাড়ায়।

লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় এলাকায় মেঘনা নদীর গভীরতা কমে গেছে। জন্ম নিয়েছে বহু চর ও ডুবোচর। এতে কমে গেছে গভীর জলের মাছ ইলিশ। নিষেধাজ্ঞায় অসাধু জেলেদের তাছাড়া ধরা ও বিক্রির আসক্তি থাকলেও এখনো পর্যন্ত তেমন কোন কার্যক্রম নদীতে চোখে পড়েনি। দুই। – চারটি নৌকা ভিন্ন মাছ ধরছে বলে জানান অলস বসে থাকা জেলেরা।

দুলাল বেপারি নামে এক জেলে বলেন,নিষেধাজ্ঞার পূর্বে যেমন আশা করেছি, তার ধারে-কাছে যাওয়ার চিন্তাও করতে পারিনি। দুই দিনের খরচ ১০ হাজার টাকা। ইলিশ পাইছি ৩ হালি। বিক্রি করেছি আড়াই হাজার টাকা। স্বাভাবিকভাবে ইলিশ থাকলে কম করে নিচে হলেও ২০ হাজার টাকা রোজগার হইতো। একদিকে সমিতির ঋণ অন্যদিকে সংসার চালানো,মহাজনের দাদন সবমিলিয়ে আমরা অসহায় ।

তিনি বলেন, অভিযানের সময় (নিষেধাজ্ঞাকালীন) নদীতে নামি নাই। আমার জেলে কার্ড আছে। অভিযানের সময় চাল পাইছি। কিন্তু গতবার ৪০ কেজি চাল দেওয়ার কথা থাকলেও চাল পাইছি ৩০ কেজি। ২ মাসও আমাদের সংসার চলে নাই।দ্রব্যমূল্যের বাজারে কোন তরকারি ১০০ টাকার নিচে নাই ।সরকার চাইল দিছে ,তেল – তরকারি কই পামু?

ভরা মৌসুমেও নদীতে মিলেনি ইলিশের দেখা। বলা হয়ে থাকে, ইলিশের বাড়ি রায়পুর, রামগতি ও চাঁদপুর। কিন্তু মেঘনার এপার-ওপার ঘুরে ইলিশের খোঁজ মেলেনি নিষেধাজ্ঞার পূর্বেও।

ইলিশের আকাল চিত্রের দেখা মিলেছিলো সদ্য শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞার পূর্বেও আলতাফ মাস্টার ও সাজু মোল্লার মাছঘাটে গিয়ে। আড়ত ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলছেন, এসময় মেঘনায় টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের কারণে নদীতে ইলিশ নেই। বরিশালের দিকে মোটামুটি ইলিশের দেখা মিলছে।

মেঘনায় ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরার সঙ্গে মেঘনাপারের বহু মানুষের জীবন-জীবিকা চলে। মেঘনার জেলে ও মেঘনাপারের মৎস্য ব্যবসায়ী, বরফ কারখানার মালিক-শ্রমিক, স্থানীয় দোকানপাটের ব্যবসায়ীদের জীবিকা কেবল ওই মেঘনা নদীর ওপরই নির্ভর।

হাজিমারা এলাকার সাহাবুদ্দিন সর্দার। বয়স ৩৫ বছর। স্ত্রী-এক মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার সংসার। মেঘনাপারেই চায়ের দোকান। এতেই জীবন বাঁচে। তিনি বলেন, নদীর জেলেদের আয় থাকলে তাদের আয়। এ জন্য তারাও বলতে গেলে নদীতে মাছ পাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। তা ছাড়া জেলেদের বাকিতে সদাই (পণ্য) দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাও সম্ভব নয়।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তফা বেপারী বলেন, গত একমাস নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা না পড়ায় সবার মাঝে হতাশার কালো ছায়া নেমে এসেছে। তাছাড়া অভিযান চলাকালীন জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত কার্ডের সংখ্যা রায়পুর অঞ্চলে কম রাখা হয়। যার জন্য এখানের বহু জেলেই অভিযানের সময় মানবেতর জীবন পার করে থাকেন। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, নদীতে জীবিকানির্ভর মানুষের জন্য কোনো বরাদ্দও নেই। নদীতে গিয়ে ইলিশ না পেলে সংসার চলে না। অসহায় অবস্থায় থাকে। মাছ ধরতে না পেরে অন্য পেশায় মনোযোগী হচ্ছে জেলেরা।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নদী এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। ওই এলাকায় ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল ও অক্টোবর মাস জুড়ে পর্যন্ত সব ধরনের জাল ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছেল সরকার। কাঙ্ক্ষিত ইলিশের আশায় কোমর বেঁধে নদীতে নামে জেলেরা কাঙ্খিত মাছ পায়নি। অনেকে বলছেন, গত কয়েকবছর ব্যাপকহারে জাটকা নিধন হওয়ায় ইলিশ ধরা পড়ছে না। যৎসামান্য ইলিশ ধরা পড়লেও দাম অনেক হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা কিনতে পারেনাই।

মেঘনাপাড়ের শত শত বাসিন্দা, জেলে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

রামগতি ঘাটসংলগ্ন দুটি এবং চর আলেকজান্ডার ঘাটের দক্ষিণে তিনটিসহ লক্ষ্মীপুর জেলার ৭৬ কিলোমিটার মেঘনা এলাকায় গত ৫-৭ বছরে ১০টি চর দৃশ্যমান হয়েছে। অন্যদিকে রামগতি থেকে নোয়াখালীর হাতিয়া পর্যন্ত রয়েছে অনেক চর।

গত ৫-৭ বছরে চাঁদপুর সীমানা থেকে নোয়াখালীর হাতিয়া পর্যন্ত মেঘনা নদীর বিশাল এলাকায় অসংখ্য চর ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। এ চরগুলো ছাড়াও রামগতির টাংকি বাজার পর্যন্ত অন্তত ৬টি বড় ডুবোচর রয়েছে। এমন তথ্য দিলেন জেলে জব্বার মাঝি।

স্থানীয় বাসিন্দা সুজিত দেবনাথ জানান, নদীতে চরের কারণে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। চরগুলো বর্ষায় দেখা না গেলেও শীত মৌসুমে ভাটার সময় দেখা যায়। পুরো মেঘনা নদীর সীমানায় এখন অসংখ্য চর।

মৌসুমে ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলে, আড়তদার, পাইকার, দাদন ব্যবসায়ী, মৎস্য শ্রমিক ও জেলে পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে বিষাদের ছাঁয়া- বলছিলেন উপজেলা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার মীর হাসান মাহমুদ।

বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, মেঘনা নদীতে ইলিশ কমে গেছে প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ। চলতি মৌসুমে মেঘনায় ইলিশের দেখা পায়নি জেলেরা। দু’চারটি করে ইলিশ পেলেও তাতে নৌকার জ্বালানি খরচও ওঠে না।

জেলে রহিম মাঝি জানান, বর্তমানে বর্ষা মৌসুমেও মেঘনা নদীতে ইলিশ পাওয়া যায়নি। ইলিশের জন্য জেলেদের ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরে সাগরে যেতে হচ্ছে। সাগর থেকে ইলিশ এনে জেলেরা নদীর ঘাটে বিক্রি করছেন।এবারের বর্ষায় এখন আর নদীতে প্রচুর ইলিশ আসে নাই।

সেন্টার খালের জয়নাল মাঝি জানান, এ বর্ষায় ভালোভাবে বৃষ্টিও হচ্ছে না। বৃষ্টিতে নদীতে পানি বাড়লে চলে আসত ইলিশ। এবার নিজেরাও ঠিকমতো খেতে পারেননি ইলিশ। এমন অভাব আর চোখে দেখেননি বলে জানান তিনি।

চর আলেকজান্ডার ঘাটের নৌকার মালিক শাহ আলম জানান, চর ও অনাবৃষ্টির কারণে ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। নদীতে যত বেশি পানি থাকবে তত বেশি ইলিশ আসবে। এ কারণেই ঝড়-বৃষ্টিতে নদীতে বেশি ইলিশ পাওয়া যায়।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, রামগতিতে নিবন্ধিত ২০ হাজার জেলে। জেলার অধিংকাংশ জেলে রামগতির উপকূলের। কিন্তু দুই বছর ধরে নদীতে আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলেদের জীবিকা নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে। ইলিশ গভীর জলের মাছ, তাই নদীতে গভীরতা না থাকলে ইলিশও গতিবিধি পরিবর্তন করে। ফলে আশানুরূপ ইলিশ আসতে পারছে না।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, জলবায়ু পরিবর্তনে নদীতে চর পড়ে গেছে এবং পানি কমে গেছে। তাই ইলিশ মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। নদীতে সৃষ্ট বহু চর ও নদীর নাব্য হ্রাস পাওয়ায় সমুদ্র থেকে ইলিশ মিঠাপানিতে আসতে বাধা পেয়ে গতিপথ পরিবর্তন করছে। সামনে এ অবস্থা চলতে থাকলে মেঘনায় ইলিশ আরও কমে যাবে। তবে নদীতে পানি বাড়লে ইলিশের পরিমাণও বাড়বে।

মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট নদীকেন্দ্র চাঁদপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, মেঘনায় ইলিশ না আসার অনেক কারণের মধ্যে চর বা ডুবোচর একটি। এ ছাড়া ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা ও জাটকা নিধন বন্ধ হলে উৎপাদনও বাড়বে।

উল্লেখ্য, লক্ষ্মীপুরে প্রায় ৫০ হাজার ২৫২ জেলে পরিবার রয়েছে। তার মধ্যে লক্ষ্মীপুর সদরে- ৭ হাজার ৫১৮, রায়পুরে ৭ হাজার ৫৫০, রামগতিতে ২০ হাজার ৩৬০ ও কমলনগর উপজেলায় ১৪ হাজার ১০০ কার্ডধারী জেলে পরিবার রয়েছে।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

লক্ষ্মীপুরের উত্তরচরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির বিলুপ্ত  

দাদন-এনজিও কিস্তিতে জেলেদের ইলিশ নিষেধাজ্ঞায় দুর্দিন চলছে লক্ষ্মীপুরের জেলে পাড়ায়।

আপডেট : ০১:২৭:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৩

লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় এলাকায় মেঘনা নদীর গভীরতা কমে গেছে। জন্ম নিয়েছে বহু চর ও ডুবোচর। এতে কমে গেছে গভীর জলের মাছ ইলিশ। নিষেধাজ্ঞায় অসাধু জেলেদের তাছাড়া ধরা ও বিক্রির আসক্তি থাকলেও এখনো পর্যন্ত তেমন কোন কার্যক্রম নদীতে চোখে পড়েনি। দুই। – চারটি নৌকা ভিন্ন মাছ ধরছে বলে জানান অলস বসে থাকা জেলেরা।

দুলাল বেপারি নামে এক জেলে বলেন,নিষেধাজ্ঞার পূর্বে যেমন আশা করেছি, তার ধারে-কাছে যাওয়ার চিন্তাও করতে পারিনি। দুই দিনের খরচ ১০ হাজার টাকা। ইলিশ পাইছি ৩ হালি। বিক্রি করেছি আড়াই হাজার টাকা। স্বাভাবিকভাবে ইলিশ থাকলে কম করে নিচে হলেও ২০ হাজার টাকা রোজগার হইতো। একদিকে সমিতির ঋণ অন্যদিকে সংসার চালানো,মহাজনের দাদন সবমিলিয়ে আমরা অসহায় ।

তিনি বলেন, অভিযানের সময় (নিষেধাজ্ঞাকালীন) নদীতে নামি নাই। আমার জেলে কার্ড আছে। অভিযানের সময় চাল পাইছি। কিন্তু গতবার ৪০ কেজি চাল দেওয়ার কথা থাকলেও চাল পাইছি ৩০ কেজি। ২ মাসও আমাদের সংসার চলে নাই।দ্রব্যমূল্যের বাজারে কোন তরকারি ১০০ টাকার নিচে নাই ।সরকার চাইল দিছে ,তেল – তরকারি কই পামু?

ভরা মৌসুমেও নদীতে মিলেনি ইলিশের দেখা। বলা হয়ে থাকে, ইলিশের বাড়ি রায়পুর, রামগতি ও চাঁদপুর। কিন্তু মেঘনার এপার-ওপার ঘুরে ইলিশের খোঁজ মেলেনি নিষেধাজ্ঞার পূর্বেও।

ইলিশের আকাল চিত্রের দেখা মিলেছিলো সদ্য শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞার পূর্বেও আলতাফ মাস্টার ও সাজু মোল্লার মাছঘাটে গিয়ে। আড়ত ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলছেন, এসময় মেঘনায় টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের কারণে নদীতে ইলিশ নেই। বরিশালের দিকে মোটামুটি ইলিশের দেখা মিলছে।

মেঘনায় ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরার সঙ্গে মেঘনাপারের বহু মানুষের জীবন-জীবিকা চলে। মেঘনার জেলে ও মেঘনাপারের মৎস্য ব্যবসায়ী, বরফ কারখানার মালিক-শ্রমিক, স্থানীয় দোকানপাটের ব্যবসায়ীদের জীবিকা কেবল ওই মেঘনা নদীর ওপরই নির্ভর।

হাজিমারা এলাকার সাহাবুদ্দিন সর্দার। বয়স ৩৫ বছর। স্ত্রী-এক মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার সংসার। মেঘনাপারেই চায়ের দোকান। এতেই জীবন বাঁচে। তিনি বলেন, নদীর জেলেদের আয় থাকলে তাদের আয়। এ জন্য তারাও বলতে গেলে নদীতে মাছ পাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। তা ছাড়া জেলেদের বাকিতে সদাই (পণ্য) দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাও সম্ভব নয়।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তফা বেপারী বলেন, গত একমাস নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা না পড়ায় সবার মাঝে হতাশার কালো ছায়া নেমে এসেছে। তাছাড়া অভিযান চলাকালীন জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত কার্ডের সংখ্যা রায়পুর অঞ্চলে কম রাখা হয়। যার জন্য এখানের বহু জেলেই অভিযানের সময় মানবেতর জীবন পার করে থাকেন। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, নদীতে জীবিকানির্ভর মানুষের জন্য কোনো বরাদ্দও নেই। নদীতে গিয়ে ইলিশ না পেলে সংসার চলে না। অসহায় অবস্থায় থাকে। মাছ ধরতে না পেরে অন্য পেশায় মনোযোগী হচ্ছে জেলেরা।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নদী এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। ওই এলাকায় ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল ও অক্টোবর মাস জুড়ে পর্যন্ত সব ধরনের জাল ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছেল সরকার। কাঙ্ক্ষিত ইলিশের আশায় কোমর বেঁধে নদীতে নামে জেলেরা কাঙ্খিত মাছ পায়নি। অনেকে বলছেন, গত কয়েকবছর ব্যাপকহারে জাটকা নিধন হওয়ায় ইলিশ ধরা পড়ছে না। যৎসামান্য ইলিশ ধরা পড়লেও দাম অনেক হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা কিনতে পারেনাই।

মেঘনাপাড়ের শত শত বাসিন্দা, জেলে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

রামগতি ঘাটসংলগ্ন দুটি এবং চর আলেকজান্ডার ঘাটের দক্ষিণে তিনটিসহ লক্ষ্মীপুর জেলার ৭৬ কিলোমিটার মেঘনা এলাকায় গত ৫-৭ বছরে ১০টি চর দৃশ্যমান হয়েছে। অন্যদিকে রামগতি থেকে নোয়াখালীর হাতিয়া পর্যন্ত রয়েছে অনেক চর।

গত ৫-৭ বছরে চাঁদপুর সীমানা থেকে নোয়াখালীর হাতিয়া পর্যন্ত মেঘনা নদীর বিশাল এলাকায় অসংখ্য চর ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। এ চরগুলো ছাড়াও রামগতির টাংকি বাজার পর্যন্ত অন্তত ৬টি বড় ডুবোচর রয়েছে। এমন তথ্য দিলেন জেলে জব্বার মাঝি।

স্থানীয় বাসিন্দা সুজিত দেবনাথ জানান, নদীতে চরের কারণে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। চরগুলো বর্ষায় দেখা না গেলেও শীত মৌসুমে ভাটার সময় দেখা যায়। পুরো মেঘনা নদীর সীমানায় এখন অসংখ্য চর।

মৌসুমে ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলে, আড়তদার, পাইকার, দাদন ব্যবসায়ী, মৎস্য শ্রমিক ও জেলে পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে বিষাদের ছাঁয়া- বলছিলেন উপজেলা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার মীর হাসান মাহমুদ।

বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, মেঘনা নদীতে ইলিশ কমে গেছে প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ। চলতি মৌসুমে মেঘনায় ইলিশের দেখা পায়নি জেলেরা। দু’চারটি করে ইলিশ পেলেও তাতে নৌকার জ্বালানি খরচও ওঠে না।

জেলে রহিম মাঝি জানান, বর্তমানে বর্ষা মৌসুমেও মেঘনা নদীতে ইলিশ পাওয়া যায়নি। ইলিশের জন্য জেলেদের ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরে সাগরে যেতে হচ্ছে। সাগর থেকে ইলিশ এনে জেলেরা নদীর ঘাটে বিক্রি করছেন।এবারের বর্ষায় এখন আর নদীতে প্রচুর ইলিশ আসে নাই।

সেন্টার খালের জয়নাল মাঝি জানান, এ বর্ষায় ভালোভাবে বৃষ্টিও হচ্ছে না। বৃষ্টিতে নদীতে পানি বাড়লে চলে আসত ইলিশ। এবার নিজেরাও ঠিকমতো খেতে পারেননি ইলিশ। এমন অভাব আর চোখে দেখেননি বলে জানান তিনি।

চর আলেকজান্ডার ঘাটের নৌকার মালিক শাহ আলম জানান, চর ও অনাবৃষ্টির কারণে ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। নদীতে যত বেশি পানি থাকবে তত বেশি ইলিশ আসবে। এ কারণেই ঝড়-বৃষ্টিতে নদীতে বেশি ইলিশ পাওয়া যায়।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, রামগতিতে নিবন্ধিত ২০ হাজার জেলে। জেলার অধিংকাংশ জেলে রামগতির উপকূলের। কিন্তু দুই বছর ধরে নদীতে আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলেদের জীবিকা নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে। ইলিশ গভীর জলের মাছ, তাই নদীতে গভীরতা না থাকলে ইলিশও গতিবিধি পরিবর্তন করে। ফলে আশানুরূপ ইলিশ আসতে পারছে না।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, জলবায়ু পরিবর্তনে নদীতে চর পড়ে গেছে এবং পানি কমে গেছে। তাই ইলিশ মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। নদীতে সৃষ্ট বহু চর ও নদীর নাব্য হ্রাস পাওয়ায় সমুদ্র থেকে ইলিশ মিঠাপানিতে আসতে বাধা পেয়ে গতিপথ পরিবর্তন করছে। সামনে এ অবস্থা চলতে থাকলে মেঘনায় ইলিশ আরও কমে যাবে। তবে নদীতে পানি বাড়লে ইলিশের পরিমাণও বাড়বে।

মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট নদীকেন্দ্র চাঁদপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, মেঘনায় ইলিশ না আসার অনেক কারণের মধ্যে চর বা ডুবোচর একটি। এ ছাড়া ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা ও জাটকা নিধন বন্ধ হলে উৎপাদনও বাড়বে।

উল্লেখ্য, লক্ষ্মীপুরে প্রায় ৫০ হাজার ২৫২ জেলে পরিবার রয়েছে। তার মধ্যে লক্ষ্মীপুর সদরে- ৭ হাজার ৫১৮, রায়পুরে ৭ হাজার ৫৫০, রামগতিতে ২০ হাজার ৩৬০ ও কমলনগর উপজেলায় ১৪ হাজার ১০০ কার্ডধারী জেলে পরিবার রয়েছে।