লক্ষ্মীপুর জেলাতে বাজারগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মেঘনা নদীর নামে ইলিশ। এই নিয়ে হতাশ ক্রেতারা। ক্রেতারা দাবি করেন, ভরা মৌসুমেও মেঘনায় তারা আশানুযায়ী মাছ পাচ্ছেন না।উল্টো সাগরের ইলিশ, নদীর ইলিশের সাথে মিশিয়ে দাম বেশি হাঁকিয়ে বিক্রি করছে।এতে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা।
লক্ষ্মীপুর শহর ,রায়পুর পৌর এলাকার মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, জাটকা ইলিশের দাম ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি। আধা কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশের দাম ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের ১৩০০/১৪০০ টাকা কেজি ধরে। আর এক কেজি ওজনের মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ১৫/১৮শ টাকা কেজি দরে ।
এই ছাড়া জেলার দালাল বাজার ভবানীগঞ্জ, তোরাবগঞ্জ, মান্দারী, জকসিন বাজারসহ প্রায় সব বাজারেই চড়া দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।
দক্ষিণ তেমুহনীতে মাছ কিনতে আসা রানা বলেন, ‘আগের বছরগুলোর তুলনায় এই বছর ইলিশের দাম অনেক বেশি। বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম হাঁকাচ্ছেন। আমরা ইলিশের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করে তা সব শ্রেণির মানুষের নাগালের মধ্যে আনার দাবি জানাচ্ছি।’ ‘বাহার উদ্দিন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘মাছের যে দাম, তাতে আমাদের পক্ষে কেনা সম্ভব হচ্ছে না।’
চরভৈরবী আড়ৎ থেকে মাছ বিক্রেতা ছিডু চৌকদারার দাবি, ঘাটে ইলিশের পরিমাণ কম। তাই বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এই ছাড়া দেশি মাছেরও উপস্থিতি কম। তাই ইলিশসহ সব মাছেরই দাম একটু বেশি।
সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের ট্রলার মালিক মো. দুলাল বলেন, ‘মেঘনা নদীতে মাছ কম। তাই জেলেরা গভীর নদী এবং সাগরে গিয়ে মাছ ধরছেন। ভরা মৌসুম হলেও মেঘণা নদীতে সেখানেও আশা অনুযায়ী মাছ উঠছে না জেলেদের জালে।
রামগতির মেঘনা নদীতে ইলিশ কমে যাওয়ার কারণে উপকূলীয় এই এলাকায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ভরা মৌসুমে ইলিশ ধরা না পড়ায় মৎস্য শ্রমিক, আড়তদার, পাইকার, দাদন ব্যবসায়ী ও জেলে পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে বিষাদের ছাপ।
জানা গেছে, রামগতিতে নিবন্ধিত জেলে ২০ হাজার। চলতি অর্থবছরে নদী থেকে ইলিশ আহরণ করা হয়েছে ৫ হাজার ১৬৫ টন, যা বিগত বছরের তুলনায় অনেক কম।
নৌকার মালিক লিটন বেপারি বলেন, মেঘনা নদীতে ইলিশ আশানুরূপ না পাওয়ায় জেলেরা ৬০-৬৫ কিলোমিটার দূরে সাগরে গিয়ে মাছ শিকার করছেন। সাগর থেকে ইলিশ এনে চাহিদা মেটাচ্ছেন জেলেরা। ইলিশের এমন অভাবে ঋণগ্রস্ত হচ্ছে তারা।
রামগতি সীমানায় ছোট-বড় ৬টি ডুবোচর রয়েছে বলে জানিয়েছেন রইজল মাঝি। তিনি বলেন, ওই ডুবোচরগুলো বর্ষা মৌসুমে দেখা না গেলেও শীতে দেখা যায়। এসব ডুবোচর ও সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে মেঘনায় ইলিশ আসছে না।
মেঘনা পাড়ের বাসিন্দা মানজুরুল ইসলাম জানান, কিছু অসাধু জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা নিধন ও চিংড়ি রেণু শিকার করায় এমন আকাল চলছে।
রামগতি বাজারটি নদীর ওপর নির্ভরশীল বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ী মো. আরজু আমিন। তিনি বলেন, নদীতে মাছ না থাকায় আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ যাচ্ছে।
জেলে ইন্দ্রিস মিয়া বলেন, ভরা মৌসুমে ইলিশ ধরা না পড়ায় আমাদের পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে অভাব। দাদন আর এনজিওর ঋণই এখন আমাদের একমাত্র ভরসা।‘একদিকে মাছ কম, অন্যদিকে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে মাছ ধরতে জেলেদের খরচ বেশি পড়ছে। তাই ঘাটে একটু বেশি দামে মাছ বিক্রি করতে হচ্ছে।’
রায়পুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন,নদীতে ডুবোচর থাকার কারনে এবং জেলেরা সাগরেই অতি লোভের কারনে বিপুল পরিমাণ ইলিশ আহরণ করছে। এতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে নদী গুলোতে। নদীর জেলেদের তুলনায় এখন সাগরে ইলিশ আহরণ জেলেদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ইলিশ উৎপাদন এবং সরবারহ কমে গিয়েছে।
এই বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘গভীর নদীতে থাকা জেলেরা কিছু মাছ ধরতে পারলেও কমলনগর ও সদরের অংশে তেমন মাছ ধরা পড়ছে না। নদীর গভীরতা দিন দিন কমে যাওয়ায় এমন হচ্ছে।‘ইলিশ গভীর পানির মাছ হওয়ায় অল্প পানিতে আসতে পারছে না। এই ছাড়া নদীর মুখে কিছু অসাধু জেলে টং জাল পেতে রাখাতেও মাছ মেঘনায় ঢুকতে বাধা পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, নদীতে সৃষ্ট বহু ডুবোচরের কারণে ইলিশ মিঠাপানিতে আসতে বাধা পেয়ে গতিপথ পরিবর্তন করছে। ফলে আশানুরূপ ইলিশ আসছে না। নদীতে ইলিশ এলে এ অঞ্চলের অভাবও দূর হয়ে যাবে।