ঢাকা ০৭:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বপদে বহাল, অব্যাহতি প্রত্যাহার জাপার সাবেক এমপি নোমানের।

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :

  লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নোমানকে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পদে পুনর্বহাল করা হয়েছে। প্রায় ৩ বছর পর মঙ্গলবার তার অব্যাহতি আদেশপত্র প্রত্যাহার করেন দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি।

বিকাল ৪টায় দলের যুগ্ম-দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান জিএম কাদের গঠনতন্ত্রের ক্ষমতা বলে নোমানের অব্যাহতি আদেশপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখন তাকে স্বপদে পুনর্বহাল করা হয়েছে।

এর আগে ২০২০ সালের ২৮ জুন দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) সাবেক এমপি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মোহাম্মদ নোমানকে সকল পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তখন তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের তখন অব্যাহতিপত্রে সই করেন।

মোহাম্মাদ নোমান লক্ষ্মীপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন। ২৭৫ নং (লক্ষ্মীপুর-২) আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য।তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজন “সংসদ সদস্য” হিসাবে নির্বাচিত হন।

অব্যাহতি প্রত্যাহার করে নেয়ার পরে মোহাম্মদ নোমান মুঠো ফোনে জানান, পাপুল চারপাশে টাকা ছড়িয়ে প্রথমে নেতা – কর্মীদের বিভ্রান্ত করেছিলো। আর স্বাভাবিক ভাবেই সে ২৫/৩০ টা মোটর সাইকেল দান ও অনুদানের পরে স্বতন্ত্র নির্বাচনে প্রার্থী হয়। বিভিন্ন ভাবে আমার নির্বাচনে বাধাগ্রস্থ করা হয়। নির্বাচনে সরে দাঁড়ানো তার থেকে অর্থ প্রাপ্তির বিষটি স্রেফ অপপ্রচার। দুদকের তালিকায়ও আমার নাম নেই ও ছিলো না। দলীয় ভাবে তদন্ত করে আমার কোন অনিয়ম পায়নি।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে শহিদ ইসলাম পাপুলের আকস্মিক প্রার্থী হওয়া এবং নির্বাচিত হওয়া ছিল পিলে চমকানোর মতো। যিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও নির্বাচনের আগেই অনেকটা জয় নিশ্চিত করে ফেলেন। গত নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর- ২ আসনটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মহাজোটের শরিক এরশাদের জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ছেড়ে দেয়। জাপার মনোনয়ন পান আগের বারের সাংসদ মোহাম্মদ নোমান। কিন্তু মনোনয়ন পাওয়ার পর নোমান নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান।

তখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন নিয়ে দর- কষাকষির একটা পর্যায়ে এইচ এম এরশাদ দলের মহাসচিব পদ থেকে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে দায়িত্ব নেন মসিউর রহমানকে (রাঙ্গা)। দায়িত্ব ছাড়ার আগে রুহুল আমিন হাওলাদার লক্ষ্মীপুর-২ আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে নোমানের মনোনয়ন নিশ্চিত করেছিলেন। এরপর এমন কী ঘটেছিল যে দলীয় প্রার্থী নোমানকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে হয়েছিল? তবে জাপার উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, মহাসচিব পদে পরিবর্তনের পর আসন সমঝোতা নিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বেইলি রোডের বাসায় একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জাপার প্রতিনিধির কাছে লক্ষ্মীপুর- ২ আসন শহিদ ইসলামকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন এইচ টি ইমাম। এ কারণে জাপা আসনটি ধরে রাখেনি আওয়ামী লীগও প্রার্থী দেয়নি। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি অর্থের বিনিময়ে পাপুলের পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেন একটি সভায় জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতির সাথে হট্রগোল বাধে রায়পুর উপজেলা আওয়ামীলীগের কজন নেতৃবৃন্দের সাথে। তবে মোহাম্মদ নোমান এক চিঠিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ থেকে সরে দাড়ানো প্রসঙ্গে জানান, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি – সেক্রেটারী সমন্বয় করলেও ভিতরে ভিতরে জেলার অনেক নেতারা পাপুলের সাথে আঁতাত করে সন্দেহ তৈরি করে। ফলশ্রুতিতে আওয়ামীলীগ দলীয় নেতা – কর্মীদের বহিঃষ্কার চলছিলো। এছাড়াও নিজ দল জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক অস্থিরতা, লক্ষ্য নির্ধারণে অনিশ্চয়তা, কেন্দ্রিয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয় ও সিদ্ধান্তহীনতা এবং মহাজোটের স্বতন্ত্র বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করে নির্বাচনে বহাল থাকা, মহাজোটের নেতা কর্মীদের মধ্যে সংশয়, সন্দেহ, অবিশ্বাস ও বিভ্রান্তি তৈরী হওয়া এবং লোভী, সুযোগ সন্ধানীদের অবৈধ গোপন তৎপরতা ও আঁতাত করা, কেন্দ্রীয় সহযোগীতা না পাওয়া ইত্যাদি কারনে আমি নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছি।

আমি আমার নির্বাচনী এলাকার সর্বস্তরের জনগন, যারা আমাকে অকুষ্ঠ সহযোগীতা দিয়ে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের প্রতি সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি এবং বাস্তব চিত্র অনুধাবন করে আমার সিদ্ধান্তকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আকুল আবেদন জানাচ্ছি । এমন একটি চিঠি কেন্দ্রে পাঠান। সেই চিঠিতেও পাপুলকে সমর্থনের কোন লেখা ছিলো না।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

লক্ষ্মীপুরের উত্তরচরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির বিলুপ্ত  

স্বপদে বহাল, অব্যাহতি প্রত্যাহার জাপার সাবেক এমপি নোমানের।

আপডেট : ০৪:৫৩:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ মে ২০২৩
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :

  লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নোমানকে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পদে পুনর্বহাল করা হয়েছে। প্রায় ৩ বছর পর মঙ্গলবার তার অব্যাহতি আদেশপত্র প্রত্যাহার করেন দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি।

বিকাল ৪টায় দলের যুগ্ম-দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান জিএম কাদের গঠনতন্ত্রের ক্ষমতা বলে নোমানের অব্যাহতি আদেশপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখন তাকে স্বপদে পুনর্বহাল করা হয়েছে।

এর আগে ২০২০ সালের ২৮ জুন দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) সাবেক এমপি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মোহাম্মদ নোমানকে সকল পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তখন তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের তখন অব্যাহতিপত্রে সই করেন।

মোহাম্মাদ নোমান লক্ষ্মীপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন। ২৭৫ নং (লক্ষ্মীপুর-২) আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য।তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজন “সংসদ সদস্য” হিসাবে নির্বাচিত হন।

অব্যাহতি প্রত্যাহার করে নেয়ার পরে মোহাম্মদ নোমান মুঠো ফোনে জানান, পাপুল চারপাশে টাকা ছড়িয়ে প্রথমে নেতা – কর্মীদের বিভ্রান্ত করেছিলো। আর স্বাভাবিক ভাবেই সে ২৫/৩০ টা মোটর সাইকেল দান ও অনুদানের পরে স্বতন্ত্র নির্বাচনে প্রার্থী হয়। বিভিন্ন ভাবে আমার নির্বাচনে বাধাগ্রস্থ করা হয়। নির্বাচনে সরে দাঁড়ানো তার থেকে অর্থ প্রাপ্তির বিষটি স্রেফ অপপ্রচার। দুদকের তালিকায়ও আমার নাম নেই ও ছিলো না। দলীয় ভাবে তদন্ত করে আমার কোন অনিয়ম পায়নি।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে শহিদ ইসলাম পাপুলের আকস্মিক প্রার্থী হওয়া এবং নির্বাচিত হওয়া ছিল পিলে চমকানোর মতো। যিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও নির্বাচনের আগেই অনেকটা জয় নিশ্চিত করে ফেলেন। গত নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর- ২ আসনটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মহাজোটের শরিক এরশাদের জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ছেড়ে দেয়। জাপার মনোনয়ন পান আগের বারের সাংসদ মোহাম্মদ নোমান। কিন্তু মনোনয়ন পাওয়ার পর নোমান নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান।

তখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন নিয়ে দর- কষাকষির একটা পর্যায়ে এইচ এম এরশাদ দলের মহাসচিব পদ থেকে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে দায়িত্ব নেন মসিউর রহমানকে (রাঙ্গা)। দায়িত্ব ছাড়ার আগে রুহুল আমিন হাওলাদার লক্ষ্মীপুর-২ আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে নোমানের মনোনয়ন নিশ্চিত করেছিলেন। এরপর এমন কী ঘটেছিল যে দলীয় প্রার্থী নোমানকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে হয়েছিল? তবে জাপার উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, মহাসচিব পদে পরিবর্তনের পর আসন সমঝোতা নিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বেইলি রোডের বাসায় একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জাপার প্রতিনিধির কাছে লক্ষ্মীপুর- ২ আসন শহিদ ইসলামকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন এইচ টি ইমাম। এ কারণে জাপা আসনটি ধরে রাখেনি আওয়ামী লীগও প্রার্থী দেয়নি। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি অর্থের বিনিময়ে পাপুলের পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেন একটি সভায় জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতির সাথে হট্রগোল বাধে রায়পুর উপজেলা আওয়ামীলীগের কজন নেতৃবৃন্দের সাথে। তবে মোহাম্মদ নোমান এক চিঠিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ থেকে সরে দাড়ানো প্রসঙ্গে জানান, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি – সেক্রেটারী সমন্বয় করলেও ভিতরে ভিতরে জেলার অনেক নেতারা পাপুলের সাথে আঁতাত করে সন্দেহ তৈরি করে। ফলশ্রুতিতে আওয়ামীলীগ দলীয় নেতা – কর্মীদের বহিঃষ্কার চলছিলো। এছাড়াও নিজ দল জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক অস্থিরতা, লক্ষ্য নির্ধারণে অনিশ্চয়তা, কেন্দ্রিয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয় ও সিদ্ধান্তহীনতা এবং মহাজোটের স্বতন্ত্র বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করে নির্বাচনে বহাল থাকা, মহাজোটের নেতা কর্মীদের মধ্যে সংশয়, সন্দেহ, অবিশ্বাস ও বিভ্রান্তি তৈরী হওয়া এবং লোভী, সুযোগ সন্ধানীদের অবৈধ গোপন তৎপরতা ও আঁতাত করা, কেন্দ্রীয় সহযোগীতা না পাওয়া ইত্যাদি কারনে আমি নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছি।

আমি আমার নির্বাচনী এলাকার সর্বস্তরের জনগন, যারা আমাকে অকুষ্ঠ সহযোগীতা দিয়ে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের প্রতি সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি এবং বাস্তব চিত্র অনুধাবন করে আমার সিদ্ধান্তকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আকুল আবেদন জানাচ্ছি । এমন একটি চিঠি কেন্দ্রে পাঠান। সেই চিঠিতেও পাপুলকে সমর্থনের কোন লেখা ছিলো না।