ঢাকা ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিনা দোষে ২৭ মাস কারাবাস, এসআইসহ ৪ জনের নামে মামলা ।

বিনা দোষে ২৭ মাস কারাবন্দি রাখা ও তার দুই মেয়েকে নির্যাতন করে জবানবন্দি নেওয়ার অভিযোগে মামলা করেছেন মো. হোসেন।

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে এক জেলেকে বিনা দোষে ২৭ মাস কারাবন্দি রাখা ও তার দুই মেয়েকে নির্যাতন করে জবানবন্দি নেওয়ার অভিযোগে পুলিশসহ চারজনের নামে মামলা হয়েছে।

রবিবার (১৬ এপ্রিল) সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি অঞ্চল (রামগতি) আদালতে এ মামলা হয়। আদালত মামলা আমলে নিয়ে আগামী ৬ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) লক্ষ্মীপুর শাখাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের পেশকার আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে অভিযোগ তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।’

বাদীর আইনজীবী আবদুল আহাদ শাকিল পাটওয়ারী বলেন, ‘আদালত সিআইডিকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ৬ জুনের মধ্যে সংস্থাকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’

মামলার আসামি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মজিবুর রহমান তপাদার লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানার দাসেরহাট পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত রয়েছেন। অপর আসামিরা হলেন, বাদীর শ্বশুর মো. বাহার, শাশুড়ি হাজেরা বেগম ও বাহার-হাজারা দম্পতির ছেলে মো. বাবুল।

আদালত সূত্রে জানা যায়, মো. হোসেন লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার ইউনিয়নের সুজন গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় জেলে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তার মা সৈয়দা খাতুন ও স্ত্রী পারুলের ঝগড়া হয়। ক্ষোভে বাবার বাড়ি চলে যান পারুল। চার দিন পর শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীর খোঁজ নেন হোসেন। সেখানে কোনো খোঁজ না পেয়ে থানায় স্ত্রী নিখোঁজের ডায়েরি করেন তিনি।

প্রায় এক মাস পর হোসেনের বাড়ির পাশ থেকে এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাকে মেয়ে হিসেবে শনাক্ত করেন হোসেনের শাশুড়ি হাজেরা বেগম। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন শ্বশুর মো. বাহার। এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ২৭ মাস কারাভোগ করেন হোসেন। জামিনে বের হয়ে তিনি জানতে পারেন স্ত্রী পারুল ঢাকায় মারা যান। সেখানে তার দাফনও হয়। পারুলের মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকার লালবাগ থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়।

লালবাগ থানা থেকে এই মামলার অনুলিপি এবং হাসপাতাল থেকে পারুলের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ করেন হোসেন। এসব নিয়ে তিনি ২০২২ সালের ১০ মার্চ লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি (রামগতি) আদালতে হাজির হন। আদালতের বিচারক নুসরাত জামান কাগজপত্র পর্যালোচনা করে হোসেনের দুই মেয়ে ঝুমুর আক্তার ও নূপুর আক্তারকে ১৩ মার্চ আদালতে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেন। আদালতে উপস্থিত হয়ে ঝুমুর জানিয়েছেন, পুলিশ কর্মকর্তা মজিবুর রহমান তপাদারের শেখানো কথায় বাবার বিরুদ্ধে তিনি জবানবন্দি দিয়েছিলেন। সব পর্যালোচনা করে হোসেনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

সিআইডির লক্ষ্মীপুর জেলার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ উদ্দিন সরদারের তদন্তে উঠে আসে হোসেনের স্ত্রী পারুলের মৃত্যুর রহস্য।

২০২২ সালের ১৬ আগস্ট আদলতে জমা দেওয়া সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, পারুল ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর ঢাকার লালবাগ এলাকার একটি বাসায় আত্মহত্যা করেন। তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। পুলিশের কাছ থেকে পারুলের মরদেহ বুঝে নেন তার ভাই মো. বাবুল। কিন্তু স্ত্রী হত্যার অভিযোগে পাঁচ দিন আগে ১৪ অক্টোবর হোসেনকে গ্রেপ্তার করে রামগতি থানা পুলিশ।

হোসেনের আইনজীবী আব্দুল আহাদ শাকিল পাটওয়ারী বলেন, ‘সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর চলতি বছরের ৪ এপ্রিল হোসেনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি অঞ্চল (রামগতি) আদালত।’

হোসেন বলেন, ‘জেলে থাকা অবস্থায় আমার মা মারা গেছেন। মাটি দিতে পারিনি। মিথ্যা অভিযোগে জেল খেটেছি। আমার দুই মেয়েকে বিদ্যুতের শক দিয়ে আমার বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছেন এসআই মজিবুর। এজন্য আদালতে মামলা করেছি।’

অভিযোগের বিষয়ে এসআই মজিবুর রহমান বলেন, ‘মামলাটি অল্প কিছু দিন তদন্ত করেছি। পরে সিআইডি তদন্ত করেছে। হোসেনের স্ত্রী বেঁচে থাকার বিষয়টি আমার জানা ছিল না।’তবে হোসেনের মেয়েদের নির্যাতনের বিষয় অস্বীকার করেছেন তিনি। মজিবুর বলেন, ‘এটি সত্য নয়।’

হোসেনের শ্বশুর মো. বাহার বলেন, ‘মেয়ে হিসেবে যার মরদেহ আমরা শনাক্ত করেছিলাম, তার হাতে তিনটি তাবিজ ছিল। আমার মেয়ের হাতেও একই রকম তাবিজ ছিল।’

আপনার ছেলে বাবুল ঢাকায় পারুলের মরদেহ দাফন করেছে, এটি জানা ছিল কি না, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা জানতাম না পারুল ঢাকায় ছিল। সেখানে সে মারা যাওয়ার খবরও আমরা পাইনি। আমার ছেলে বলেছে সে বোনের মরদেহ থানা থেকে বুঝে নেয়নি ও দাফন করেনি। সত্যটা জানলে কখনও হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করতাম না।’

এ বিষয়ে জানতে বাবুলের ফোন নম্বর চাইলে অপারগতা প্রকাশ করেন বাহার।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

লক্ষ্মীপুরের উত্তরচরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির বিলুপ্ত  

বিনা দোষে ২৭ মাস কারাবাস, এসআইসহ ৪ জনের নামে মামলা ।

আপডেট : ১০:১৬:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৩

বিনা দোষে ২৭ মাস কারাবন্দি রাখা ও তার দুই মেয়েকে নির্যাতন করে জবানবন্দি নেওয়ার অভিযোগে মামলা করেছেন মো. হোসেন।

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে এক জেলেকে বিনা দোষে ২৭ মাস কারাবন্দি রাখা ও তার দুই মেয়েকে নির্যাতন করে জবানবন্দি নেওয়ার অভিযোগে পুলিশসহ চারজনের নামে মামলা হয়েছে।

রবিবার (১৬ এপ্রিল) সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি অঞ্চল (রামগতি) আদালতে এ মামলা হয়। আদালত মামলা আমলে নিয়ে আগামী ৬ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) লক্ষ্মীপুর শাখাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের পেশকার আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে অভিযোগ তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।’

বাদীর আইনজীবী আবদুল আহাদ শাকিল পাটওয়ারী বলেন, ‘আদালত সিআইডিকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ৬ জুনের মধ্যে সংস্থাকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’

মামলার আসামি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মজিবুর রহমান তপাদার লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানার দাসেরহাট পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত রয়েছেন। অপর আসামিরা হলেন, বাদীর শ্বশুর মো. বাহার, শাশুড়ি হাজেরা বেগম ও বাহার-হাজারা দম্পতির ছেলে মো. বাবুল।

আদালত সূত্রে জানা যায়, মো. হোসেন লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার ইউনিয়নের সুজন গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় জেলে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তার মা সৈয়দা খাতুন ও স্ত্রী পারুলের ঝগড়া হয়। ক্ষোভে বাবার বাড়ি চলে যান পারুল। চার দিন পর শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীর খোঁজ নেন হোসেন। সেখানে কোনো খোঁজ না পেয়ে থানায় স্ত্রী নিখোঁজের ডায়েরি করেন তিনি।

প্রায় এক মাস পর হোসেনের বাড়ির পাশ থেকে এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাকে মেয়ে হিসেবে শনাক্ত করেন হোসেনের শাশুড়ি হাজেরা বেগম। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন শ্বশুর মো. বাহার। এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ২৭ মাস কারাভোগ করেন হোসেন। জামিনে বের হয়ে তিনি জানতে পারেন স্ত্রী পারুল ঢাকায় মারা যান। সেখানে তার দাফনও হয়। পারুলের মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকার লালবাগ থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়।

লালবাগ থানা থেকে এই মামলার অনুলিপি এবং হাসপাতাল থেকে পারুলের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ করেন হোসেন। এসব নিয়ে তিনি ২০২২ সালের ১০ মার্চ লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি (রামগতি) আদালতে হাজির হন। আদালতের বিচারক নুসরাত জামান কাগজপত্র পর্যালোচনা করে হোসেনের দুই মেয়ে ঝুমুর আক্তার ও নূপুর আক্তারকে ১৩ মার্চ আদালতে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেন। আদালতে উপস্থিত হয়ে ঝুমুর জানিয়েছেন, পুলিশ কর্মকর্তা মজিবুর রহমান তপাদারের শেখানো কথায় বাবার বিরুদ্ধে তিনি জবানবন্দি দিয়েছিলেন। সব পর্যালোচনা করে হোসেনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

সিআইডির লক্ষ্মীপুর জেলার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ উদ্দিন সরদারের তদন্তে উঠে আসে হোসেনের স্ত্রী পারুলের মৃত্যুর রহস্য।

২০২২ সালের ১৬ আগস্ট আদলতে জমা দেওয়া সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, পারুল ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর ঢাকার লালবাগ এলাকার একটি বাসায় আত্মহত্যা করেন। তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। পুলিশের কাছ থেকে পারুলের মরদেহ বুঝে নেন তার ভাই মো. বাবুল। কিন্তু স্ত্রী হত্যার অভিযোগে পাঁচ দিন আগে ১৪ অক্টোবর হোসেনকে গ্রেপ্তার করে রামগতি থানা পুলিশ।

হোসেনের আইনজীবী আব্দুল আহাদ শাকিল পাটওয়ারী বলেন, ‘সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর চলতি বছরের ৪ এপ্রিল হোসেনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি অঞ্চল (রামগতি) আদালত।’

হোসেন বলেন, ‘জেলে থাকা অবস্থায় আমার মা মারা গেছেন। মাটি দিতে পারিনি। মিথ্যা অভিযোগে জেল খেটেছি। আমার দুই মেয়েকে বিদ্যুতের শক দিয়ে আমার বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছেন এসআই মজিবুর। এজন্য আদালতে মামলা করেছি।’

অভিযোগের বিষয়ে এসআই মজিবুর রহমান বলেন, ‘মামলাটি অল্প কিছু দিন তদন্ত করেছি। পরে সিআইডি তদন্ত করেছে। হোসেনের স্ত্রী বেঁচে থাকার বিষয়টি আমার জানা ছিল না।’তবে হোসেনের মেয়েদের নির্যাতনের বিষয় অস্বীকার করেছেন তিনি। মজিবুর বলেন, ‘এটি সত্য নয়।’

হোসেনের শ্বশুর মো. বাহার বলেন, ‘মেয়ে হিসেবে যার মরদেহ আমরা শনাক্ত করেছিলাম, তার হাতে তিনটি তাবিজ ছিল। আমার মেয়ের হাতেও একই রকম তাবিজ ছিল।’

আপনার ছেলে বাবুল ঢাকায় পারুলের মরদেহ দাফন করেছে, এটি জানা ছিল কি না, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা জানতাম না পারুল ঢাকায় ছিল। সেখানে সে মারা যাওয়ার খবরও আমরা পাইনি। আমার ছেলে বলেছে সে বোনের মরদেহ থানা থেকে বুঝে নেয়নি ও দাফন করেনি। সত্যটা জানলে কখনও হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করতাম না।’

এ বিষয়ে জানতে বাবুলের ফোন নম্বর চাইলে অপারগতা প্রকাশ করেন বাহার।