ঢাকা ০১:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরগির বাচ্চা-ফিড-ডিম-মাংসের বাজার দখল গুটি কয়েক কোম্পানির।

মুরগির বাচ্চা ও পোলট্রি খাদ্যের (ফিড) সিংহভাগ উৎপাদন করছে কয়েকটি কোম্পানি। পাশাপাশি ডিম ও মাংসের বাজারেও বড় একটি অংশ তাদের দখলে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উৎপাদনের পাশাপাশি চুক্তির ভিত্তিতে কোম্পানির বাইরে অন্য অনেক খামারিকেও কাজে লাগাচ্ছে কোম্পানিগুলো। বাজারের আকৃতি, মুনাফাসহ ব্যবসায়িক বিভিন্ন তথ্য প্রকাশের বিষয়ে কোম্পানিগুলো বরাবরই এক ধরনের গোপনীয়তা বজায় রাখে। কোম্পানিগুলোর দাবি, ডিম ও মাংসের বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ ১০-১৫ শতাংশের বেশি হবে না। যদিও খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পোলট্রি পণ্যের বাজারের সিংহভাগই কোম্পানিগুলোর দখলে। বলতে গেলে বাজারের গতিপ্রকৃতি তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে।

কয়েক মাস ধরেই অস্থিতিশীল মুরগি ও ডিমের বাজার। স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন মহল থেকে চেষ্টা করা হলেও সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। এর মধ্যে আবার প্রান্তিক খামারিরাও মুনাফা করতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। পোলট্রি বাজারে বর্তমানে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবশালী হিসেবে দেখা হয় সেগুলোর মধ্যে হলো কাজী ফার্মস গ্রুপ, নারিশ, প্যারাগন, আফতাব, কোয়ালিটি, প্রোভিটা, সিপি, ডায়মন্ড এগ, রাশিক/জামান গ্রুপ ইত্যাদি।

পোলট্রি খাতে মাংস ও ডিমের জন্য মুরগির একদিন বয়সী বাচ্চা ক্রয় করে থাকেন খামারিরা। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এসব বাচ্চা যেসব মোরগ-মুরগির মাধ্যমে উৎপাদন হয়; সেগুলোকে বলা হয় প্যারেন্ট স্টক (পিএস)। আর পিএস উৎপাদন হয় গ্র্যান্ড প্যারেন্ট স্টক (জিপি) থেকে। দেশে জিপি ও পিএসের বাজারের পুরোটাই করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণে।

ব্রয়লারের জিপি স্টকের বাজারে শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ৮৫ শতাংশ। ঢাকার নেদারল্যান্ডস দূতাবাস দেশের পোলট্রি খাতে করপোরেটগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এক গবেষণা চালায়। গবেষণার ভিত্তিতে ২০২০ সালে প্রকাশিত ‘পোলট্রি সেক্টর স্টাডি বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে আসে, দেশে মাংসের জন্য পালনকৃত ব্রয়লার মুরগির জিপি স্টক সবচেয়ে বেশি রয়েছে কাজী ফার্মস গ্রুপের। দুটি খামারে তাদের ৪৯ হাজার জিপি ব্রয়লার রয়েছে। ব্রয়লারের জিপির বাজারের ৩৪ শতাংশই কাজী ফার্মসের দখলে। প্রতিষ্ঠানটির ব্রয়লার ও লেয়ারের পিএস খামার রয়েছে সাতটি। যেগুলো একদিন বয়সী বাচ্চা উৎপাদন করছে। কোম্পানিটির জবাইখানায় একদিনে ১০ হাজার মুরগি প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা রয়েছে। তাদের মোট হ্যাচারির সংখ্যা ১৩টি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ফিড কারখানা রয়েছে দুটি।

কাজী ফার্মসের মতোই প্যারাগন, আফতাব, নারিশ ও সিপিও একই সঙ্গে খাদ্য, বাচ্চা, ডিম ও মাংস উৎপাদন করে থাকে। প্যারাগন গ্রুপের দুটি খামারে ব্রয়লারের জিপি রয়েছে ১৪ হাজার। জিপি ও লেয়ার ফার্মের সংখ্যা তিনটি। প্রতিষ্ঠানটির জবাইখানায় সক্ষমতা একদিনে পাঁচ হাজার। হ্যাচারি রয়েছে সাতটি। আর খাদ্য উৎপাদন কারখানা রয়েছে পাঁচটি।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে পোলট্রি পণ্যের বাজার বেশ চড়া হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর বাজারে দুই মাস আগেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৫৫ টাকায়। গতকাল বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকায়। অর্থাৎ দুই মাসে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১০০ টাকারও বেশি। দুই মাস আগে ২৫০-২৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া সোনালি মুরগিও কিনতে হচ্ছে ৩৫০-৩৬০ টাকায়। প্রতি ডজন ডিম দুই মাস আগে ১২০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ১৪০-১৫০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।

নানা প্রচেষ্টায়ও দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারেনি সরকার। রমজান মাসকে সামনে রেখে গতকাল থেকে রাজধানীর ২০টি স্থানে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যক্রম শুরু করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এ কার্যক্রম উদ্বোধনকালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘যেখানেই অতিরিক্ত দাম নেয়া হবে সেখানেই দায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে।’

পোলট্রি খাতের বাজার অস্থিতিশীলতা নিয়ে গত ৯ মার্চ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়। ওই সময় কাজী ফার্মস লিমিটেডের পরিচালক ও ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী জাহিন হাসান জানিয়েছিলেন ব্রয়লারের বাচ্চার উৎপাদন খরচ ৩৫-৪০ টাকা। আর প্রতি কেজি ব্রয়লারের উৎপাদন খরচ খামারি পর্যায়ে ১৫০-১৬০ টাকা। তবে একই সঙ্গে খাদ্য, বাচ্চা, ডিম ও মুরগি উৎপাদন করা কোম্পানিগুলোর উৎপাদন খরচ আরো ২০ টাকা কমে ১৩০-১৪০ টাকা হবে বলে জানানো হয়।

যদিও একই দিনে বাচ্চা বিক্রি হচ্ছিল ৫৫-৫৬ টাকা করে। আর সারা দেশে কন্ট্রাক্ট খামারগুলো থেকে প্রতিষ্ঠানটির ব্রয়লারের পাইকারি মূল্য ছিল প্রতি কেজি ১৯০-২০৭ টাকা। ওই সময় কাজী জাহিন হাসান মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বলেন, ‘গত বছরের মে, জুন, জুলাই ও আগস্ট এবং এ বছরের জানুয়ারিতে বাচ্চার চাহিদা ছিল না এবং সে সময় তা ৮ থেকে ৯ টাকায় নেমে আসে। ওই সময় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পোষানোর জন্য উৎপাদন কমানো হয়েছিল। বাচ্চার উৎপাদন কমে যাওয়ায় এখন ব্রয়লারের উৎপাদন কমে গেছে, ফলে দাম বেড়েছে।’

বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে কাজী ফার্মস ও প্যারাগন গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রান্তিক খামারিদের অভিযোগ, পোলট্রি খাতে কোম্পানিগুলো একই সঙ্গে বাচ্চা, খাদ্য, ডিম ও মাংস উৎপাদন করছে। এতে তারা ইচ্ছেমতো বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও হ্রাস করার সুযোগ পাচ্ছে। আবার একই সঙ্গে তারা মুরগি ও ডিম উৎপাদন করছে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে। এ কারণে বাজারের নিয়ন্ত্রণও প্রধানত এসব কোম্পানির হাতেই থাকে।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মুরগির কেজি ২০০-২১০ টাকা হলে ঠিক আছে। পোলট্রি খাতের করপোরেট কোম্পানিগুলো শতভাগ খাদ্য ও বাচ্চা উৎপাদন করে। আবার তারাই ডিম ও মুরগিও উৎপাদন করে। কন্ট্রাক্ট ফার্মিং বা চুক্তিভিত্তিক খামারও কাজে লাগায়। এতে করে বাজার গুটিকয়েক কোম্পানির দখলে চলে যাচ্ছে, যা বার বার ওঠা বাজার সিন্ডিকেটের অভিযোগের সত্যতাকে প্রমাণ করে। করপোরেট গ্রুপের মুরগি, ডিম, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে না পারলে কোনোদিন বাজার সিন্ডিকেট বন্ধ হবে না।’

বর্তমানে বাচ্চার দাম ৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও সংকট দেখিয়ে এ বাচ্চা এখন ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘তারা তাদের মর্জিমাফিক খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। আবার যারা কন্ট্রাক্ট ফার্মিং করে তাদের কাছ থেকে খাদ্য ও বাচ্চা দুটোর দামই অনেক কম রাখে। এতে যারা তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ তারাই শুধু টিকে থাকে। বাকি যারা প্রান্তিক খামারি আছে তারা সবাই খামার বন্ধ করে দিচ্ছে।’

খাদ্য ও বাচ্চার ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে ছিটকে পড়ছেন প্রান্তিক খামারিরা। বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিআইএ) তথ্যমতে, করোনা মহামারীর আগে বাংলাদেশে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত খামারের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৭৯। কিন্তু করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকটে পোলট্রি খাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে প্রায় ৬২ হাজার ৬৫৬টি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। চালু আছে ৯৫ হাজার ৫২৩টি খামার। অর্থাৎ করোনার পর থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ পোলট্রি খামার বন্ধ হয়েছে। খামারগুলোয় দৈনিক মুরগির মাংসের উৎপাদন সক্ষমতা ৫ হাজার ২৭৩ টন। যদিও বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৪ হাজার ২১৯ টন। অর্থাৎ দেশে এখন সক্ষমতার ২৫ দশমিক ৭১ শতাংশ কম মাংস উৎপাদন হচ্ছে। আর দৈনিক ডিম উৎপাদন সক্ষমতা ৬ কোটি ৬৪ লাখ ৮২ হাজার ১৮৩টি। যদিও বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৪ কোটি ৩২ লাখ ১৩ হাজার ৪১৮টি।

দেশের পোলট্রি খাতের বড় আরেকটি প্রতিষ্ঠান আফতাব জিপি লিমিটেড। কোম্পানিটির দুটি খামারে ব্রয়লারের জিপি রয়েছে ১২ হাজার। জিপি ও লেয়ার ফার্মের সংখ্যা সাতটি। প্রতিষ্ঠানটির জবাইখানায় সক্ষমতা একদিনে আট হাজার। আর খাদ্য উৎপাদন কারখানা রয়েছে তিনটি। নারিশের দুটি খামারে ব্রয়লার জিপি রয়েছে ২২ হাজার ৫০০টি। জিপি ও লেয়ার ফার্মের সংখ্যা পাঁচটি। প্রতিষ্ঠানটির জবাইখানায় সক্ষমতা একদিনে দুই হাজার। হ্যাচারি রয়েছে তিনটি। আর খাদ্য উৎপাদন কারখানা রয়েছে পাঁচটি।

এছাড়া সিপি বাংলাদেশের চারটি খামারে ব্রয়লারের জিপি রয়েছে ২৪ হাজার। তারাও ডিম ও মাংস উৎপাদন করছে। প্রতিষ্ঠানটির জবাইখানায় সক্ষমতা একদিনে ১০ হাজার। এছাড়া দেশের পোলট্রি খাতে শীর্ষ কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে কোয়ালিটি, প্রোভিটা, সিপি, জামান গ্রুপ, কাসিলা ও এজি জিপি।

বাজারে চলমান অস্থিতিশীলতার জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করছে পোলট্রি শিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. আহসানুজ্জামান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বাচ্চার দাম কম ছিল। অনেক খামারি পোলট্রি থেকে সরে গেছে। শুধু মুরগি নয়। সবকিছুর দামই বেড়েছে। মুরগির উৎপাদন খরচ ১৭০-১৮০ টাকা। সে হিসেবে ২১০ টাকা হতে পারে। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে দাম বেড়ে যায়। এখন খামারিরাও মুরগি ২০০ টাকার ওপরে দাম পাচ্ছে। করপোরেট কোম্পানিগুলো ১০-১২ শতাংশ ডিম-মুরগি উৎপাদন করে। তারা আসলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।’

পোলট্রি খাতের বড় একটি সংকট হিসেবে নীতিমালার অভাবকে এখন দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। নীতিমালা চূড়ান্ত হলে পোলট্রি পণ্যের বাজার আরো প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. বাপন দে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পোলট্রি খাত অসহনীয় হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। দিন দিন পোলট্রি খাতে প্রান্তিকদের হার কমে যাচ্ছে। অপরদিকে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনের হার বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বাজারের মূল্যের পেছনে তাদের ভূমিকা দিনদিন বাড়ছে। নীতিমালা অনুযায়ী, একই সঙ্গে খাদ্য ও বাচ্চা উৎপাদনের পাশাপাশি কোম্পানিগুলো মুরগি ও বাচ্চা উৎপাদন করতে পারে না। সরকারের ন্যাশনাল পোলট্রি ডেভেলপমেন্ট পলিসি আছে। কে কী করতে পারবে সেটা সেখানে উল্লেখ আছে। কিন্তু এর বাস্তবায়নে সরকার ও বেসরকারি সবারই সদিচ্ছার অভাব আছে। পোলট্রি খাতে খামারিরা অনেক সময় অনেক লোকসানও গোনেন। নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়া প্রয়োজন। তাহলে বাজার এমন অসহনশীল হওয়ার কথা না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পোলট্রি নীতিমালা প্রায় চূড়ান্ত অবস্থায় রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে আসেনি। পোলট্রি খাতের স্টেকহোল্ডাররা একে অপরকে দোষারোপ করছে। আবার করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের কথা বলা হয়। তারা বলছে, প্রান্তিক খামারিদের তারা নিরাপত্তা দিচ্ছে। এটা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ভালো উদ্যোগ। কিন্তু সেটিকে ভালো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে হবে।’

বনিক বার্তা থেকে সংগৃহিত।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

লক্ষ্মীপুরের উত্তরচরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির বিলুপ্ত  

মুরগির বাচ্চা-ফিড-ডিম-মাংসের বাজার দখল গুটি কয়েক কোম্পানির।

আপডেট : ১০:১৩:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩

মুরগির বাচ্চা ও পোলট্রি খাদ্যের (ফিড) সিংহভাগ উৎপাদন করছে কয়েকটি কোম্পানি। পাশাপাশি ডিম ও মাংসের বাজারেও বড় একটি অংশ তাদের দখলে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উৎপাদনের পাশাপাশি চুক্তির ভিত্তিতে কোম্পানির বাইরে অন্য অনেক খামারিকেও কাজে লাগাচ্ছে কোম্পানিগুলো। বাজারের আকৃতি, মুনাফাসহ ব্যবসায়িক বিভিন্ন তথ্য প্রকাশের বিষয়ে কোম্পানিগুলো বরাবরই এক ধরনের গোপনীয়তা বজায় রাখে। কোম্পানিগুলোর দাবি, ডিম ও মাংসের বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ ১০-১৫ শতাংশের বেশি হবে না। যদিও খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পোলট্রি পণ্যের বাজারের সিংহভাগই কোম্পানিগুলোর দখলে। বলতে গেলে বাজারের গতিপ্রকৃতি তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে।

কয়েক মাস ধরেই অস্থিতিশীল মুরগি ও ডিমের বাজার। স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন মহল থেকে চেষ্টা করা হলেও সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। এর মধ্যে আবার প্রান্তিক খামারিরাও মুনাফা করতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। পোলট্রি বাজারে বর্তমানে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবশালী হিসেবে দেখা হয় সেগুলোর মধ্যে হলো কাজী ফার্মস গ্রুপ, নারিশ, প্যারাগন, আফতাব, কোয়ালিটি, প্রোভিটা, সিপি, ডায়মন্ড এগ, রাশিক/জামান গ্রুপ ইত্যাদি।

পোলট্রি খাতে মাংস ও ডিমের জন্য মুরগির একদিন বয়সী বাচ্চা ক্রয় করে থাকেন খামারিরা। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এসব বাচ্চা যেসব মোরগ-মুরগির মাধ্যমে উৎপাদন হয়; সেগুলোকে বলা হয় প্যারেন্ট স্টক (পিএস)। আর পিএস উৎপাদন হয় গ্র্যান্ড প্যারেন্ট স্টক (জিপি) থেকে। দেশে জিপি ও পিএসের বাজারের পুরোটাই করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণে।

ব্রয়লারের জিপি স্টকের বাজারে শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ৮৫ শতাংশ। ঢাকার নেদারল্যান্ডস দূতাবাস দেশের পোলট্রি খাতে করপোরেটগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এক গবেষণা চালায়। গবেষণার ভিত্তিতে ২০২০ সালে প্রকাশিত ‘পোলট্রি সেক্টর স্টাডি বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে আসে, দেশে মাংসের জন্য পালনকৃত ব্রয়লার মুরগির জিপি স্টক সবচেয়ে বেশি রয়েছে কাজী ফার্মস গ্রুপের। দুটি খামারে তাদের ৪৯ হাজার জিপি ব্রয়লার রয়েছে। ব্রয়লারের জিপির বাজারের ৩৪ শতাংশই কাজী ফার্মসের দখলে। প্রতিষ্ঠানটির ব্রয়লার ও লেয়ারের পিএস খামার রয়েছে সাতটি। যেগুলো একদিন বয়সী বাচ্চা উৎপাদন করছে। কোম্পানিটির জবাইখানায় একদিনে ১০ হাজার মুরগি প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা রয়েছে। তাদের মোট হ্যাচারির সংখ্যা ১৩টি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ফিড কারখানা রয়েছে দুটি।

কাজী ফার্মসের মতোই প্যারাগন, আফতাব, নারিশ ও সিপিও একই সঙ্গে খাদ্য, বাচ্চা, ডিম ও মাংস উৎপাদন করে থাকে। প্যারাগন গ্রুপের দুটি খামারে ব্রয়লারের জিপি রয়েছে ১৪ হাজার। জিপি ও লেয়ার ফার্মের সংখ্যা তিনটি। প্রতিষ্ঠানটির জবাইখানায় সক্ষমতা একদিনে পাঁচ হাজার। হ্যাচারি রয়েছে সাতটি। আর খাদ্য উৎপাদন কারখানা রয়েছে পাঁচটি।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে পোলট্রি পণ্যের বাজার বেশ চড়া হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর বাজারে দুই মাস আগেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৫৫ টাকায়। গতকাল বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকায়। অর্থাৎ দুই মাসে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১০০ টাকারও বেশি। দুই মাস আগে ২৫০-২৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া সোনালি মুরগিও কিনতে হচ্ছে ৩৫০-৩৬০ টাকায়। প্রতি ডজন ডিম দুই মাস আগে ১২০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ১৪০-১৫০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।

নানা প্রচেষ্টায়ও দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারেনি সরকার। রমজান মাসকে সামনে রেখে গতকাল থেকে রাজধানীর ২০টি স্থানে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যক্রম শুরু করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এ কার্যক্রম উদ্বোধনকালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘যেখানেই অতিরিক্ত দাম নেয়া হবে সেখানেই দায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে।’

পোলট্রি খাতের বাজার অস্থিতিশীলতা নিয়ে গত ৯ মার্চ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়। ওই সময় কাজী ফার্মস লিমিটেডের পরিচালক ও ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী জাহিন হাসান জানিয়েছিলেন ব্রয়লারের বাচ্চার উৎপাদন খরচ ৩৫-৪০ টাকা। আর প্রতি কেজি ব্রয়লারের উৎপাদন খরচ খামারি পর্যায়ে ১৫০-১৬০ টাকা। তবে একই সঙ্গে খাদ্য, বাচ্চা, ডিম ও মুরগি উৎপাদন করা কোম্পানিগুলোর উৎপাদন খরচ আরো ২০ টাকা কমে ১৩০-১৪০ টাকা হবে বলে জানানো হয়।

যদিও একই দিনে বাচ্চা বিক্রি হচ্ছিল ৫৫-৫৬ টাকা করে। আর সারা দেশে কন্ট্রাক্ট খামারগুলো থেকে প্রতিষ্ঠানটির ব্রয়লারের পাইকারি মূল্য ছিল প্রতি কেজি ১৯০-২০৭ টাকা। ওই সময় কাজী জাহিন হাসান মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বলেন, ‘গত বছরের মে, জুন, জুলাই ও আগস্ট এবং এ বছরের জানুয়ারিতে বাচ্চার চাহিদা ছিল না এবং সে সময় তা ৮ থেকে ৯ টাকায় নেমে আসে। ওই সময় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পোষানোর জন্য উৎপাদন কমানো হয়েছিল। বাচ্চার উৎপাদন কমে যাওয়ায় এখন ব্রয়লারের উৎপাদন কমে গেছে, ফলে দাম বেড়েছে।’

বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে কাজী ফার্মস ও প্যারাগন গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রান্তিক খামারিদের অভিযোগ, পোলট্রি খাতে কোম্পানিগুলো একই সঙ্গে বাচ্চা, খাদ্য, ডিম ও মাংস উৎপাদন করছে। এতে তারা ইচ্ছেমতো বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও হ্রাস করার সুযোগ পাচ্ছে। আবার একই সঙ্গে তারা মুরগি ও ডিম উৎপাদন করছে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে। এ কারণে বাজারের নিয়ন্ত্রণও প্রধানত এসব কোম্পানির হাতেই থাকে।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মুরগির কেজি ২০০-২১০ টাকা হলে ঠিক আছে। পোলট্রি খাতের করপোরেট কোম্পানিগুলো শতভাগ খাদ্য ও বাচ্চা উৎপাদন করে। আবার তারাই ডিম ও মুরগিও উৎপাদন করে। কন্ট্রাক্ট ফার্মিং বা চুক্তিভিত্তিক খামারও কাজে লাগায়। এতে করে বাজার গুটিকয়েক কোম্পানির দখলে চলে যাচ্ছে, যা বার বার ওঠা বাজার সিন্ডিকেটের অভিযোগের সত্যতাকে প্রমাণ করে। করপোরেট গ্রুপের মুরগি, ডিম, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে না পারলে কোনোদিন বাজার সিন্ডিকেট বন্ধ হবে না।’

বর্তমানে বাচ্চার দাম ৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও সংকট দেখিয়ে এ বাচ্চা এখন ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘তারা তাদের মর্জিমাফিক খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। আবার যারা কন্ট্রাক্ট ফার্মিং করে তাদের কাছ থেকে খাদ্য ও বাচ্চা দুটোর দামই অনেক কম রাখে। এতে যারা তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ তারাই শুধু টিকে থাকে। বাকি যারা প্রান্তিক খামারি আছে তারা সবাই খামার বন্ধ করে দিচ্ছে।’

খাদ্য ও বাচ্চার ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে ছিটকে পড়ছেন প্রান্তিক খামারিরা। বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিআইএ) তথ্যমতে, করোনা মহামারীর আগে বাংলাদেশে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত খামারের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৭৯। কিন্তু করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকটে পোলট্রি খাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে প্রায় ৬২ হাজার ৬৫৬টি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। চালু আছে ৯৫ হাজার ৫২৩টি খামার। অর্থাৎ করোনার পর থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ পোলট্রি খামার বন্ধ হয়েছে। খামারগুলোয় দৈনিক মুরগির মাংসের উৎপাদন সক্ষমতা ৫ হাজার ২৭৩ টন। যদিও বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৪ হাজার ২১৯ টন। অর্থাৎ দেশে এখন সক্ষমতার ২৫ দশমিক ৭১ শতাংশ কম মাংস উৎপাদন হচ্ছে। আর দৈনিক ডিম উৎপাদন সক্ষমতা ৬ কোটি ৬৪ লাখ ৮২ হাজার ১৮৩টি। যদিও বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৪ কোটি ৩২ লাখ ১৩ হাজার ৪১৮টি।

দেশের পোলট্রি খাতের বড় আরেকটি প্রতিষ্ঠান আফতাব জিপি লিমিটেড। কোম্পানিটির দুটি খামারে ব্রয়লারের জিপি রয়েছে ১২ হাজার। জিপি ও লেয়ার ফার্মের সংখ্যা সাতটি। প্রতিষ্ঠানটির জবাইখানায় সক্ষমতা একদিনে আট হাজার। আর খাদ্য উৎপাদন কারখানা রয়েছে তিনটি। নারিশের দুটি খামারে ব্রয়লার জিপি রয়েছে ২২ হাজার ৫০০টি। জিপি ও লেয়ার ফার্মের সংখ্যা পাঁচটি। প্রতিষ্ঠানটির জবাইখানায় সক্ষমতা একদিনে দুই হাজার। হ্যাচারি রয়েছে তিনটি। আর খাদ্য উৎপাদন কারখানা রয়েছে পাঁচটি।

এছাড়া সিপি বাংলাদেশের চারটি খামারে ব্রয়লারের জিপি রয়েছে ২৪ হাজার। তারাও ডিম ও মাংস উৎপাদন করছে। প্রতিষ্ঠানটির জবাইখানায় সক্ষমতা একদিনে ১০ হাজার। এছাড়া দেশের পোলট্রি খাতে শীর্ষ কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে কোয়ালিটি, প্রোভিটা, সিপি, জামান গ্রুপ, কাসিলা ও এজি জিপি।

বাজারে চলমান অস্থিতিশীলতার জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করছে পোলট্রি শিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. আহসানুজ্জামান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বাচ্চার দাম কম ছিল। অনেক খামারি পোলট্রি থেকে সরে গেছে। শুধু মুরগি নয়। সবকিছুর দামই বেড়েছে। মুরগির উৎপাদন খরচ ১৭০-১৮০ টাকা। সে হিসেবে ২১০ টাকা হতে পারে। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে দাম বেড়ে যায়। এখন খামারিরাও মুরগি ২০০ টাকার ওপরে দাম পাচ্ছে। করপোরেট কোম্পানিগুলো ১০-১২ শতাংশ ডিম-মুরগি উৎপাদন করে। তারা আসলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।’

পোলট্রি খাতের বড় একটি সংকট হিসেবে নীতিমালার অভাবকে এখন দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। নীতিমালা চূড়ান্ত হলে পোলট্রি পণ্যের বাজার আরো প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. বাপন দে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পোলট্রি খাত অসহনীয় হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। দিন দিন পোলট্রি খাতে প্রান্তিকদের হার কমে যাচ্ছে। অপরদিকে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনের হার বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বাজারের মূল্যের পেছনে তাদের ভূমিকা দিনদিন বাড়ছে। নীতিমালা অনুযায়ী, একই সঙ্গে খাদ্য ও বাচ্চা উৎপাদনের পাশাপাশি কোম্পানিগুলো মুরগি ও বাচ্চা উৎপাদন করতে পারে না। সরকারের ন্যাশনাল পোলট্রি ডেভেলপমেন্ট পলিসি আছে। কে কী করতে পারবে সেটা সেখানে উল্লেখ আছে। কিন্তু এর বাস্তবায়নে সরকার ও বেসরকারি সবারই সদিচ্ছার অভাব আছে। পোলট্রি খাতে খামারিরা অনেক সময় অনেক লোকসানও গোনেন। নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়া প্রয়োজন। তাহলে বাজার এমন অসহনশীল হওয়ার কথা না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পোলট্রি নীতিমালা প্রায় চূড়ান্ত অবস্থায় রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে আসেনি। পোলট্রি খাতের স্টেকহোল্ডাররা একে অপরকে দোষারোপ করছে। আবার করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের কথা বলা হয়। তারা বলছে, প্রান্তিক খামারিদের তারা নিরাপত্তা দিচ্ছে। এটা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ভালো উদ্যোগ। কিন্তু সেটিকে ভালো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে হবে।’

বনিক বার্তা থেকে সংগৃহিত।