এলকেএইচ উপকূলীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা, সভাপতির বিরুদ্ধে এজাহার দিলেও গ্রহন করেনি রায়পুর থানা।
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় বিরোধের জেরে ৪০ বছরের পুরনো রাস্তা কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে মিজানুর রহমান মিজান নামের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ সময় বাধা দিতে গেলে ছয়জনকে পিটিয়ে জখম করা হয়।
এ ঘটনায় শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে চরবংশী গ্রামের ব্যবসায়ী ইয়াকুব আলী বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। এতে ওই শিক্ষকসহ ১২ জনকে এজাহারভুক্ত করা হয়। মিজানুর রহমান মিজান উপকূলীয় এল কে এইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চরংশী গ্রামের দেওয়ান বাড়িতে ইয়াকুবদের সঙ্গে মিজানের চলাচলের রাস্তা নিয়ে গত এক বছর ধরে বিরোধ চলে আসছে। একাধিকবার স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠক করলেও মীমাংসা হয়নি। ৪০ বছরের চলাচলের রাস্তাটি বৃহস্পতিবার মিজানসহ তার সহযোগীরা খননযন্ত্র দিয়ে কাটা শুরু করেন। এতে বাধা দেন ইয়াকুব ও তার পরিবারের লোকজন।
এ সময় ইয়াকুব, শাহজাহান, শরীফ, আলাউদ্দিন, আনোয়ার ও মহিউদ্দিনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। ঘটনার সময় রাস্তা কেটে ১ লাখ টাকা ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে থাকা ৩২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
অভিযুক্ত শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, জায়গা-জমি নিয়ে সমস্যা আছে। মামলা হতেই পারে। তবে হামলার বিষয়ে উত্তর না দিয়ে ব্যস্ততা দেখিয়ে কল কেটে দেন তিনি।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়া মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে এলকেএইচ উপকূলীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি মনির হোসেন মোল্লার বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে গৃহবধূকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখমের অভিযোগ উঠছে। অভিযোগে জানা যায় দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনির হোসেন মোল্লা ও তার চাচাতো ভাই বাবুল মোল্লার বিরুদ্ধে থানায় এজাহার জমা দিলেও রায়পুর থানা তা গ্রহণ করেননি তবে অভিযোগ আমলে নিয়ে ওসি নিজেই তদন্ত করবেন বলে জানান।
তবে অভিযুক্ত মনির হোসেন মোল্লার দাবি কাউকে মারধর করা হয়নি। ঘটনা সাজানো।
শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এমন অভিযোগ করেন নিশিতা আক্তার উর্মি নামে ওই নারী। এর আগে দুপুরে উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের খলিফারহাট এলাকায় সীমানা প্রাচীর ভাঙার প্রতিবাদে এ ঘটনা ঘটে। আহত উর্মি একই এলাকার ব্যবসায়ী রাসেল খলিফার স্ত্রী।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা মনির মোল্লা স্থানীয় এলকেএইচ উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি। বিদ্যালয়ের পাশেই ভুক্তভোগী উর্মিদের জমি রয়েছে। সেখানে বাড়ি করার উদ্দেশ্যে সম্প্রতি সীমানা প্রাচীর দেওয়া হয়। শুক্রবার সকালে হঠাৎ করে মনির মোল্লা লোকজন নিয়ে এসে প্রাচীরটি ভাঙতে শুরু করেন। এতে বাধা দেওয়ায় উর্মির মাথায় মনির মোল্লা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেন। এ সময় তাকে লাটিসোটা দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। বিকেলে তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উর্মি ও তার স্বামী রাসেল খলিফা জানান, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে মনির মোল্লা তাদের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছেন। জমি দখলে নিতে না পেরে বিভিন্ন সময় একাধিকবার তাদের (রাসেলদের) ওপর হামলা করা হয়েছে। সবশেষ তাদের সীমানা প্রাচীর ভাঙার সময় বাধা দেওয়ায় মনির মোল্লাসহ তার লোকজন উর্মিকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করেন।
তবে অভিযুক্ত মনির হোসেন মোল্লা বলেন, বিদ্যালয়ের রাস্তায় রাসেলরা জোরপূর্বক দেওয়াল নির্মাণ করেন। এতে দেওয়ালটি ভেঙে দিয়েছি। কাউকে মারধর করা হয়নি। রাসেলের স্ত্রীর আহতের ঘটনা সাজানো। উল্টো তিনি আমার গায়ে হাত তুলেছে।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়া বলেন, ঘটনাটি স্কুল সংক্রান্ত । ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিক পুলিশ পাঠানো হয়েছে।লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।