ঢাকা ০২:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বারবার জামানত হারিয়েও নির্বাচন ছাড়েননি ‘ইসরাফিল’, এবার লড়ছেন মেয়র পদে

নির্বাচন এলেই প্রার্থী হওয়া তার নেশা। অর্ধ যুগেরও বেশি সময় ধরে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তিনি। সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনও বাদ দেননি। যতবারই ভোটে দাঁড়িয়েছেন একবারও টিকেনি জামানত। এবার বাঘা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন তিনি।ভোট পাগল এ মানুষটি হলেন রাজশাহীর বাঘা পৌরসভার বলিহার এলাকার বাসিন্দা ইসরাফিল বিশ্বাস। পেশায় টিউবওয়েল মিস্ত্রী। ‘আলিফ-লাম-মিম’ডেকোরেটর নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। আগামী ২৯ ডিসেম্বর’২২ চতুর্থ ধাপের অনুষ্ঠেয় বাঘা পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। প্রতীক পেয়েছেন‘মোবাইল ফোন’।ভোট পাগল এ মানুষটিকে নিয়ে সাধারণ ভোটাররা হাসি-ঠাট্টা করলেও নির্বাচনের ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস ইসরাফিল বিশ্বাস। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীসহ আ’লীগের বিদ্রোহী ও বিএনপি-জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনিও মাঠে চালাচ্ছেন প্রচারণা, করছেন গণসংযোগ। ভোটের প্রচারণা করতে তার কর্মী সমর্থক কম হলেও ইসরাফিল বিশ্বাস নিজেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।তবে তার নির্বাচনী প্রচারণায় নেই গণজমায়েত, নেই মিছিলের হট্টগোল। কখনো পায়ে হেঁটে,কখনো ইজিবাইকে চড়ে ভোটের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি । অনেকই হাসি-তামাশা করলেও কেউ কেউ ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তবে প্রতিক্রিয়া যা-ই হোক, ব্যতিক্রমী প্রচারণা নজর কেড়েছে সকলের। নির্বাচনী প্রচারে এসেছে ভিন্ন মাত্রা।
ইজিবাইকে চড়ে নির্বাচনী এলাকা ঘুরে ঘুরে প্রচারণার মাঠে দেখা গেল, নিজের ছবি সংবলিত ‘মোবাইল ফোন’প্রতীকের পোস্টার বিলি করছেন ইসরাফিল বিশ্বাস। তিনি জানান, নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জনগণের ভোট না পেলেও দুঃখ নেই তার। তার আশা, এভাবে প্রার্থী হয়েই একদিন সফলতা আসবেই।বার বার প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে ইসরাফিল বিশ্বাস বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে ভোটের হারানো সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে চাই। নতুন প্রজন্ম জানতে হবে এদেশে একদিন গণতন্ত্র ছিল, ভোটের রাজনীতি ছিল। কোনো দিন যদি নির্বাচিত হই,তাহলে সমাজসেবক হিসেবে তরুণদের কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করবো সবার আগে। তার বিশ্বাস অতীতের দিনগুলোর চেয়ে এবার পৌরসভার ভোটাররা তাকে মূল্যায়ন করে মেয়র পদে ‘মোবাইল ফোন’প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।জানা যায়, সর্ব প্রথম ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন ইসরাফিল বিশ্বাস । কিন্তু নির্বাচনী এলাকার ১শতাংশ ভোটারদের স্বাক্ষর সঠিক না হওয়ায় তার মনোনয়ন পত্র বাতিল হয়ে যায়। এরপর থেকে প্রতিবারই তিনি প্রার্থী হয়েছেন। ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদের তৃতীয় নির্বাচনে চেয়ারম্যান,২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদের ৪র্থ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন ইসরাফিল বিশ্বাস । পড়ালেখায় ৫ম শ্রেণির বেশি আগাতে পারেননি।উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও পৌর নির্বাচনে সহকারি রিটার্নিং অফিসার মুজিবুল আলম জানান,কোন নির্বাচনেই জামানত ফেরত পাননি ইসরাফিল বিশ্বাস। আগামী ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় বাঘা পৌরসভা নির্বাচনে এবার মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ‘স্বাক্ষরজ্ঞান’ ইসরাফিল বিশ্বাস।

পৌরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল হালিম বলেন, ইসরাফিল একা একা যেভাবে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন, তা দেখে মনে হচ্ছে এটা নির্বাচনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।সাগরি নামের এক নারী বলেন, ইসরাফিল বিশ্বাস গরিব বলে নিজেই পোস্টার-মাইকিং গাড়িতে চড়ে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মিলিক বাঘার হাবিবুর রহমান বলেন, ভোটের মাঠে যেখানে অর্থ আর ক্ষমতার লড়াই চলছে সেখানে ওই প্রার্থীর সাদামাটা অংশগ্রহণকে ইতিবাচক বলে মনে হচ্ছে। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে তার ব্যতিক্রমী প্রচারণা ইতিবাচক উদাহরণ হতে পারে।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

লক্ষ্মীপুরের উত্তরচরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির বিলুপ্ত  

বারবার জামানত হারিয়েও নির্বাচন ছাড়েননি ‘ইসরাফিল’, এবার লড়ছেন মেয়র পদে

আপডেট : ০৫:১২:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২২

নির্বাচন এলেই প্রার্থী হওয়া তার নেশা। অর্ধ যুগেরও বেশি সময় ধরে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তিনি। সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনও বাদ দেননি। যতবারই ভোটে দাঁড়িয়েছেন একবারও টিকেনি জামানত। এবার বাঘা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন তিনি।ভোট পাগল এ মানুষটি হলেন রাজশাহীর বাঘা পৌরসভার বলিহার এলাকার বাসিন্দা ইসরাফিল বিশ্বাস। পেশায় টিউবওয়েল মিস্ত্রী। ‘আলিফ-লাম-মিম’ডেকোরেটর নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। আগামী ২৯ ডিসেম্বর’২২ চতুর্থ ধাপের অনুষ্ঠেয় বাঘা পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। প্রতীক পেয়েছেন‘মোবাইল ফোন’।ভোট পাগল এ মানুষটিকে নিয়ে সাধারণ ভোটাররা হাসি-ঠাট্টা করলেও নির্বাচনের ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস ইসরাফিল বিশ্বাস। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীসহ আ’লীগের বিদ্রোহী ও বিএনপি-জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনিও মাঠে চালাচ্ছেন প্রচারণা, করছেন গণসংযোগ। ভোটের প্রচারণা করতে তার কর্মী সমর্থক কম হলেও ইসরাফিল বিশ্বাস নিজেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।তবে তার নির্বাচনী প্রচারণায় নেই গণজমায়েত, নেই মিছিলের হট্টগোল। কখনো পায়ে হেঁটে,কখনো ইজিবাইকে চড়ে ভোটের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি । অনেকই হাসি-তামাশা করলেও কেউ কেউ ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তবে প্রতিক্রিয়া যা-ই হোক, ব্যতিক্রমী প্রচারণা নজর কেড়েছে সকলের। নির্বাচনী প্রচারে এসেছে ভিন্ন মাত্রা।
ইজিবাইকে চড়ে নির্বাচনী এলাকা ঘুরে ঘুরে প্রচারণার মাঠে দেখা গেল, নিজের ছবি সংবলিত ‘মোবাইল ফোন’প্রতীকের পোস্টার বিলি করছেন ইসরাফিল বিশ্বাস। তিনি জানান, নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জনগণের ভোট না পেলেও দুঃখ নেই তার। তার আশা, এভাবে প্রার্থী হয়েই একদিন সফলতা আসবেই।বার বার প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে ইসরাফিল বিশ্বাস বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে ভোটের হারানো সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে চাই। নতুন প্রজন্ম জানতে হবে এদেশে একদিন গণতন্ত্র ছিল, ভোটের রাজনীতি ছিল। কোনো দিন যদি নির্বাচিত হই,তাহলে সমাজসেবক হিসেবে তরুণদের কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করবো সবার আগে। তার বিশ্বাস অতীতের দিনগুলোর চেয়ে এবার পৌরসভার ভোটাররা তাকে মূল্যায়ন করে মেয়র পদে ‘মোবাইল ফোন’প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।জানা যায়, সর্ব প্রথম ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন ইসরাফিল বিশ্বাস । কিন্তু নির্বাচনী এলাকার ১শতাংশ ভোটারদের স্বাক্ষর সঠিক না হওয়ায় তার মনোনয়ন পত্র বাতিল হয়ে যায়। এরপর থেকে প্রতিবারই তিনি প্রার্থী হয়েছেন। ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদের তৃতীয় নির্বাচনে চেয়ারম্যান,২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদের ৪র্থ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন ইসরাফিল বিশ্বাস । পড়ালেখায় ৫ম শ্রেণির বেশি আগাতে পারেননি।উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও পৌর নির্বাচনে সহকারি রিটার্নিং অফিসার মুজিবুল আলম জানান,কোন নির্বাচনেই জামানত ফেরত পাননি ইসরাফিল বিশ্বাস। আগামী ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় বাঘা পৌরসভা নির্বাচনে এবার মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ‘স্বাক্ষরজ্ঞান’ ইসরাফিল বিশ্বাস।

পৌরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল হালিম বলেন, ইসরাফিল একা একা যেভাবে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন, তা দেখে মনে হচ্ছে এটা নির্বাচনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।সাগরি নামের এক নারী বলেন, ইসরাফিল বিশ্বাস গরিব বলে নিজেই পোস্টার-মাইকিং গাড়িতে চড়ে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মিলিক বাঘার হাবিবুর রহমান বলেন, ভোটের মাঠে যেখানে অর্থ আর ক্ষমতার লড়াই চলছে সেখানে ওই প্রার্থীর সাদামাটা অংশগ্রহণকে ইতিবাচক বলে মনে হচ্ছে। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে তার ব্যতিক্রমী প্রচারণা ইতিবাচক উদাহরণ হতে পারে।