প্রিন্ট এর তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪, ৭:০৬ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ আগস্ট ২৯, ২০২৪, ৫:৪৬ অপরাহ্ণ
লক্ষ্মীপুরে দুর্যোগে বন্যার্ত মানুষের মাঝে বিশ্বস্ত ‘ভ্যান গার্ড’ স্বেচ্ছাসেবীরা
লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়ে প্রতিদিনই প্রায় ৫০ থেকে ১০০ ত্রাণবাহী ট্রাক -পিকআপ যাচ্ছে বিভিন্ন উপজেলায়। কেউ আনছেন রান্না করা খাবার, কেউবা শুকনো খাবার মুড়ি, চিড়া, গুড়, খেজুর নিয়ে আসছেন। কারো হাতে জীবন রক্ষাকারী ঔষধ, পানিস বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, সেনেটারী ন্যাপকিনসহ জরুরী শিশু খাদ্য- বিশুদ্ধ পানি । কারো কারো ট্রাকে নৌকা স্পিডবোট। সবাই ছুটছে বন্যা দুর্গত এলাকায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। কেউ আবার আশ্রয় কেন্দ্রের পাশেই রান্না করছেন খাবার। বন্যা কবলিত মানুষের মুখে আহার যোগানোর চেষ্টা। সুস্থভাবে মানুষজনকে যেন উদ্ধার করা যায় তার প্রচেষ্টা।
জেলায় গত ৭ দিন ধরে বন্যার পানিতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ। এতে প্রকটভাবে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে পাওয়া ত্রাণের মাধ্যমে খাদ্যসংকট কিছুটা দূর হচ্ছে। তবে বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সকাল থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছে বন্যার্তরা। এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুই ইঞ্চি থেকে তিন ইঞ্চি পানি কমেছে।
তবে এবার লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়ে বন্যার করাল গ্রাস এত বিস্তৃত যে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা থেকে শোনা যাচ্ছে ত্রাণ'র জন্য হাহাকার। তবে যতটুকু পারা যাচ্ছে সবটুকু দিয়েই জীবন বাজি রেখে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে দলমত নির্বিশেষে হাজার হাজার তরুণ স্বেচ্ছাসেবী। বন্যা কবলিত পরিচিত ও অপরিচিত এলাকায় ঝুঁকির মধ্যে এক মুহূর্তের জন্য থেমে নেই তরুণদের স্বেচ্ছাশ্রম।
বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থারের তথ্যমতে, প্রায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। এরমধ্যে ৩০ হাজার মানুষ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে রয়েছে। অন্যান্যদের মধ্যে অনেকেই আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন। তবে সর্বাধিক মানুষ কষ্ট করে বাড়িতেই অবস্থান করছেন।
তবে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, লক্ষ্মীপুরে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ আশ্রয়ণকেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর,রামগঞ্জ, কমলনগর, রামগতি, চন্দ্রগঞ্জ উপজেলায় বন্যা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় ও জেলার বাইরে থেকে আসা অন্তত হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী দল। লক্ষ্মীপুর সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী পরিবার লাখ লাখ মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে বাইরে থেকে আসা টিম গুলোকে বিভিন্ন উপজেলায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন।
রায়পুর উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের শাহজাহানের মিয়ার ৯০ বছর বয়সীকে অসুস্থ মাকে উদ্ধার করেছে রায়পুর রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। একে একে ওই এলাকা থেকে শিশু বৃদ্ধ নারী পুরুষ মিলিয়ে মোট ১৩ জনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন তারা।
রায়পুর উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়নের সমাজসেবক শাহ আলম বন্যার্তদের মাঝে প্রথম দিন থেকেই প্রায় দুই হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা চলমান রাখেন, দুবাই প্রবাসী সোহেল তার উদ্যোগে প্রায় দুই হাজার মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করেন, রায়পুর উপজেলার স্বপ্নীল রায়পুর, রায়পুর স্টার্স সহ প্রায় ১২৩টি সামাজিক সংগঠন লক্ষ্মীপুর জেলায় স্বেচ্ছাসেবকদের দায়িত্ব পালন এর পাশাপাশি নিজেরাই ত্রাণ বিতরণ উদ্যোগ নিয়েছে।
এদিকে বাম পাশে মানুষকে উদ্ধার করতে যেয়ে অনেক স্বেচ্ছাসেবীদের নৌকা উল্টে আঘাত পেয়েছে। মাহবুব নামে একজন সংবাদ কর্মীর সাথে কথা বলে জানান তখন আমাদেরকে আহত হয়েছে বিষয়টি মাথায় ছিল না - সবার আগে কাজ করেছে মানুষকে উদ্ধার করতে হবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা হাসপাতাল মালিক সমিতি ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক পরিষদ লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ইউনিয়নে চিকিৎসা সহায়তা ও ওষুধ বিতরণ করেন।
গত ২৮ তারিখ রাতে লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রায় ৫৪টি একটি সূত্র জানিয়েছে। বিভিন্ন জেলার স্বেচ্ছাসেবী টিম কর্তৃক নিজস্ব অর্থায়নে কাজ করছে ব উপজেলার বন্যা দুর্গত এলাকায়।হাজার হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেয়ার পাশাপাশি বাহিরের জেলা থেকে আশা অনেক স্বেচ্ছাসেবী অন্তত সাড়ে তিনশো মানুষকে উদ্ধার করেছেন বন্যা কবলিত এলাকা থেকে।
এমনই ভাবে বন্যা কবলিতদের উদ্ধার এবং ত্রাণ তৎপরতা চালাতে জীবনবাজি রাখছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবীরা। দিন রাত এক করে নৌকা স্পিডবোট নিয়ে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পানিবন্দীদের উদ্ধার করছেন এই তরুনরা।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা একটি টিমের সমন্বয়ক আরাফাত জানান অনেকের কাছে নৌকা স্পিডবোট না থাকায় বেগ পেতে হয়েছে কার্যক্রম চালাতে। তবে বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিআইডব্লিউটিএ নৌকা ও স্পিডবোট সাহায্য করছে স্বেচ্ছাসেবীদের।
ছাত্রদল, ছাত্রশিবির অনন্যা ছাত্র সংগঠনগুলো ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা ও উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে । এই বন্যায় বিভিন্ন এলাকা থেকে তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা এগিয়ে এসেছে।
পুরান বেড়ী ইসলামী যুব সংঘের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এ. কে. এম আজাদ এর নেতৃত্বে - বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্যবৃন্দ, উপ-সহকারী পরিচালক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন রায়পুরের কর্মীবৃন্দ।
লক্ষ্মীপুরে বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণে আসেন ইশরাক হোসেন ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি এর পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ত্রাণ বিতরণ করেন লক্ষ্মীপুর জেলায় ।
লক্ষ্মীপুর সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী পরিবার এর সভাপতি হোসাইন আহমেদ হেলাল বলেন, সামাজিক ও মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা নিরলস ভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ঘুমানোর ও খাবারের সময়টুকু পর্যন্ত পারছেন না। তারা আমাদের মেহমান। আমরা চেষ্টা করছি তারা যেন কোনভাবে কষ্ট না পায় এই বন্যার্তদের সহযোগিতা করতে এসে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন স্বেচ্ছাসেবীদের ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার তৎপরতায় সহযোগিতা হয়েছে লক্ষ্মীপুর জেলার সকল জনপদে। এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। স্বেচ্ছাসেবী, রেড ক্রিসেন্ট,কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিস, ধর্মীয় সংগঠনগুলো, এনজিও সংস্থা,
রাজনৈতিক,সামাজি ক ব্যক্তিবর্গ বন্যা দুর্গত এলাকায় জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি সহ স্থানীয় প্রশাসন ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে শৃঙ্খলা এনেছেন।
প্রসঙ্গত, ২৩ আগস্ট থেকে নোয়াখালীর বন্যার পানি রহমতখালী খাল, ডাকাতিয়া নদী, ওয়াপদা খাল ও ভুলুয়া খাল দিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলায় ঢুকে পড়ে। এতে সদর উপজেলাসহ জেলার ৫টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা দেখা দেয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক - মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ । নির্বাহী সম্পাদক - তাহসিন হাওলাদার। প্রদান কার্যালয় - মনতাজ ম্যানশন(২য় তলা) দালাল বাজার । যোগোযোগ 01711122829