ঢাকা ১১:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১২ই ডিসেম্বর ভয়ংকর লক্ষ্মীপুর : নেসার পা হারিয়ে জীবন ফিরে পেলেও খোঁজ মেলেনি জুয়েলের আজও!

২০১৩ সাল ভয়ংকর লক্ষ্মীপুর এর সাক্ষী লক্ষ্মীপুরবাসী, রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর সকাল ৭টার দিকে জুয়েলের নেতৃত্বে যুবদল নেতা-কর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে জেলা শহরের চকবাজার এলাকায় পৌঁছলে র‌্যাব-১১ এ লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদের নেতৃত্বে র‌্যাবের সদস্যরা শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকায় জেলা বিএনপির সাহাবুদ্দিন সাবুর বাসভবনে ডুকে গুলি করে সাহাবুদ্দিন সাবুকে আহত করেন। খবর ছড়িয়ে পড়লে যুবদল নেতা জুয়েলের নেতৃত্বে একটি মিছিল চকবাজার থেকে সাহাবুদ্দিন সাবুর বাসভবনের দিকে যাওয়ার সময় মিছিলের উপর অতর্কিত গুলি করেন র‌্যাব সদস্যরা।

পরে ঘটনাস্থল থেকে জুয়েলের লাশ র‌্যাবের গাড়িতে তুলে নেয়া হয়। আজো তার কোন লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে শহর ও আশাপাশ এলাকায় র‌্যাব ও জামায়াত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়।

এসময় র‌্যাবের গুলিতে লাহারকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম, বিএনপি কর্মী সুমন ও শিবির কর্মী শিহাবসহ চারজন নিহত হয়।

 বৃহস্পতিবারের  সেই আন্দোলনে উদীয়মান তরুণ  লক্ষ্মীপুর সরকারি  কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক  ও লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি  মোহাম্মদ নেসার উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে পা হারিয়ে মানবতার জীবনযাপন করেন।

গত ১১ বছরেও জুয়েলের লাশ না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা হতাশায় ভুগছেন। সন্তান নিয়ে চরম কষ্টে দিন কাটছে জুয়েলের পরিবারের। তার সন্ধান না পাওয়ায় সন্তানদের স্কুলে ভর্তি ও ব্যাংক বীমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সমস্যায় পড়েছেন।

 ২০১৩ সালের ১২ই ডিসেম্বরে এর পর প্রায় ১১ বছর পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে লক্ষ্মীপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু।

মামলার আসামি হলেন— সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মহি উদ্দিন খাঁন আলমগীর, মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিকী, মেজর শহিদুল হক, মেজর জেনারেল জিয়াউল হাসান, হাসান মামুদ খন্দকার, সালাহ্ উদ্দিন টিপু, শিবলু, ইকরাম উদ্দিন, মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া, কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু, মাসুদুর রহমান, বায়েজিদ ভূঁইয়া, তানভির হায়দারসহ ৩৫ ব্যক্তির নাম এ মামলায় উল্লেখ করা হয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর সকালে বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন সাবুর বাসায় হানা দেয় র‌্যাব-১১ এর একটি দল। তখন তার বাসার দরজা ভেঙে র‌্যাব সাবুর পায়ে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়লে যুবদল নেতা জুয়েলসহ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সাবুর বাসার দিকে মিছিল নিয়ে রওনা হয়। মিছিলটি চকবাজার এলাকায় পৌঁছলে র‌্যাব সদস্যরা মিছিলে গুলি চালায়। তখন যুবদল নেতা জুয়েল গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সেখান থেকে র‌্যাব তার লাশ নিয়ে চলে যায়। দুইটি ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে ওইদিন বিক্ষুব্ধ বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে র‌্যাব -১১ এর দিনব্যাপী সংঘর্ষ বাধে। পরে বিকেলে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার এসে অবরুদ্ধ র‌্যাব সদস্যদের জেলা পুলিশ লাইন থেকে উদ্ধার করে।

জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা হাজিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা ওমর ফারুককে ২০১৪ সালে গুম করা হয়েছে।এর পর থেকে তার কোনো খোঁজ নেই। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ভোরে জেলা যুবদল নেতা ইকবাল মাহমুদ জুয়েলকে র‌্যাব গুলি করে।পরে তাকে নিয়ে যায় র‌্যাব। তার সন্ধানও পাওয়া যায়নি।এ দুই পরিবারের সদস্যরা এখন তাদের স্বজনদের ফেরত চান৷

গুম হওয়া বিএনপি নেতা ওমর ফারুকের স্ত্রী ফারভীন আক্তার বলেন, ২০১৪ সালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে আমার স্বামীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ১১ বছর তার কোনো খোঁজ নেই। শেখ হাসিনার পতনের পর আয়নাঘর থেকে অনেকেই মুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকেই বলেছেন আমার স্বামী নাকি সেখানে আছেন। আমি দ্রুত তাকে ফেরত চাই।

সাবু বলেন, অন্যায়ভাবে র‌্যাব সেদিন আমার বাসায় ঢুকে আমার ওপর নির্যাতন করে। এবং আমার পায়ে গুলি করে। দীর্ঘ ১১টি বছর আমি মামলা করতে পারিনি। দেশ-বিদেশ আমি পালিয়ে বেড়ালাম। আমি আশা করি, এ মামলার ন্যায়বিচার পাবো।

২০১৩ সালের ১২ই ডিসেম্বর প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা আড়াইটার দিকে র‌্যাবের একটি হেলিকপ্টার পুলিশ লাইনে অবতরণ করে এবং তিনটা ৮ মিনিটে ওই এলাকা ত্যাগ করে। এর আগে ওই এলাকার লক্ষ্মীপুর-চৌমুহনী মহাসড়ক অংশে জনতা র‌্যাবের চারটি গাড়ি ঘিরে ফেলেন। সন্ধ্যার দিকে র‌্যাবের গাড়িগুলো পুলিশ লাইন এলাকা ছেড়ে মান্দারী বাজারের দিকে এলে তারা আবারও জনতার অবরোধের মুখে পড়ে। এ সময় র‌্যাব ফাঁকা গুলি ছুড়ে এলাকা ত্যাগ করে।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

লক্ষ্মীপুরের উত্তরচরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির বিলুপ্ত  

১২ই ডিসেম্বর ভয়ংকর লক্ষ্মীপুর : নেসার পা হারিয়ে জীবন ফিরে পেলেও খোঁজ মেলেনি জুয়েলের আজও!

আপডেট : ১২:১৬:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

২০১৩ সাল ভয়ংকর লক্ষ্মীপুর এর সাক্ষী লক্ষ্মীপুরবাসী, রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর সকাল ৭টার দিকে জুয়েলের নেতৃত্বে যুবদল নেতা-কর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে জেলা শহরের চকবাজার এলাকায় পৌঁছলে র‌্যাব-১১ এ লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদের নেতৃত্বে র‌্যাবের সদস্যরা শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকায় জেলা বিএনপির সাহাবুদ্দিন সাবুর বাসভবনে ডুকে গুলি করে সাহাবুদ্দিন সাবুকে আহত করেন। খবর ছড়িয়ে পড়লে যুবদল নেতা জুয়েলের নেতৃত্বে একটি মিছিল চকবাজার থেকে সাহাবুদ্দিন সাবুর বাসভবনের দিকে যাওয়ার সময় মিছিলের উপর অতর্কিত গুলি করেন র‌্যাব সদস্যরা।

পরে ঘটনাস্থল থেকে জুয়েলের লাশ র‌্যাবের গাড়িতে তুলে নেয়া হয়। আজো তার কোন লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে শহর ও আশাপাশ এলাকায় র‌্যাব ও জামায়াত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়।

এসময় র‌্যাবের গুলিতে লাহারকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম, বিএনপি কর্মী সুমন ও শিবির কর্মী শিহাবসহ চারজন নিহত হয়।

 বৃহস্পতিবারের  সেই আন্দোলনে উদীয়মান তরুণ  লক্ষ্মীপুর সরকারি  কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক  ও লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি  মোহাম্মদ নেসার উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে পা হারিয়ে মানবতার জীবনযাপন করেন।

গত ১১ বছরেও জুয়েলের লাশ না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা হতাশায় ভুগছেন। সন্তান নিয়ে চরম কষ্টে দিন কাটছে জুয়েলের পরিবারের। তার সন্ধান না পাওয়ায় সন্তানদের স্কুলে ভর্তি ও ব্যাংক বীমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সমস্যায় পড়েছেন।

 ২০১৩ সালের ১২ই ডিসেম্বরে এর পর প্রায় ১১ বছর পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে লক্ষ্মীপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু।

মামলার আসামি হলেন— সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মহি উদ্দিন খাঁন আলমগীর, মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিকী, মেজর শহিদুল হক, মেজর জেনারেল জিয়াউল হাসান, হাসান মামুদ খন্দকার, সালাহ্ উদ্দিন টিপু, শিবলু, ইকরাম উদ্দিন, মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া, কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু, মাসুদুর রহমান, বায়েজিদ ভূঁইয়া, তানভির হায়দারসহ ৩৫ ব্যক্তির নাম এ মামলায় উল্লেখ করা হয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর সকালে বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন সাবুর বাসায় হানা দেয় র‌্যাব-১১ এর একটি দল। তখন তার বাসার দরজা ভেঙে র‌্যাব সাবুর পায়ে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়লে যুবদল নেতা জুয়েলসহ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সাবুর বাসার দিকে মিছিল নিয়ে রওনা হয়। মিছিলটি চকবাজার এলাকায় পৌঁছলে র‌্যাব সদস্যরা মিছিলে গুলি চালায়। তখন যুবদল নেতা জুয়েল গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সেখান থেকে র‌্যাব তার লাশ নিয়ে চলে যায়। দুইটি ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে ওইদিন বিক্ষুব্ধ বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে র‌্যাব -১১ এর দিনব্যাপী সংঘর্ষ বাধে। পরে বিকেলে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার এসে অবরুদ্ধ র‌্যাব সদস্যদের জেলা পুলিশ লাইন থেকে উদ্ধার করে।

জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা হাজিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা ওমর ফারুককে ২০১৪ সালে গুম করা হয়েছে।এর পর থেকে তার কোনো খোঁজ নেই। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ভোরে জেলা যুবদল নেতা ইকবাল মাহমুদ জুয়েলকে র‌্যাব গুলি করে।পরে তাকে নিয়ে যায় র‌্যাব। তার সন্ধানও পাওয়া যায়নি।এ দুই পরিবারের সদস্যরা এখন তাদের স্বজনদের ফেরত চান৷

গুম হওয়া বিএনপি নেতা ওমর ফারুকের স্ত্রী ফারভীন আক্তার বলেন, ২০১৪ সালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে আমার স্বামীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ১১ বছর তার কোনো খোঁজ নেই। শেখ হাসিনার পতনের পর আয়নাঘর থেকে অনেকেই মুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকেই বলেছেন আমার স্বামী নাকি সেখানে আছেন। আমি দ্রুত তাকে ফেরত চাই।

সাবু বলেন, অন্যায়ভাবে র‌্যাব সেদিন আমার বাসায় ঢুকে আমার ওপর নির্যাতন করে। এবং আমার পায়ে গুলি করে। দীর্ঘ ১১টি বছর আমি মামলা করতে পারিনি। দেশ-বিদেশ আমি পালিয়ে বেড়ালাম। আমি আশা করি, এ মামলার ন্যায়বিচার পাবো।

২০১৩ সালের ১২ই ডিসেম্বর প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা আড়াইটার দিকে র‌্যাবের একটি হেলিকপ্টার পুলিশ লাইনে অবতরণ করে এবং তিনটা ৮ মিনিটে ওই এলাকা ত্যাগ করে। এর আগে ওই এলাকার লক্ষ্মীপুর-চৌমুহনী মহাসড়ক অংশে জনতা র‌্যাবের চারটি গাড়ি ঘিরে ফেলেন। সন্ধ্যার দিকে র‌্যাবের গাড়িগুলো পুলিশ লাইন এলাকা ছেড়ে মান্দারী বাজারের দিকে এলে তারা আবারও জনতার অবরোধের মুখে পড়ে। এ সময় র‌্যাব ফাঁকা গুলি ছুড়ে এলাকা ত্যাগ করে।