স্মৃতির পাতায় রায়পুরের প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ সরদার
-
ডেস্ক রিপোর্ট :
-
আপডেট :
০৫:৫০:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
-
৩
জন পড়েছেন
লক্ষ্মীপুর জেলার, রায়পুর উপজেলারপ শ্চিমাঞ্চলবাসীর নিকট প্রয়াত ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান সরদার একটি নাম নয়,এটি একটি গল্প,একটি অধ্যায়, মফস্বলের রাজনীতিবিদদের প্রেরনা,ছন্নছাড়া তৃনমূলের আশা, সমাজের অবহেলিত মানুষের বটবৃক্ষ,অনাথ শিশুদের বাসস্থানের ঠিকানা, হাজারো মানুষের স্বপ্ন।
তৎকালীন নোয়াখালী জেলা বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার হাজী তোরাব আলী সরদার ও দিলজান বিবির দম্পতির ঘরে ১৯৩০ সালে কোন এক সকাল- সন্ধ্যার সন্ধিক্ষণে জন্ম নেন চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান সরদার।
শৈশবে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন পরিবার ও গৃহ শিক্ষকের নিকট থেকে। পরবর্তীতে স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পড়াশোনা শেষ করে বাবার কৃষি- সম্পদ, ব্যবসা দেখাশোনা করেন।
এই সময়ে সমাজের অবহেলিত মানুষের পাশে দাড়িয়ে নিজেকে মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করেন।
পরবর্তীতে জড়িয়ে যান মফস্বলের রাজনীতীতে।এখান থেকে নিজেকে তুলে ধরেন এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তি হিসেবে। মফিজুর রহমান ছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠীত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একনিষ্ঠ নিবেদিত কর্মী। তিনি ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি ও থানা কমিটির সদস্য ছিলেন।
কর্ম ও রাজনৈতিক জীবনে যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানে স্বর্ণ ফলিয়েছেন। নেতা হিসেবে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন পুরো জেলায়।
তার নিমন্ত্রণে একাধিক বার চর আবাবিল ইউনিয়নে জনসমাবেশে করেন দেশনেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সফরে এসেছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও তার স্ত্রী হাসনা মওদুদ।
বর্তমান ১ নং উত্তর আবাবিল ইউনিয়ন ও ৯ নং দক্ষিণ চর আবাবিল ইউনিয়ন একত্রে ছিল বৃহত্তম ১ নং উত্তর চর আবাবিল ইউনিয়ন।
মফিজুর রহমান ১ নং উত্তর চর আবাবিল ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হিসেবে প্রথম নির্বাচন করেন ১৯৭২ সালের দিকে।
নির্বাচনে ইউপি সদস্য হিসেবে মনোনীত হন। ইউপি সদস্য হিসেবে দীর্ঘ দুই বছর দায়িত্ব পালন করা সময়কালে তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রয়াত চাঁন মিয়া মুন্সী পবিত্র হজ্বের উদ্দেশ্য সৌদি আরবে যান।
সততা, নিষ্ঠা,দিয়ীত্বশীলতা, বিচক্ষণতা,যোগ্যতা, দূরদর্শিতা বিবেচনা করে ইউপি সদস্য মফিজুর রহমান কে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব প্রদান করেন। তৎকালীন চেয়ারম্যান হজ্ব থেকে ফিরে তার দায়িত্বশীলতা মুগ্ধ হয়ে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান।এখান থেকে তার জীবনের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা।
১৯৭৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়াই করে বাঁধভাঙা জনপ্রিয়তা নিয়ে নতুন পরিচয়ে আস্বনীত হন চেয়ারম্যান হিসেবে।
চেয়ারম্যান হিসেবে তার রয়েছে ব্যাপক অবদান।সড়ক পুনঃনির্মাণ, সালিশ বানিজ্য বন্ধ,ধান চাষে সেচ প্রকল্প প্রসার,অভ্যন্তরীণ বিবাদ- কোন্দল নিরসন, অসহায়দের সাহয্য করা, অক্ষম বাবা বিবাহ যোগ্য মেয়েদের নিজ অর্থায়নে বিয়ের ব্যবস্থা,দখলদারিত্ব প্রতিরোধ, দুর্বলদের আঘাত না করা, নিরাপত্তার ব্যবস্থা, প্রবীণদের পুর্নবাসন, সংখ্যা লঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে সদা জাগ্রত।
এছাড়া দরিদ্র বাবার মেধাবী সম্ভাবনাময় সন্তানদের পড়াশোনা ব্যবস্থা করা নিজ অর্থায়নে। তার মধ্যে একজন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত অধ্যাপক ডঃ শাহজালাল।
মফিজুর রহমানের অর্থ-বৃত্তে হয়েছেন অনেকে আজ শিল্পপতি, আলিশান গাড়ি, বিলাস বহুল বাড়ির মালিক।
চেয়ারম্যান হিসেবে মফিজুর রহমান সরদার সম্পর্কে তৃনমুলের অভিমত:
সম্প্রতি আমি ইউনিয়নের ক্যম্পেরহাট বাজারে চায়ের দোকানে বসে আছি, হঠাৎ বয়োবৃদ্ধ একটি লোক আমার কথা শুনে জিজ্ঞেস করল বাড়ির ঠিকানা আমি বললাম: লোকটি আবেগে- আপ্লুত হয়ে বলল বাবা , চেয়ারম্যান পরিবার সম্পর্কে আমাকে কিছু বলবে? বড় মিয়ার স্ত্রী থাকে কোথায়? বাবা ওনাদের মতো মানুষ হয় না? মনে হয় আর দেখব না জীবদ্দশায় এমন চেয়ারম্যান।
( উল্লেখ্য চেয়ারম্যান মফিজুর রহমানের বড় ছেলে সর্দার এমএ জলিল কে সকলে বড় মিয়া নামে ডাকত, তিনি ইউনিয়ন বিএনপি’ র যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিগত কয়েক বছর আগে না ফেরার দেশে চলে গেছেন)
ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের সনাতনী ধর্মের কয়েকজনের সাথে কথা বললাম চেয়ারম্যান সম্পর্কে,তারা বলল তার সময়ে আমরা মায়ের কোলের ন্যায় নিরাপদ ছিলাম। তিনি ছিলেন অন্যন্য এক ব্যক্তি এই অঞ্চলের জন্য তুলনাহীন। তার মাজে ছিল না কোন ভেদাভেদ।
চেয়ারম্যান সম্পর্কে বলতে গিয়ে শতবর্ষী বয়সের এক বৃদ্ধ জানান, আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না তবে এতটুকু বলবো, আমার দেখা রায়পুরের বৃহত্তম জানাযা ছিল চেয়ারম্যান মফিজুর রহমানের এখান থেকে বুজে নেও।
ইউনিয়নের দিঘলদী নামে একটি গ্ৰামে যাই,গ্ৰামবাসীর সাথে কথা বলি জানতে চাইলাম মফিজুর রহমান সম্পর্কে এলাকাবাসী জানায় তার কাছ থেকে ইনসাফ মূলক যে বিচার পাওয়া যেত, তা বিরল। তিনি দল মত নির্বিশেষে সকলের প্রতি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল।
হায়দরগঞ্জ বাজার ইউনিয়নের প্রানকেন্দ্র একান্ত কথা বললাম কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে, আবেগ আপ্লুত হয়ে কথা বলতে পারছে না। কান্না থামিয়ে আমাকে বলল ভাই, তাদের মত লোক হয় না। আপনাকে আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।গ্ৰামবাসীর জন্য তার দরজা কখনো বন্ধ হতো না। যেকোনো মুহূর্তে ডাকলে সাড়া দিতেন জনগণের ডাকে। চেয়ারম্যান নয় মফিজুর রহমান সরদার ব্যাক্তি হিসেবে ছিলেন অসাধারণ, সর্বদা অমায়িক হাসিমুখী একজন অন্যন্য ব্যক্তি।
মফিজুর রহমানের নিজ গ্ৰামবাসীর অভিমত জানতে চাইলে, তারা জানান তিনি ছিলেন এই অঞ্চলের একটি রত্ম, বটবৃক্ষ, আমাদের মহান এক অভিভাবক। রায়পুর পশ্চিমাঞ্চলের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের অধিকারী মহান ক্ষণজন্মা ব্যাক্তিটি ২০০৬ সালে ১৪ জুলাই পুরো জনপদকে কাঁদিয়ে ইহকালের সফর শেষ করে পরপারে পাড়ি জমান।
সম্পাদনায়:মোঃ কামরুল হাসান
ট্যাগ :