লক্ষ্মীপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম আরিফ গ্রেপ্তার:রাষ্ট্রদ্রোহ ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা
লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আলী হাসান মোহাম্মদ আরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) রাতে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মুন্নাফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, ঢাকার রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় আরিফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুপুরে তাকে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের মিয়ার বেড়ি জোনাল অফিস এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী।
পরে সদর থানায় সোপর্দ করা হয়। তিনি ওই জোনাল অফিসের দায়িত্বে ছিলেন।
পল্লী বিদ্যুৎ সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ডিজিএম আরিফকে বরখাস্ত করে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার আরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি বাদি হয়ে ঢাকার খিলক্ষেত থানায় আরিফুল ইসলামসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ ও তৎসম আইনে মামলা দায়ের করেন।
দায়েরকৃত ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার বাদী আরশাদ কুষ্টিয়া জেলা সদরের জুগিয়া গ্রামের মৃত আকবর হোসেনের ছেলে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আসাদুজ্জামান খানের মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মুন্নাফ বলেন, গ্রেপ্তার আরিফুল ইসলামকে ক্ষিলক্ষেত থানার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, অভিন্ন সার্ভিস কোড এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগের দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত কয়েক মাস থেকে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে আসছে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত ‘ব্ল্যাক আউট’ ঘোষণা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে গ্রাহকরা। পরে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়। আরিফুল ইসলাম লক্ষ্মীপুরে আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন বলে জানা গেছে।
দেশের বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগে রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় দায়ের করা দুটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) ছয় কর্মকর্তার তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) তাদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর খিলক্ষেত থানার পরিদর্শক আশিকুর রহমান দেওয়ান তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরী তাদের তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগে বৃহস্পতিবার খিলক্ষেত থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড খিলক্ষেত থানার পরিচালক প্রশাসন (আইন শাখা) আরশাদ হোসেন। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসামিরা হলেন- মুন্সীগঞ্জের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) রাজন কুমার দাস, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নবীনগরের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া, কুমিল্লার ডিজিএম দীপক কুমার সিংহ, মাগুরার শ্রীপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম রাহাত, নেত্রকোনার বারহাট্টা পল্লী বিদ্যুতের এজিএম মনির হোসেন ও সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর বেলাল হোসেন। এদের মধ্যে বেলাল হোসেন এক মামলার আসামি। অপর পাঁচজন আরেক মামলার আসামি।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, চলতি বছর ২৮ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী পরস্পর যোগসাজশে, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এবং বিগত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালীদের মদদে ষড়যন্ত্র করে পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছেন। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমে লিপ্ত আছেন তারা। তাদের এই ধরনের কার্যকলাপ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চরমভাবে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টার শামিল। তাদের এসব কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ ও বোর্ডের কর্মকর্তাদের সম্মানহানি করেছে। একইসঙ্গে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অচল করে দিয়ে জনমনে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারকে চরমভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা হয়েছে- যা দেশদ্রোহিতার শামিল।
ট্যাগ :