মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ :
লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়ে সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভাঙ্গন আতঙ্কে নদীতীরবর্তী জনগন, ফসলি জমি বৃষ্টিতে ও ঝড়ো বাতাসে তলিয়ে যেয়ে কৃষক ও গাছ পালা ভেঙ্গে ভোগান্তিতে হাজার হাজার জনগন। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা উপকূলীয় এলাকায় সোমবার (২৪ অক্টোবর) মাঝারি বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। নদীতে জোয়ারের তীব্র স্রোত ও ভাটার টানে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় কষ্ট বেড়েছে মানুষের। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে আশানুরূপ মানুষ আসেনি দুপুর পর্যন্ত । গবাদিপশু চুরির ভয়ে বাড়িঘর ছাড়তে অনাগ্রহ চরের বাসিন্দাদের।অনেকেই আবার গবাদিপশু নিয়ে এসেছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে মোমবাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে দুপুর থেকে লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল নৌ রুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপদ স্থানে এনে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন।
কমলনগর উপজেলার মতিরহাট, নাসিরগঞ্জ, নবীগঞ্জ এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে নদী শান্ত ছিল। বৃষ্টির কারণে হাট-বাজারে মানুষের উপস্থিতি কম ছিল। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হননি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। নদী তীরবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল না। মতিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও উত্তর পশ্চিম চরমার্টিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কেউ আসেনি।
অন্যদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেঘনায় জোয়ার আসা শুরু করে। তীব্র স্রোত নিয়ে জোয়ারের পানি নদীর সংযোগখালগুলোতে ঢুকেছে। এর সঙ্গে বাতাসের গতিবেগ ও বৃষ্টি বেড়েছে। জোয়ারে প্রায় দুই ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সন্ধ্যায় নদীতে ভাটা নামে। এ ভাটায় ভাঙন বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কমলনগরের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষজন আসেনি বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা উপকূলীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনার জন্য মাইকিং করছেন।
মজুচৌধুরীর হাট ফেরিঘাটের প্রান্তিক সহকারী রেজাউল করিম বলেন, আবহাওয়া অফিস ও ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে।
লক্ষ্মীপুর সদরের ইউএনও ইমরান হোসেন জানান,সন্মানিত জেলা প্রশাসক, লক্ষ্মীপুর এর নির্দেশনা মোতাবেক সাইক্লোন শেল্টার চালু করা হয়েছে গতকাল থেকেই। নদীর তীরবর্তী ও বাড়িঘর ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এমন লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার কাজ করছে একাধিক টিম।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অঞ্জন দাশ ঘূর্ণিঝড় পূর্ববর্তী পরিস্থিতিতে তিনি সরেজমিন দক্ষিণ চরবংশী সাইক্লোন শেল্টারে অবস্থান করছেন বলে নিশ্চিত করেন। এই সময়ে তিনি সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেয়ার জন্য সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রেড ক্রিসেন্ট ও সামাজিক সংগঠনকে সম্পৃক্ত করে রায়পুরের তিনটি ইউনিয়ন দক্ষিণ চরবংশী, উত্তর চরবংশী, উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়নের সাইক্লোন শেল্টারে খাবারের ও জেনারেটর এর ব্যবস্থা করেছেন বলে অবহিত করেন।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষজন আসা শুরু করেছে বিকাল থেকেই। আলোর জন্য মোমবাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে সরবরাহের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম শান্তুনু চৌধুরী বলেন, উপজেলার চর আবদুল্লাহ মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন। সেখানে প্রায় ৪০-৫০টি পরিবার রয়েছে। তাদেরকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ উদ্ধারকর্মীরা কাজ করছেন সকাল থেকেই। মাইকিং করে সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য বলা হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, দুর্গম চর থেকে দ্রুত মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়কালীন চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিম ও শুকনো খাবার প্রস্তুত রয়েছে। নদী এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগর উপজেলা নদী বেষ্টিত। এই চার উপজেলার মানুষকে ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সাইক্লোন শেল্টারসহ ১৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়কালীন ব্যয়ের জন্য ৫ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ২৬০ মেট্রিক টিন চাল মজুত রয়েছে। এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৬০০ প্যাকেট বিস্কুট ইতোমধ্যে উপজেলাভিত্তিক বরাদ্দ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৬৬টি মেডিকেল টিমের সঙ্গে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৩ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক ইতোমধ্যে মাঠে কাজ করছেন। জেলা ও উপজেলার সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কর্মস্থল এলাকায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।