ঢাকা ০২:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লক্ষ্মীপুর আদালতে বন্ধুকে খুনের দায়ে তিন বন্ধুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড

মাহমুদুর রহমান মনজু, স্টাফ রিপোর্টার :

একটি মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনকে কেন্দ্র করে বন্ধুদের হাতে খুন হয়েছে মেহেরাজ হোসেন (১৯) নামে এক যুবক। এ মামলায় লক্ষ্মীপুরের আদালত তিন বন্ধুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে। একই সাথে তাদের প্রত্যেকের ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, নোয়াখালীর সুধারাম থানার উত্তর হুগলি গ্রামের মো. ইউসুফের ছেলে আবদুল্যাহ আল মামুন (২২), একই থানাধীন মাতাহাপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সজিব আহম্মদ (২৬) ও রওয়াল দিয়া গ্রামের সহিদুল ইসলামের ছেলে তানভীর হোসেন বিজয় (২০)।

মামলার বাদি নিহত মেহেরাজের বড় ভাই মাহবুবুর রহমান (২৯)। তিনি নোয়াখালীর সুধারাম থানাধীন উত্তর হুগলি গ্রামের শাহজাহানের ছেলে।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বেলা ১১ টার দিকে জেলা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।

আদালতের পাবলিক পসিকিউটর (পিপি) জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, আসামীরা ভিকটিম মেহেরাজকে হত্যা করে মৃতদেহ বস্তাবন্দি করে পানিতে ফেলে দেয়। আদালতের আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় আদালত তাদের তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে। রায়ের সময় আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিল। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে রায়ের পর আদালতে উপস্থিত দণ্ডিতদের স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন জানিয়ে এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবার কথা জানান।

মামলার এজাহার সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী থেকে ভিকটিম মেহেরাজ নিখোঁজ হয়। এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারী মেহেরাজের ভাই মাহবুবুর রহমান নোয়াখালীর সুধারাম থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করেন। পরদিন ২৮ ফেব্রুয়ারী লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চরশাহী ইউনিয়নের পূর্ব সৈয়দপুর গ্রামের টক্কার পোল ব্রীজের নীচ থেকে মেহেরাজের বস্তাবন্দি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় দাশেরহাট পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই মাহবুব ২ মার্চ বাদি হয়ে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে হত্যাকারী কারো নাম উল্লেখ না করলেও মেহেরাজের বন্ধু মামুনের নাম সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে আবদুল্যাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এতে সে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।

২০২০ সালের ৩০ মে চন্দ্রগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মফিজ উদ্দিন আদালত হত্যা মামলাটির চুড়ান্ত প্রতিবেন দেন।

এতে তিনি উল্লেখ করেন, বৃষ্টি নামের একটি মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয় নোয়াখালীর উদয় সাধুর হাটের কাপড় দোকানের কর্মচারী তানভীর হোসেন বিজয়ের সাথে। একই মেয়ের সাথে সম্পর্ক তৈরী করতে চায় হত্যাকাণ্ডের শিকার মেহেরাজও। এতে তানভীর তার অন্য দুই বন্ধু আবদুল্যা আল মামুন ও সজীব আহাম্মদের সাথে মেহেরাজকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এজন্য একজনকে ৩০ হাজার টাকা করে দেওয়ার চুক্তি হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারী মামুন তার বন্ধু মেহেরাজকে লক্ষ্মীপুরের দাশেরহাট থেকে একটি মোটরসাইকেল ভাড়া করতে বলে। ভাড়াকরা মোটরসাইকেলটি নিয় ওইদিন তারা বিভিন্নস্থানে ঘোরাফেরা করেছে। বিকেলে তানভীর নোয়াখালীর উদয় সাধুর হাট থেকে একটি বস্তা, নেশাজাতীয় দ্রব্য ও স্পিড কিনে নেয়। পরে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে তানভীর, সজিব, মেহেরাজ ও মামুন মোটরসাইকেল যোগে মুন্সি তালুক গ্রামে আসে। সেখানে তারা সকলে স্পিড পান করে। তবে নেশা জাতীয় দ্রব্য মেশানো স্পিডটি মেহেরাজকে দেওয়া হয়। এতে মেহেরাজ অজ্ঞান হয়ে পড়লে তানভীর মেহেরাজের কোমরের বেল্ট খুলে তার গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে তার মৃতদেহটি একটি বস্তায় ভরে তানভীর এবং মামুন সেটিকে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে পাশ্ববর্তী লক্ষ্মীপুরের চরশাহী ইউনিয়নের টক্কার পোল ব্রীজের উপর নিয়ে এসে খালে ফেলে দেয়।

ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত তিনজনকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। আদালত পুলিশের প্রতিবেদন, আসামীর জবানবন্দি এবং সাক্ষ্য, প্রমানের ভিত্তিতে অভিযুক্তরা দোষী প্রমানিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

লক্ষ্মীপুরের উত্তরচরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির বিলুপ্ত  

লক্ষ্মীপুর আদালতে বন্ধুকে খুনের দায়ে তিন বন্ধুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড

আপডেট : ০৭:১০:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর ২০২২

মাহমুদুর রহমান মনজু, স্টাফ রিপোর্টার :

একটি মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনকে কেন্দ্র করে বন্ধুদের হাতে খুন হয়েছে মেহেরাজ হোসেন (১৯) নামে এক যুবক। এ মামলায় লক্ষ্মীপুরের আদালত তিন বন্ধুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে। একই সাথে তাদের প্রত্যেকের ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, নোয়াখালীর সুধারাম থানার উত্তর হুগলি গ্রামের মো. ইউসুফের ছেলে আবদুল্যাহ আল মামুন (২২), একই থানাধীন মাতাহাপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সজিব আহম্মদ (২৬) ও রওয়াল দিয়া গ্রামের সহিদুল ইসলামের ছেলে তানভীর হোসেন বিজয় (২০)।

মামলার বাদি নিহত মেহেরাজের বড় ভাই মাহবুবুর রহমান (২৯)। তিনি নোয়াখালীর সুধারাম থানাধীন উত্তর হুগলি গ্রামের শাহজাহানের ছেলে।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বেলা ১১ টার দিকে জেলা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।

আদালতের পাবলিক পসিকিউটর (পিপি) জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, আসামীরা ভিকটিম মেহেরাজকে হত্যা করে মৃতদেহ বস্তাবন্দি করে পানিতে ফেলে দেয়। আদালতের আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় আদালত তাদের তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে। রায়ের সময় আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিল। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে রায়ের পর আদালতে উপস্থিত দণ্ডিতদের স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন জানিয়ে এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবার কথা জানান।

মামলার এজাহার সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী থেকে ভিকটিম মেহেরাজ নিখোঁজ হয়। এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারী মেহেরাজের ভাই মাহবুবুর রহমান নোয়াখালীর সুধারাম থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করেন। পরদিন ২৮ ফেব্রুয়ারী লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চরশাহী ইউনিয়নের পূর্ব সৈয়দপুর গ্রামের টক্কার পোল ব্রীজের নীচ থেকে মেহেরাজের বস্তাবন্দি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় দাশেরহাট পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই মাহবুব ২ মার্চ বাদি হয়ে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে হত্যাকারী কারো নাম উল্লেখ না করলেও মেহেরাজের বন্ধু মামুনের নাম সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে আবদুল্যাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এতে সে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।

২০২০ সালের ৩০ মে চন্দ্রগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মফিজ উদ্দিন আদালত হত্যা মামলাটির চুড়ান্ত প্রতিবেন দেন।

এতে তিনি উল্লেখ করেন, বৃষ্টি নামের একটি মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয় নোয়াখালীর উদয় সাধুর হাটের কাপড় দোকানের কর্মচারী তানভীর হোসেন বিজয়ের সাথে। একই মেয়ের সাথে সম্পর্ক তৈরী করতে চায় হত্যাকাণ্ডের শিকার মেহেরাজও। এতে তানভীর তার অন্য দুই বন্ধু আবদুল্যা আল মামুন ও সজীব আহাম্মদের সাথে মেহেরাজকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এজন্য একজনকে ৩০ হাজার টাকা করে দেওয়ার চুক্তি হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারী মামুন তার বন্ধু মেহেরাজকে লক্ষ্মীপুরের দাশেরহাট থেকে একটি মোটরসাইকেল ভাড়া করতে বলে। ভাড়াকরা মোটরসাইকেলটি নিয় ওইদিন তারা বিভিন্নস্থানে ঘোরাফেরা করেছে। বিকেলে তানভীর নোয়াখালীর উদয় সাধুর হাট থেকে একটি বস্তা, নেশাজাতীয় দ্রব্য ও স্পিড কিনে নেয়। পরে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে তানভীর, সজিব, মেহেরাজ ও মামুন মোটরসাইকেল যোগে মুন্সি তালুক গ্রামে আসে। সেখানে তারা সকলে স্পিড পান করে। তবে নেশা জাতীয় দ্রব্য মেশানো স্পিডটি মেহেরাজকে দেওয়া হয়। এতে মেহেরাজ অজ্ঞান হয়ে পড়লে তানভীর মেহেরাজের কোমরের বেল্ট খুলে তার গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে তার মৃতদেহটি একটি বস্তায় ভরে তানভীর এবং মামুন সেটিকে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে পাশ্ববর্তী লক্ষ্মীপুরের চরশাহী ইউনিয়নের টক্কার পোল ব্রীজের উপর নিয়ে এসে খালে ফেলে দেয়।

ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত তিনজনকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। আদালত পুলিশের প্রতিবেদন, আসামীর জবানবন্দি এবং সাক্ষ্য, প্রমানের ভিত্তিতে অভিযুক্তরা দোষী প্রমানিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন।