ঢাকা ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লক্ষ্মীপুরে সুপারির বাম্পার ফলন, লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে যাচ্ছে

oplus_0

    লক্ষ্মীপুরে ৫০০ কোটি টাকার সুপারির বাজার, দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। বিভিন্ন হাটবাজারে পাকা সুপারির জমজমাট বেচাকেনা চলছে। বাজারগুলোতে ভিড় করছেন ব্যবসায়ীরা। এবার সুপারির দাম গত বছরের তুলনায় বেশি। এতে ন্যায্য দাম পেয়ে  খুশি  স্থানীয় চাষিরা। চলতি বছর সুপারি বাজারমূল্য ৫০০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। তথ্যটি জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সরেজমিন দেখা যায়, স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে পাকা সুপারি কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সুপারি কিনে মজুত করছেন। তারা বেশির ভাগ সুপারি পানিতে ভিজিয়ে রাখছেন। কারণ মৌসুম শেষে পানসেবীদের কাছে ভেজা সুপারির কদর বেড়ে যায়।

এসব উৎপাদিত সুপারির একটি বড় অংশ পান খাওয়ায় ব্যবহার হলেও আর একটি অংশ দেশের বিভিন্ন ওষুধ ও কেমিক্যাল কারখানায় ব্যবহার হয়। বাজারে প্রতি পোন (৮০টি সুপারিতে এক পোন) সুপারি ১৪০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরে বন্যায় ধান, সবজি ও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ চরম অর্থসংকটে ভুগছিল। এর মধ্যে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সুপারি দারুণভাবে ভূমিকা রাখছে। সুপারি বিক্রি করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন স্থানীয় চাষিরা। গত বছরের তুলনায় সুপারির দাম প্রতি পোনে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি পাওয়ায় খুশি চাষিরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, লক্ষ্মীপুরে চলতি বছর ৬ হাজার  ৩৬০ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টর সুপারি বাগানে আড়াই থেকে ৩ টন শুকনো সুপারি উৎপাদন হবে। এর বাজারমূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি হবে।

জেলার সদর ও রায়পুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সুপারি চাষ হয়। প্রতিটি বাড়ির আঙিনা ও পাশের জমিতে কমবেশি সুপারি গাছ রয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুরের দালাল বাজার, রসুলগঞ্জ, রায়পুর, হায়দরগঞ্জ, চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারি, দত্তপাড়া ও দিঘলি বাজারে সবচেয়ে বেশি সুপারি কেনাবেচা হয়। সদর উপজেলার পাঁচপাড়া গ্রামের সুপারির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চৌধুরী মিয়া বলেন, ‘এবার সুপারির ফলন অন্য বছরের তুলনায় কম হলেও দাম বেশি পাওয়ায় চাষিরা খুশি। এবার ব্যবসা গত বছরের তুলনায় অনেক ভালো হচ্ছে।’

মান্দারি বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী চাঁদ মিয়া জানান, তিনি চাষিদের কাছ থেকে সুপারি কিনে রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীদের কাছে ট্রাকে করে পাঠিয়ে থাকেন। এবার বিভিন্ন জেলায় সুপারির চাহিদা বেশি এবং দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। 

সদর উপজেলার দাউদপুর গ্রামের সুপারি চাষি জাহাঙ্গীর আলম জানান, বন্যায় তার চাষ করা আউশ-আমন ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। পোলট্রি ফার্ম পানিতে তলিয়ে লাখ টাকার মুরগি মারা গেছে। এতে তিনি চরম অর্থসংকটে পড়েন। বর্তমানে সুপারি বিক্রি করে তিনি পরিবারের অর্থসংকট দূর করতে সক্ষম হয়েছেন।

মনোহরপুর গ্রামের বাবুল জানান, দিনমজুরি করে চারজনের সংসার চালান। বন্যার কারণে তিনি পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনাহারে জীবনযাপন করেছেন। বর্তমানে তার বাড়ির আঙিনায় গাছে অনেক সুপারি ধরেছে। ওই সুপারি বিক্রি করে অনেক টাকা আয় হচ্ছে। এতে পরিবার অর্থসংকট দূর হয়েছে।

সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘সুপারি একটি লাভজনক চাষ। একবার সুপারি গাছ লাগানোর পর ৪০ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সুপারি গাছে খুব বেশি সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। পতিত ও উচ্চজমিতে সুপারি চাষ হয়। সুপারি গাছ পানিসহিষ্ণু হওয়ায় এবারের বন্যায় সুপারি বাগানের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। লক্ষ্মীপুরে মৌসুমে অনেক বেকার যুবক সুপারির ব্যবসা করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। গ্রাম থেকে সুপারি কিনে বাজারে বিক্রি করলে প্রতি পোন সুপারি বিক্রি করে ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ হয়।

 তিনি আরও বলেন, ভিয়েতনামসহ বিদেশি উন্নত জাতের সুপারি চাষ করা সম্ভব হলে উৎপাদন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

 লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি বিপণন  কর্মকর্তা মোঃ মনির হোসেন বলেন, লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়ে উৎপাদিত সুপারি দেশ ছাড়িয়ে এখন বিদেশেও বিখ্যাত। বন্যা না থাকলে সুপারির আরো ভালো ফলন হতো। 

ট্যাগ :

‘দাতুক’ খেতাবধারী এক বাংলাদেশি গ্রেফতার

লক্ষ্মীপুরে সুপারির বাম্পার ফলন, লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে যাচ্ছে

আপডেট : ০৫:২৪:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

    লক্ষ্মীপুরে ৫০০ কোটি টাকার সুপারির বাজার, দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। বিভিন্ন হাটবাজারে পাকা সুপারির জমজমাট বেচাকেনা চলছে। বাজারগুলোতে ভিড় করছেন ব্যবসায়ীরা। এবার সুপারির দাম গত বছরের তুলনায় বেশি। এতে ন্যায্য দাম পেয়ে  খুশি  স্থানীয় চাষিরা। চলতি বছর সুপারি বাজারমূল্য ৫০০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। তথ্যটি জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সরেজমিন দেখা যায়, স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে পাকা সুপারি কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সুপারি কিনে মজুত করছেন। তারা বেশির ভাগ সুপারি পানিতে ভিজিয়ে রাখছেন। কারণ মৌসুম শেষে পানসেবীদের কাছে ভেজা সুপারির কদর বেড়ে যায়।

এসব উৎপাদিত সুপারির একটি বড় অংশ পান খাওয়ায় ব্যবহার হলেও আর একটি অংশ দেশের বিভিন্ন ওষুধ ও কেমিক্যাল কারখানায় ব্যবহার হয়। বাজারে প্রতি পোন (৮০টি সুপারিতে এক পোন) সুপারি ১৪০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরে বন্যায় ধান, সবজি ও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ চরম অর্থসংকটে ভুগছিল। এর মধ্যে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সুপারি দারুণভাবে ভূমিকা রাখছে। সুপারি বিক্রি করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন স্থানীয় চাষিরা। গত বছরের তুলনায় সুপারির দাম প্রতি পোনে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি পাওয়ায় খুশি চাষিরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, লক্ষ্মীপুরে চলতি বছর ৬ হাজার  ৩৬০ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টর সুপারি বাগানে আড়াই থেকে ৩ টন শুকনো সুপারি উৎপাদন হবে। এর বাজারমূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি হবে।

জেলার সদর ও রায়পুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সুপারি চাষ হয়। প্রতিটি বাড়ির আঙিনা ও পাশের জমিতে কমবেশি সুপারি গাছ রয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুরের দালাল বাজার, রসুলগঞ্জ, রায়পুর, হায়দরগঞ্জ, চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারি, দত্তপাড়া ও দিঘলি বাজারে সবচেয়ে বেশি সুপারি কেনাবেচা হয়। সদর উপজেলার পাঁচপাড়া গ্রামের সুপারির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চৌধুরী মিয়া বলেন, ‘এবার সুপারির ফলন অন্য বছরের তুলনায় কম হলেও দাম বেশি পাওয়ায় চাষিরা খুশি। এবার ব্যবসা গত বছরের তুলনায় অনেক ভালো হচ্ছে।’

মান্দারি বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী চাঁদ মিয়া জানান, তিনি চাষিদের কাছ থেকে সুপারি কিনে রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীদের কাছে ট্রাকে করে পাঠিয়ে থাকেন। এবার বিভিন্ন জেলায় সুপারির চাহিদা বেশি এবং দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। 

সদর উপজেলার দাউদপুর গ্রামের সুপারি চাষি জাহাঙ্গীর আলম জানান, বন্যায় তার চাষ করা আউশ-আমন ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। পোলট্রি ফার্ম পানিতে তলিয়ে লাখ টাকার মুরগি মারা গেছে। এতে তিনি চরম অর্থসংকটে পড়েন। বর্তমানে সুপারি বিক্রি করে তিনি পরিবারের অর্থসংকট দূর করতে সক্ষম হয়েছেন।

মনোহরপুর গ্রামের বাবুল জানান, দিনমজুরি করে চারজনের সংসার চালান। বন্যার কারণে তিনি পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনাহারে জীবনযাপন করেছেন। বর্তমানে তার বাড়ির আঙিনায় গাছে অনেক সুপারি ধরেছে। ওই সুপারি বিক্রি করে অনেক টাকা আয় হচ্ছে। এতে পরিবার অর্থসংকট দূর হয়েছে।

সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘সুপারি একটি লাভজনক চাষ। একবার সুপারি গাছ লাগানোর পর ৪০ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সুপারি গাছে খুব বেশি সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। পতিত ও উচ্চজমিতে সুপারি চাষ হয়। সুপারি গাছ পানিসহিষ্ণু হওয়ায় এবারের বন্যায় সুপারি বাগানের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। লক্ষ্মীপুরে মৌসুমে অনেক বেকার যুবক সুপারির ব্যবসা করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। গ্রাম থেকে সুপারি কিনে বাজারে বিক্রি করলে প্রতি পোন সুপারি বিক্রি করে ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ হয়।

 তিনি আরও বলেন, ভিয়েতনামসহ বিদেশি উন্নত জাতের সুপারি চাষ করা সম্ভব হলে উৎপাদন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

 লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি বিপণন  কর্মকর্তা মোঃ মনির হোসেন বলেন, লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়ে উৎপাদিত সুপারি দেশ ছাড়িয়ে এখন বিদেশেও বিখ্যাত। বন্যা না থাকলে সুপারির আরো ভালো ফলন হতো।