প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪, ৯:৫২ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জানুয়ারী ১৩, ২০২৪, ৬:২৭ পি.এম
লক্ষ্মীপুরে ’ভূমিদস্যু’ – ‘মামলাবাজ’ মমিনের জাল দলিলে দিশেহারা ভূক্তভোগীরা।
লক্ষ্মীপুরে অর্ধশতাধিক মানুষের জমি জাল দলিলের মাধ্যমে দখল করে রাখার অভিযোগ উঠেছে মমিন উল্যা নামে এক ‘ভূমিদস্যুর’ বিরুদ্ধে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে কথা বললেই মামলার আসামি হতে হচ্ছে গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও এলাকাবাসীকে। এতে স্থানীয়ভাবে ভূমিদস্যুর পাশাপাশি মমিন ‘মামলাবাজ’ হিসেবেও পরিচিত।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের মিয়ারবেড়ি বাজারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অর্ধশতাধিক ভূক্তভোগী পরিবার তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেছেন। পরে বাজারে তারা মমিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
খবর পেয়ে ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি মিয়ারবেড়ি বাজার পরিদর্শন করে ভূক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতা মোক্তার হোসেন বিপ্লব, লাহারকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম মুরাদ, ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শিপন, মিয়ারবেড়ি বাজার পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি আবুল হাশেম, সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন, সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন, ভুক্তভোগী নুর আলম, মো. মোস্তফা, আলী আজম, এডভোকেট আশিকুর রহমান ও দেলোয়ারা বেগমসহ অর্ধশতাধিক ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযুক্ত মমিন ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব চরমনসা গ্রামের সাফি উল্লাহর ছেলে। স্থানীয় মিয়ারবেড়ি বাজারে তার একটি দোকান রয়েছে।
ভূক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অর্ধশতাধিক পরিবার মমিনের কাছে জিম্মি। বিভিন্নভাবে আদালতকে ভুল বুঝিয়ে ডিগ্রি নিয়ে তিনি মানুষের প্রায় ৫০ একর জমি দখল করে রেখেছেন। মিয়ার বেড়ি বাজারে দোকানঘর কিনতে না পেরে তিনি বাজার কমিটির লোকজনসহ বিভিন্নজনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। এসব ঘটনায় স্থানীয় গন্যমান্যরা কথা বললে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন মমিন।
ভূক্তভোগী দেলোয়ারা বেগম বলেন, মিয়ারবেড়ি বাজারে আমি ভিটাসহ ৭টি দোকানঘর ক্রয় করি। ওই ঘরগুলো মমিন জোরপূর্বক দখল করতে যায়। দখলে নিতে না পেরে তিনি ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় তিনি আদালতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মামলা করেছেন।
ভূক্তভোগী লক্ষ্মীপুর জজ কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট আশিকুর রহমান বলেন, মমিন মামলাবাজ ও ভূমিদস্যু। আদালতকে ভুল বুঝিয়ে বিভিন্ন ডিগ্রি নিয়ে মানুষের জমি দখল তার অন্যতম কাজ। আমাদের ১ একর ৭১ শতাংশ জমির জাল দলিল করে তিনি দখল করার চেষ্টা করছেন। জনগণ তার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। আমরা আদালতসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেবো।
মিয়ারবেড়ি বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন বলেন, মমিন এলাকায় ভূমিদস্যু ও মামলাবাজ হিসেবে পরিচিত। বহু মানুষের সঙ্গে জমি ও টাকা নিয়ে তিনি প্রতারণা করেছেন। এসব নিয়ে কথা বলায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মানুষকে হয়রানি করছেন। বাজারে একটি দোকানের ভিটা কিনতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে চাঁদাবাজির মামলা দিয়েছে।
বাজার কমিটির সহ-সভাপতি আবুল হাশেমকেও মামলায় জড়ানো হয়েছে। তার থেকে বাঁচতে আমরা জেলা প্রশাসক ও ইউএনওর কাছে যাবো। অর্ধশতাধিক মানুষের মালিকানাধীন অন্তত ৫০ একর জমি ভুয়া দলিলের মাধ্যমে তিনি দখল করে রেখেছেন।
সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন ধরণের মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে মমিন মামলা করে। মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানি করছে। বাজারের একটি দোকান বেচাকেনা নিয়েও তিনি মামলা করেন। এর প্রতিবাদ করায় মমিন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করছেন। তিনি আমাকে মামলায় জড়নোর হুমকি দিচ্ছেন।
এইসব বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে মমিন উল্যা বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ তোলা হয়েছে।
ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি বলেন, মমিনের বিরুদ্ধে পরিষদে বহু ভুক্তভোগীর অভিযোগ রয়েছে। তিনি ‘স্বীকৃত ভূমিদস্যু’। ভূয়া দলিল করে মানুষের জমি অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। জমি কিনেও তার প্রতারণার কারণে অনেকেই এখনো তা বুঝে পাননি। তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিতে ভূক্তভোগীদের পরামর্শ দিয়েছি।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন আনোয়ার জানান, এ বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেননি। বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক - মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ । ম্যানেজিং এডিটর - মেহেদী হাসান রাকিব। নির্বাহী সম্পাদক - তাহসিন হাওলাদার। সহ-সম্পাদক -মো.আমিনুল ইসলাম রাজু। প্রধান কার্যালয় - মনতাজ ম্যানশন(২য় তলা) দালাল বাজার । যোগাযোগ 01711122829