ঢাকা ০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লক্ষ্মীপুরে বিলুপ্তির পথে সেই সুস্বাদু খেজুরের রস ও গুঁড়।

মু.ওয়াহিদুর রহমান মুরাদ:

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রায়  বছর দশেক আগে ও খেজুরের রস এবং খেজুরের  মিঠাইয়ের জন্য ছিলো বিখ্যাত কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে  সেই সুস্বাদু খেজুর রস ও খেজুরের মিঠাই। বছরে  শীত মৌসুমে খেজুরের রসের পিঠা পায়েস  সঙ্গে রয়েছে গ্রাম গঞ্জের মানুষের  নিবিড় সম্পর্ক। শীতকালে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ থেকে পাওয়া যায় সুমিষ্ট রস,  আর রস থেকে তৈরি হতো খেজুরের গুড়। ফল হিসেবেও খেজুরের তুলনা  নেই। শীতের মিষ্টি রোদে বসে  খেজুরের গুড় দিয়ে মুড়ি ভাঁড়া পিঠা খেতে কে না ভালোবাসে?

সয়াল্যান্ড খ্যাত লক্ষ্মীপুর- শীত এলেই ধারণ করে মোহনীয় এক রুপ। আর এই রুপের শোভাবর্ধনে অলংকারের ভূমিকা পালন করে স্থানীয় খেজুর রস।খেজুর রস সংগ্রহ এবং নানান ধরনের পিঠা সৃষ্টি করে ভিন্ন এক পরিবেশ। প্রকৃতিতে অগ্রহায়ণ আসতেই লক্ষ্মীপুরে শুরু হতো খেজুর রসের মৌসুম। জেলার রামগতি-আলেকজান্ডার, হাসনাবাদ, চররমনীমোহন, রসূলগঞ্জ, চরমোহনা, হায়দরগঞ্জে সাত সকালে বসতো ছোট-বড় রসের মেলা।

সকালের তরতাজা খেঁজুরের রস

 খেজুর রসের সন্ধানে গাছ কাঁটতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন যারা তাদের এখন আগের মতো খেজুর গাছ এখন আর নেই। খেজুর গাছ পোড়ানো ও জলাবদ্ধতায়সহ নানা কারনে খেজুর গাছ দিনে দিনে কমে গেছে। সে কারণে খেজুরের রস ও গুড় এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। পেশাদার গাছির সংখ্যাও কমছে। তারপরও খেজুর রসের গুড় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হয় বলে গাছিরা জানিয়েছেন।একসময় খেজুর রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাছ কাঁটার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতেন। এ বছর মৌশুমের শুরুতে খেজুর রস আহরণ এবং নির্ভেজাল গুড় তৈরী এবং সেটা বাজারজাত করার জন্য হাঁকডাক থাকতো গ্রামের বাজারে।

গাছিরা রস সংগ্রহের কাজ করছেন

শ্রমজীবি গাছিরা জানান, প্রতি বছরে খেজুর গাছ কেটে ফেলার কারণে রস ও গুড়ের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক গাছের মালিকরা খেজুর গাছ বিক্রয় করে ফেলেছেন। খেজুর গাছের মালিকরা জানান, আগের মতো পেশাদার গাছি (শ্রমিক) এখন নেই। অনেকে বৃদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। সারা গ্রামে এখন একজন গাছিও পাওয়া যায় না। সেজন্য একজন শ্রমিককে খেজুর গাছ তুলতে প্রায় ৩ থেকে ৫ শত টাকা করে দিতে হয়। গাছের পরিমান ও গাছির সংখ্যা কমে যাওয়া খেজুর রস ও গুড়ের দাম ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া আগে প্রতিটি গাছে এক কাটায় এক ভাড় করে রস হতো। কিন্তু এখন এর অর্ধেক রস হচ্ছে।

 এ্যালমুনিয়ামের কড়াইতে রস জালিয়ে গুড় তৈরী করতে সকাল থেকে দুপর পর্যন্ত সময় লাগে। জিরেন রস দিয়ে দানাগুড়, ছিন্নি গুলা, পাটালী তৈরী করা হয়। আর ঘোলা রস (যে রস পরেরদিন হয়) দিয়ে তৈরী হয় ঝুলা (তরল) গুড়। নলেন রসের পাটালী খেতে খুবই সুস্বাদু হয় বলে বাজারে কদর অনেক বেশী এই নলেন গুড়ের। 

 বর্তমানে খেজুর গাছের প্রতি মানুষের তেমন যত্ন  নেয়। খেজুর এমন এক ধরনের  গাছ রাস্তার পাশে কিংবা বসত বাড়ির আসে পাশে অথবা নতুন মাটি দরা আড়া- বেড়া  পরিত্যক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেতো।

শীত মৌসুমে কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালটা যেনও খেজুরের রস ছাড়া জমতো না। শীত ও খেজুরের রস যেনও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকতো। সকালবেলার ঠান্ডা, মিষ্টি খেজুরের রস যেনও অমৃত।

খেজুরের রস থেকে গ্রামগঞ্জের বৌ -ঝিরা তৈরি করত শীতকালীন নানা পিঠা-পায়েস।তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য দুই পিঠা (ভাঁপা পিঠা), গুরা পিঠা, চিতল পিঠা, পাটিসাপটা, শাইয়া পিঠা এমন কি মুড়ির মোয়া। আবার অনেকেই আপন জনের বাড়িতে বেড়াতে যেতে নিয়ে যান দৃষ্টি গোচরের জন্য খেজুর রস। দুরন্ত কিশোররা রস চুরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়তো। এখন  আগের মতো  খেজুর গাছের রস চুরি করতে পারে না  আর খেতে  ও পারে না গ্রামের কিশোররা।

তবে লক্ষ্মীপুর জেলার গ্রামাঞ্চলের সেই চিত্র এখন আর চোখে পড়ে না। এখন আর আগের মত খেজুরের রসও নেই, নেই সে পিঠে পায়েসও। দিন দিন কমে যাচ্ছে গাছের সংখ্যাও। নেই নতুন গাছ রোপণের কোনো উদ্যোগ। সদর উপজেলার মান্দারী , চররুহিতা, নন্দন পুর, বাঙ্গাখাঁ  গন্ধব্যপুর   আমিন বাজার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, আবদুল্লাহ মিয়া নামে  একজন গাছি খেজুর গাছের ছাল পরিষ্কার করে তাতে মাটির হাড়ি বেঁধে দিচ্ছেন।

এক সময় প্রতি হাঁড়ি খেজুর রস বিক্রি হতো ২০ থেকে ৩০ টাকায়। বর্তমান সে খেজুরের রস ৫০০ টাকা। অনেক জায়গাতে ১০০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। আমিন বাজারের রাশেদ সংবাদ সারাবেলা কে  বলেন, আগে এলাকার  গাছিদের  খুব মূল্য  ছিল, মৌসুম শুরুর আগ থেকেই কথাবার্তা পাকা হতো কার কটি খেজুর গাছ কাটতে হবে। কিন্তু এখন আর সে রকম চিত্র  দেখা যায় না  কেউ গাছিদের  ডাকে না। আগের মতো তেমন খেজুর গাছও নেই। আগে সকাল বেলা খেজুরের রস সংগ্রহ করে  গাছিরা  জকসিন বাজারে বিক্রি করতো  মাঝে মাঝে লক্ষ্মীপুর বাজারে বিক্রয় করতে নিয়ে যেতো। আয়ও হতো ভালো তাদের।  চররুহিতা ইউনিয়নের রসুলগঞ্জ গ্রামের হানিফ বলেন, আগে গ্রামে-গ্রামে খেজুর গাছের মাথায় মাটির হাঁড়ি বেঁধে রাখা দেখে মন জুড়িয়ে যেতো এখন আর সে রকম দেখা যায় না। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার গ্রামগুলোতে শীতের সকালে চোখে পড়তো রসের হাঁড়ি ও খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছিদের ব্যস্ততার দৃশ্য। খুব ভোর বেলা খেজুরের রস নিয়ে গাছিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাঁকডাক দিতেন। এখন আর সে দৃশ্য চোখে পড়ে না।কালের বিবর্তনে সব হারিয়ে গেছে।

খেজুর গাছ বিলুপ্তির কারণ হিসেবে জানা গেছে বিভিন্ন কারণে খেজুর গাছ কর্তন, মরে যাওয়া, তদারকির অভাব এবং নতুন চারা রোপণ না করা।খেজুর গাছ বিলুপ্তির পথে।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা  লক্ষ্মীপুরের প্রতিটি অঞ্চলেই খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। গাছিদের খেজুর গাছ কাটার কাজটি শিল্প আর দক্ষতায় ভরা। ডাল কেটে গাছের বুকছিড়ে রস বের করার মধ্যে রয়েছে কৌশল, রয়েছে ধৈর্য ও অপেক্ষার পালা। এ জন্য মৌসুম আসার সাথে সাথে দক্ষ গাছিদের মূল্যায়ন করত গৃহস্থরা। তবে আমাদের অসচেতনতার কারণে খেজুর রস ও গাছ বিলুপ্তির পথে। 

লক্ষ্মীপুর কৃষি বিভাগ খেজুর গাছ,রস ও গুড় নিয়ে কোন তথ্য আপাতত নেই বলে জানান।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

লক্ষ্মীপুরের উত্তরচরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির বিলুপ্ত  

লক্ষ্মীপুরে বিলুপ্তির পথে সেই সুস্বাদু খেজুরের রস ও গুঁড়।

আপডেট : ০৪:৫৮:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৪

মু.ওয়াহিদুর রহমান মুরাদ:

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রায়  বছর দশেক আগে ও খেজুরের রস এবং খেজুরের  মিঠাইয়ের জন্য ছিলো বিখ্যাত কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে  সেই সুস্বাদু খেজুর রস ও খেজুরের মিঠাই। বছরে  শীত মৌসুমে খেজুরের রসের পিঠা পায়েস  সঙ্গে রয়েছে গ্রাম গঞ্জের মানুষের  নিবিড় সম্পর্ক। শীতকালে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ থেকে পাওয়া যায় সুমিষ্ট রস,  আর রস থেকে তৈরি হতো খেজুরের গুড়। ফল হিসেবেও খেজুরের তুলনা  নেই। শীতের মিষ্টি রোদে বসে  খেজুরের গুড় দিয়ে মুড়ি ভাঁড়া পিঠা খেতে কে না ভালোবাসে?

সয়াল্যান্ড খ্যাত লক্ষ্মীপুর- শীত এলেই ধারণ করে মোহনীয় এক রুপ। আর এই রুপের শোভাবর্ধনে অলংকারের ভূমিকা পালন করে স্থানীয় খেজুর রস।খেজুর রস সংগ্রহ এবং নানান ধরনের পিঠা সৃষ্টি করে ভিন্ন এক পরিবেশ। প্রকৃতিতে অগ্রহায়ণ আসতেই লক্ষ্মীপুরে শুরু হতো খেজুর রসের মৌসুম। জেলার রামগতি-আলেকজান্ডার, হাসনাবাদ, চররমনীমোহন, রসূলগঞ্জ, চরমোহনা, হায়দরগঞ্জে সাত সকালে বসতো ছোট-বড় রসের মেলা।

সকালের তরতাজা খেঁজুরের রস

 খেজুর রসের সন্ধানে গাছ কাঁটতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন যারা তাদের এখন আগের মতো খেজুর গাছ এখন আর নেই। খেজুর গাছ পোড়ানো ও জলাবদ্ধতায়সহ নানা কারনে খেজুর গাছ দিনে দিনে কমে গেছে। সে কারণে খেজুরের রস ও গুড় এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। পেশাদার গাছির সংখ্যাও কমছে। তারপরও খেজুর রসের গুড় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হয় বলে গাছিরা জানিয়েছেন।একসময় খেজুর রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাছ কাঁটার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতেন। এ বছর মৌশুমের শুরুতে খেজুর রস আহরণ এবং নির্ভেজাল গুড় তৈরী এবং সেটা বাজারজাত করার জন্য হাঁকডাক থাকতো গ্রামের বাজারে।

গাছিরা রস সংগ্রহের কাজ করছেন

শ্রমজীবি গাছিরা জানান, প্রতি বছরে খেজুর গাছ কেটে ফেলার কারণে রস ও গুড়ের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক গাছের মালিকরা খেজুর গাছ বিক্রয় করে ফেলেছেন। খেজুর গাছের মালিকরা জানান, আগের মতো পেশাদার গাছি (শ্রমিক) এখন নেই। অনেকে বৃদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। সারা গ্রামে এখন একজন গাছিও পাওয়া যায় না। সেজন্য একজন শ্রমিককে খেজুর গাছ তুলতে প্রায় ৩ থেকে ৫ শত টাকা করে দিতে হয়। গাছের পরিমান ও গাছির সংখ্যা কমে যাওয়া খেজুর রস ও গুড়ের দাম ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া আগে প্রতিটি গাছে এক কাটায় এক ভাড় করে রস হতো। কিন্তু এখন এর অর্ধেক রস হচ্ছে।

 এ্যালমুনিয়ামের কড়াইতে রস জালিয়ে গুড় তৈরী করতে সকাল থেকে দুপর পর্যন্ত সময় লাগে। জিরেন রস দিয়ে দানাগুড়, ছিন্নি গুলা, পাটালী তৈরী করা হয়। আর ঘোলা রস (যে রস পরেরদিন হয়) দিয়ে তৈরী হয় ঝুলা (তরল) গুড়। নলেন রসের পাটালী খেতে খুবই সুস্বাদু হয় বলে বাজারে কদর অনেক বেশী এই নলেন গুড়ের। 

 বর্তমানে খেজুর গাছের প্রতি মানুষের তেমন যত্ন  নেয়। খেজুর এমন এক ধরনের  গাছ রাস্তার পাশে কিংবা বসত বাড়ির আসে পাশে অথবা নতুন মাটি দরা আড়া- বেড়া  পরিত্যক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেতো।

শীত মৌসুমে কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালটা যেনও খেজুরের রস ছাড়া জমতো না। শীত ও খেজুরের রস যেনও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকতো। সকালবেলার ঠান্ডা, মিষ্টি খেজুরের রস যেনও অমৃত।

খেজুরের রস থেকে গ্রামগঞ্জের বৌ -ঝিরা তৈরি করত শীতকালীন নানা পিঠা-পায়েস।তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য দুই পিঠা (ভাঁপা পিঠা), গুরা পিঠা, চিতল পিঠা, পাটিসাপটা, শাইয়া পিঠা এমন কি মুড়ির মোয়া। আবার অনেকেই আপন জনের বাড়িতে বেড়াতে যেতে নিয়ে যান দৃষ্টি গোচরের জন্য খেজুর রস। দুরন্ত কিশোররা রস চুরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়তো। এখন  আগের মতো  খেজুর গাছের রস চুরি করতে পারে না  আর খেতে  ও পারে না গ্রামের কিশোররা।

তবে লক্ষ্মীপুর জেলার গ্রামাঞ্চলের সেই চিত্র এখন আর চোখে পড়ে না। এখন আর আগের মত খেজুরের রসও নেই, নেই সে পিঠে পায়েসও। দিন দিন কমে যাচ্ছে গাছের সংখ্যাও। নেই নতুন গাছ রোপণের কোনো উদ্যোগ। সদর উপজেলার মান্দারী , চররুহিতা, নন্দন পুর, বাঙ্গাখাঁ  গন্ধব্যপুর   আমিন বাজার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, আবদুল্লাহ মিয়া নামে  একজন গাছি খেজুর গাছের ছাল পরিষ্কার করে তাতে মাটির হাড়ি বেঁধে দিচ্ছেন।

এক সময় প্রতি হাঁড়ি খেজুর রস বিক্রি হতো ২০ থেকে ৩০ টাকায়। বর্তমান সে খেজুরের রস ৫০০ টাকা। অনেক জায়গাতে ১০০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। আমিন বাজারের রাশেদ সংবাদ সারাবেলা কে  বলেন, আগে এলাকার  গাছিদের  খুব মূল্য  ছিল, মৌসুম শুরুর আগ থেকেই কথাবার্তা পাকা হতো কার কটি খেজুর গাছ কাটতে হবে। কিন্তু এখন আর সে রকম চিত্র  দেখা যায় না  কেউ গাছিদের  ডাকে না। আগের মতো তেমন খেজুর গাছও নেই। আগে সকাল বেলা খেজুরের রস সংগ্রহ করে  গাছিরা  জকসিন বাজারে বিক্রি করতো  মাঝে মাঝে লক্ষ্মীপুর বাজারে বিক্রয় করতে নিয়ে যেতো। আয়ও হতো ভালো তাদের।  চররুহিতা ইউনিয়নের রসুলগঞ্জ গ্রামের হানিফ বলেন, আগে গ্রামে-গ্রামে খেজুর গাছের মাথায় মাটির হাঁড়ি বেঁধে রাখা দেখে মন জুড়িয়ে যেতো এখন আর সে রকম দেখা যায় না। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার গ্রামগুলোতে শীতের সকালে চোখে পড়তো রসের হাঁড়ি ও খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছিদের ব্যস্ততার দৃশ্য। খুব ভোর বেলা খেজুরের রস নিয়ে গাছিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাঁকডাক দিতেন। এখন আর সে দৃশ্য চোখে পড়ে না।কালের বিবর্তনে সব হারিয়ে গেছে।

খেজুর গাছ বিলুপ্তির কারণ হিসেবে জানা গেছে বিভিন্ন কারণে খেজুর গাছ কর্তন, মরে যাওয়া, তদারকির অভাব এবং নতুন চারা রোপণ না করা।খেজুর গাছ বিলুপ্তির পথে।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা  লক্ষ্মীপুরের প্রতিটি অঞ্চলেই খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। গাছিদের খেজুর গাছ কাটার কাজটি শিল্প আর দক্ষতায় ভরা। ডাল কেটে গাছের বুকছিড়ে রস বের করার মধ্যে রয়েছে কৌশল, রয়েছে ধৈর্য ও অপেক্ষার পালা। এ জন্য মৌসুম আসার সাথে সাথে দক্ষ গাছিদের মূল্যায়ন করত গৃহস্থরা। তবে আমাদের অসচেতনতার কারণে খেজুর রস ও গাছ বিলুপ্তির পথে। 

লক্ষ্মীপুর কৃষি বিভাগ খেজুর গাছ,রস ও গুড় নিয়ে কোন তথ্য আপাতত নেই বলে জানান।