মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ :
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলের জনসাধারণের খোঁজ-খবর নেওয়ার লক্ষ্যে ছুটে চলছেন এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলা ও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থিত দূর্যোগপূর্ণ এলাকাগুলোতে লক্ষ্মীপুর জেলার পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজ্জামান আশরাফ ।
সোমবার দুপুরে তিনি লক্ষ্মীপুর সদরের মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চঘাট ও চর রমনী মোহন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষ ও নদী পাড়ের মানুষদের খোঁজখবর নেন তিনি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেন এই সময়ে। এছাড়াও সাধারণ জনগণদের যে কোন প্রয়োজনে জেলা পুলিশের সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে আশ্বাস প্রদান করেন পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজ্জামান আশরাফ।
রায়পুর থানার ওসি শিপন বড়ুয়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং প্রস্তুুতি ও পরিস্থিতি নিয়ে জানান, রায়পুরের ৩টি ইউনিয়ন খুবই ঝুকিপূর্ণ। সেখানে ৩টি ইউনিয়ন এর জন্য ফাঁড়ি ইনচার্জদের সাইক্লোন শেল্টারে দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও চুরি ও ডাকাতি রোধে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। গবাদি পশু চুরি যেন না হয় তাই গ্রাম পুলিশ চৌকিদারদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
রামগতি থানার ওসি আলমগীর হোসেন মুঠোফোনে বলেন, নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন এলাকা হয়ে পড়েছে রামগতি। চর আবদুল্লাহ সহ অনেক এলাকা এখানে দূর্গম। সাইক্লোন শেল্টার গুলোতে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেকেই গবাদিপশু রেখে আসতে চাননি। তবুও যারা এসেছেন প্রত্যেককেই নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে।
কমলনগর থানার ওসি মোঃসোলায়মান মিয়া জানান, কমলনগর উপজেলা নদীর পাশবর্তী হওয়ায় এখানকার জনগন প্রতিনিয়ত জোয়ার সহ দূর্যোগে বিপর্যস্ত। বিভিন্ন এলাকায় গাছ উঁপড়ে পড়ে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতা গাছ কেটে সড়ক চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। সাইক্লোন শেল্টার গুলোতে আমাদের পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তার জন্য।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. মোসলেউদ্দিন বলেন, মজু চৌধুরীর হাট সংলগ্ন সাইক্লোন শেল্টার পরিদর্শন করেন এই সময় ফাঁড়ি পুলিশ এবং নৌ-পুলিশকে জনগনের নিরাপত্তা প্রদানে সহযোগিতার পরামর্শ দেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) পলাশ কান্তি নাথ সামগ্রিক ভাবে পুরো লক্ষ্মীপুর জেলার নদী সংলগ্ন এলাকা নিয়ে বলেন, লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজ্জামান আশরাফ স্যারের নির্দেশনায় দূর্যোগ প্রবনতা এলাকার সাইক্লোন শেল্টারে আসা – নেওয়ায় জনপ্রতিনিধিদের, সেচ্ছাসেবীদের নিয়ে পুলিশ বাহিনী নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। সন্ধ্যায় ভোলা থেকে ট্রলার যোগে মাঝ নদীতে আটকে গেলে 999 এ কল পেয়ে নৌ – পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার করি ৭ জন যাত্রীকে। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়ে আছে সেগুলো ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় সড়কে যান চলাচল ঠিক রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। পুলিশ সুপার স্যারের উদ্যোগে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার বিতরন করা হচ্ছে। সদর, রামগতি, কমলনগর, রায়পুর এর ওসিদের ও সংশ্লিষ্ট এলাকার ফাঁড়ি পুলিশকে ঘূর্নিঝঁড় প্রস্তুতি এবং পরবর্তী নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যে কোন প্রয়োজনে ৯৯৯ ও পুলিশ কন্ট্রোল রুম 01320112898 নাম্বারে কল দেয়ার অনুরোধ করেন।
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগর উপজেলা নদী বেষ্টিত। এই চার উপজেলার মানুষকে ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সাইক্লোন শেল্টারসহ ১৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়কালীন ব্যয়ের জন্য ৫ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ২৬০ মেট্রিক টিন চাল মজুত রয়েছে। এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৬০০ প্যাকেট বিস্কুট ইতোমধ্যে উপজেলাভিত্তিক বরাদ্দ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৬৬টি মেডিকেল টিমের সঙ্গে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৩ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক ইতোমধ্যে মাঠে কাজ করছেন। জেলা ও উপজেলার সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কর্মস্থল এলাকায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।