ঢাকা ০১:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লক্ষ্মীপুরের নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি – ভিটেমাটি ভাঙনের হুমকি। 

লক্ষ্মীপুরের সদর, রামগতি, রায়পুর ও কমলনগরে মেঘনার ভাঙ্গনে দিশেহার হয়ে পড়েছে উপকূলীয় এলাকার কয়েক হাজার মানুষ ও পরিবার। এর মধ্যে ভাঙনে কমলনগর উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ ১৩টি বাজার এবং ঐতিহ্যবাহী শতবছরের পুরনো বহু মসজিদ হারিয়ে গেছে। এতে তিল তিল করে গড়া সম্পদ এখন যেন বিপন্নতার অন্ধকারে, হাহাকার করছে বাস্তুচ্যুত অসহায় মানুষগুলো।

মেঘনার রাক্ষুসে কবলে পড়ে বর্তমানে কমলনগর উপজেলার সাহেবেরহাট বাজার, কাদিরপন্ডিতের হাট, হাজিগঞ্জ, তালতলি, পাটোয়ারীরহাট, লুধুয়া বাজার, আজু বেপারীরহাট, গোয়াল মার্কেট, বাংলা বাজার, নতুন সাহেবেরহাট, মাতাব্বরহাট, নতুন তালতলি, জনতা বাজার নদীগর্ভে বিলীন । এ ছাড়াও বহু বাজার এখনো মেঘনার রাক্ষুসে হানার হুমকিতে।

জোয়ারের পানিতে ভাঙছে রহমতখালী নদী। সদর উপজেলার মজু চৌধুরীর হাট সুইস গেইটের পূর্ব পাশ থেকে টুম চর, কালির চর ও ভবানীগঞ্জসহ ৫টি গ্রামের ১৬ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিনিয়ত নদীর দু’পাড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক বছরের অব্যাহত ভাঙন ও চলমান বর্ষায় তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছেন নদীপাড়ের সহস্রাধিক পরিবার। ইতোমধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়েছে অনেকে। আর এসব পরিবারের অনেকে বসত ভিটা হারিয়ে রাস্তার পাশে আশ্রয় নিলেও অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এখন। ভাঙনের মুখে এখন নিজেদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়াসহ গাছ-পালা কেটে নিতে দেখা গেছে অনেককে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভাঙন প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে করে স্থানীয় কালিরচর বাজার, জগৎ বেড়, চররমনী মোহন এলাকাসহ স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন হুমকির মুখে রয়েছে। নিম্ম আয়ের ভুক্তভোগী এসব বাসিন্দারা সরকারি সহায়তার দাবি জানান। কেউ কেউ বলছেন মজু চৌধুরীর হাট এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নদীর মাঝখানে পলি জমে চর জেগে ওঠেছে। এতে করে পানি প্রবাহিত হতে না পেরে তীব্র স্রোতে নদীর দুই পাড় ভাঙছে। শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।

ভাঙ্গনের কবলে লক্ষ্মীপুরের ফসলি জমি -ভিটা

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ বলেন, রহমতখালী নদীর ১৬ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। বৃহত্তর নোয়াখালীর পানি এ নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়। ষাটের দশকে এখানে একটি রেগুলেটর ও পরে আরেকটি রেগুলেটর স্থাপন করা হয়। কিন্তু বিপুল পরিমাণ পানি একই জায়গা দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে তীব্র স্রোতে নদীর দু’পাড়েই ভাঙন শুরু হয়। এছাড়া নদীর মাঝখানে বিভিন্ন পয়েন্টে পলি জমে চর জেগে উঠায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে মাটি কাটা কিংবা বালু উত্তোলন করতে না পারায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে কিছু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চর আবাবিল, উত্তর চরবংশী ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের পাশর্বর্তী মেঘনা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদী তীরবর্তী স্থাপনা ও ফসলী জমি। 

ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে স্থলভূমি বিলীন হয়ে যাওয়ায় প্রতি বছরই বদলে যাচ্ছে রায়পুরের মানচিত্র। ভাঙন প্রতিরোধে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন থেকে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবী জানালেও প্রতিশ্রুতি পর্যনন্তই সীমাবদ্ধ রয়েছে তা।

 গত দুই যুগে সহস্রাধিক ঘরবাড়িসহ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অগণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদসহ নানারকম সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন স্থাপনা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন প্রমত্তা মেঘনার পাশর্বর্তী হওয়ায় বর্ষাকালে তীব্র স্রোতের কারণে প্রতিবছরই ভাঙনের কবলে পড়ে। নদী তীরবর্তী জেলে ও কৃষক পরিবারগুলো স্থায়ী ও অস্থায়ী বাসস্থান নির্মাণ করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বর্ষা মৌসুমে ঝড়-জলোচ্ছাস ও নদীভাঙন আতঙ্কে রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় তাদের।

 ভূক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নদীর তীব্র ¯স্রোতের কারণে চোখের সামনেই প্রতিবছর অনেকের ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া তাদের আর কিছুই করার থাকে না। অথচ উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় আলতাফ মাস্টার ঘাট, সরদার এন্ড মোল্যা পর্যটন কেন্দ্র ও রাহুল ঘাট নামে তিনটি পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগম ঘটে। এছাড়া বেশ কয়েকটি মৎস্য আড়তের মাধ্যমে পাশর্বর্তী বঙ্গোপসাগর ও মেঘনা নদীর বিপুল পরিমাণ মৎস্য সম্পদ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।

 অন্যদিকে বরিশাল, ভোলাসহ মেঘনার বিভিন্ন চরে উৎপাদিত কৃষি পণ্য নদী তীরবর্তী ঘাটগুলো হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। অর্থনৈতিক ও ভৌগলিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্বেও রায়পুর পশ্চিমাঞ্চলের এই নদী ভাঙন কবলিত এলাকাটি রয়েছে চরম অবহেলিত।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন সময় সরকারের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু অদ্যবধি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত না হওয়ায় ভুক্তভোগীদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও হতাশা। পাশর্বর্তী হাইমচর ও কমলনগর উপজেলায় নদী তীর রক্ষায় ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও অজ্ঞাত কারণে মধ্যবর্তী রায়পুরের নদী ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

উত্তর চরআবাবিল এলাকার ভূক্তভোগী আবুল হোসেন বলেন, “তিন যুগ ধরে মেঘনার ভাঙ্গনে চোখের সামনেই অনেককে ভিটেমাটি হারিয়ে সর্বহারা হতে দেখেছি। কিন্তু ভাঙ্গন রোধে অদ্যবধি কোন পদক্ষেপ দেখিনি।

উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন হাওলাদার বলেন, “প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ব্যাপকভাবে নদী ভাঙন হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে। আমি এ বিষয়ে বহুবার স্থানীয় সাংসদ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেছি।”

পানি উন্নয়নবোর্ড, লক্ষ্মীপুরের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফারুক আহম্মেদ জানান, “মেঘনা নদীর কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বিশেষ নজর রেখে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যেখানে সমস্যার সৃষ্টি হবে, গুরুত্ব বিবেচনায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।”

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য, এডভোকেট নূর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, “লক্ষ্মীপুর এর মজু চৌধুরীরহাট থেকে চাঁদপুরের হাইমচর সীমানা পর্যন্ত তীর সংরক্ষণ করার জন্য ভাঙন এলাকাটি পরিদর্শন করি। ভাঙনরোধে প্রকল্প গ্রহণের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি স্থায়ী বাঁধ চেয়ে ডিও লেটার দেয়া হয়েছে।”

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

লক্ষ্মীপুরের উত্তরচরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির বিলুপ্ত  

লক্ষ্মীপুরের নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি – ভিটেমাটি ভাঙনের হুমকি। 

আপডেট : ০৪:০০:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩

লক্ষ্মীপুরের সদর, রামগতি, রায়পুর ও কমলনগরে মেঘনার ভাঙ্গনে দিশেহার হয়ে পড়েছে উপকূলীয় এলাকার কয়েক হাজার মানুষ ও পরিবার। এর মধ্যে ভাঙনে কমলনগর উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ ১৩টি বাজার এবং ঐতিহ্যবাহী শতবছরের পুরনো বহু মসজিদ হারিয়ে গেছে। এতে তিল তিল করে গড়া সম্পদ এখন যেন বিপন্নতার অন্ধকারে, হাহাকার করছে বাস্তুচ্যুত অসহায় মানুষগুলো।

মেঘনার রাক্ষুসে কবলে পড়ে বর্তমানে কমলনগর উপজেলার সাহেবেরহাট বাজার, কাদিরপন্ডিতের হাট, হাজিগঞ্জ, তালতলি, পাটোয়ারীরহাট, লুধুয়া বাজার, আজু বেপারীরহাট, গোয়াল মার্কেট, বাংলা বাজার, নতুন সাহেবেরহাট, মাতাব্বরহাট, নতুন তালতলি, জনতা বাজার নদীগর্ভে বিলীন । এ ছাড়াও বহু বাজার এখনো মেঘনার রাক্ষুসে হানার হুমকিতে।

জোয়ারের পানিতে ভাঙছে রহমতখালী নদী। সদর উপজেলার মজু চৌধুরীর হাট সুইস গেইটের পূর্ব পাশ থেকে টুম চর, কালির চর ও ভবানীগঞ্জসহ ৫টি গ্রামের ১৬ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিনিয়ত নদীর দু’পাড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক বছরের অব্যাহত ভাঙন ও চলমান বর্ষায় তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছেন নদীপাড়ের সহস্রাধিক পরিবার। ইতোমধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়েছে অনেকে। আর এসব পরিবারের অনেকে বসত ভিটা হারিয়ে রাস্তার পাশে আশ্রয় নিলেও অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এখন। ভাঙনের মুখে এখন নিজেদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়াসহ গাছ-পালা কেটে নিতে দেখা গেছে অনেককে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভাঙন প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে করে স্থানীয় কালিরচর বাজার, জগৎ বেড়, চররমনী মোহন এলাকাসহ স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন হুমকির মুখে রয়েছে। নিম্ম আয়ের ভুক্তভোগী এসব বাসিন্দারা সরকারি সহায়তার দাবি জানান। কেউ কেউ বলছেন মজু চৌধুরীর হাট এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নদীর মাঝখানে পলি জমে চর জেগে ওঠেছে। এতে করে পানি প্রবাহিত হতে না পেরে তীব্র স্রোতে নদীর দুই পাড় ভাঙছে। শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।

ভাঙ্গনের কবলে লক্ষ্মীপুরের ফসলি জমি -ভিটা

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ বলেন, রহমতখালী নদীর ১৬ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। বৃহত্তর নোয়াখালীর পানি এ নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়। ষাটের দশকে এখানে একটি রেগুলেটর ও পরে আরেকটি রেগুলেটর স্থাপন করা হয়। কিন্তু বিপুল পরিমাণ পানি একই জায়গা দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে তীব্র স্রোতে নদীর দু’পাড়েই ভাঙন শুরু হয়। এছাড়া নদীর মাঝখানে বিভিন্ন পয়েন্টে পলি জমে চর জেগে উঠায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে মাটি কাটা কিংবা বালু উত্তোলন করতে না পারায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে কিছু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চর আবাবিল, উত্তর চরবংশী ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের পাশর্বর্তী মেঘনা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদী তীরবর্তী স্থাপনা ও ফসলী জমি। 

ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে স্থলভূমি বিলীন হয়ে যাওয়ায় প্রতি বছরই বদলে যাচ্ছে রায়পুরের মানচিত্র। ভাঙন প্রতিরোধে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন থেকে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবী জানালেও প্রতিশ্রুতি পর্যনন্তই সীমাবদ্ধ রয়েছে তা।

 গত দুই যুগে সহস্রাধিক ঘরবাড়িসহ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অগণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদসহ নানারকম সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন স্থাপনা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন প্রমত্তা মেঘনার পাশর্বর্তী হওয়ায় বর্ষাকালে তীব্র স্রোতের কারণে প্রতিবছরই ভাঙনের কবলে পড়ে। নদী তীরবর্তী জেলে ও কৃষক পরিবারগুলো স্থায়ী ও অস্থায়ী বাসস্থান নির্মাণ করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বর্ষা মৌসুমে ঝড়-জলোচ্ছাস ও নদীভাঙন আতঙ্কে রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় তাদের।

 ভূক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নদীর তীব্র ¯স্রোতের কারণে চোখের সামনেই প্রতিবছর অনেকের ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া তাদের আর কিছুই করার থাকে না। অথচ উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় আলতাফ মাস্টার ঘাট, সরদার এন্ড মোল্যা পর্যটন কেন্দ্র ও রাহুল ঘাট নামে তিনটি পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগম ঘটে। এছাড়া বেশ কয়েকটি মৎস্য আড়তের মাধ্যমে পাশর্বর্তী বঙ্গোপসাগর ও মেঘনা নদীর বিপুল পরিমাণ মৎস্য সম্পদ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।

 অন্যদিকে বরিশাল, ভোলাসহ মেঘনার বিভিন্ন চরে উৎপাদিত কৃষি পণ্য নদী তীরবর্তী ঘাটগুলো হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। অর্থনৈতিক ও ভৌগলিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্বেও রায়পুর পশ্চিমাঞ্চলের এই নদী ভাঙন কবলিত এলাকাটি রয়েছে চরম অবহেলিত।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন সময় সরকারের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু অদ্যবধি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত না হওয়ায় ভুক্তভোগীদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও হতাশা। পাশর্বর্তী হাইমচর ও কমলনগর উপজেলায় নদী তীর রক্ষায় ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও অজ্ঞাত কারণে মধ্যবর্তী রায়পুরের নদী ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

উত্তর চরআবাবিল এলাকার ভূক্তভোগী আবুল হোসেন বলেন, “তিন যুগ ধরে মেঘনার ভাঙ্গনে চোখের সামনেই অনেককে ভিটেমাটি হারিয়ে সর্বহারা হতে দেখেছি। কিন্তু ভাঙ্গন রোধে অদ্যবধি কোন পদক্ষেপ দেখিনি।

উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন হাওলাদার বলেন, “প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ব্যাপকভাবে নদী ভাঙন হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে। আমি এ বিষয়ে বহুবার স্থানীয় সাংসদ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেছি।”

পানি উন্নয়নবোর্ড, লক্ষ্মীপুরের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফারুক আহম্মেদ জানান, “মেঘনা নদীর কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বিশেষ নজর রেখে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যেখানে সমস্যার সৃষ্টি হবে, গুরুত্ব বিবেচনায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।”

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য, এডভোকেট নূর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, “লক্ষ্মীপুর এর মজু চৌধুরীরহাট থেকে চাঁদপুরের হাইমচর সীমানা পর্যন্ত তীর সংরক্ষণ করার জন্য ভাঙন এলাকাটি পরিদর্শন করি। ভাঙনরোধে প্রকল্প গ্রহণের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি স্থায়ী বাঁধ চেয়ে ডিও লেটার দেয়া হয়েছে।”