ওয়াহিদুর রহমান মুরাদ :
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে তিনজন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ২৪ জন প্রধান শিক্ষক, ৫২ সহকারী শিক্ষক ও অফিস সহকারীর পদ শূন্য এবং বিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষক-অভিভাবকরা। উপজেলার ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, শিক্ষক না থাকায় একসঙ্গে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে অনেককে। বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজের দায়িত্ব সামলাতেও তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, রায়পুরে নতুন জাতীয়করণ হওয়া বিদ্যালয় নিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৫৮টি। ৩৭ জনের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের অনুমোদিত পদ আছে ১০টি। বাকি ২৭টি বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষকের অনুমোদিত পদ নেই। আর প্রধান শিক্ষকের অনুমোদিত পদের মধ্যে বিপরীতে কর্মরত রয়েছে ২৮ জন। বাকি ১৪টি সরকারি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে এসব বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। এসব বিদ্যালয়ে ২৪টি সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য আছে। শিক্ষক-সংকটের ফলে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা ও প্রশাসনিক কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। এ ছাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং ৩টি উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (এইউইও) পদ শূন্য রয়েছে। একজন কম্পিউটার কাম অফিস সহকারীর এবং দপ্তরি কাম প্রহরী ৩৩ জনের পদ শূন্য। উপজেলায় নিয়োগ না হওয়া এখনো দুই শতাধিক প্যানেলভুক্ত শিক্ষক আছেন। শূন্য থাকা পদে এসব শিক্ষককে দ্রুত নিয়োগ দিলে সহকারী শিক্ষকের সংকট অনেকটাই কেটে যেত। অভিভাবকেরা বলছেন, প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় বিদ্যালয়গুলো অনেকটা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। ৫২ জন সহকারী শিক্ষক না থাকার ফলে বিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখাসহ সব কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ১৫১টি বিদ্যালয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা ১টি, এইউইও ৩টি ও সরকারি ১৪ এবং সদ্য নতুন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ১০ জন শূন্য আছে। শিক্ষক না থাকা বিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। এসব শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছে মাত্র ৯ জন। উপজেলার চর ইন্দ্রুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মনির হোসেন বলেন, ‘এখন আমি সহকারী ও প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। প্রশাসনিক দিক সামলানোর পর প্রতিদিন ৫টা ক্লাস নেওয়া খুবই কষ্টকর। মাঝেমধ্যে একই সময়ে একাধিক ক্লাস নিতে হয়।’ তার বিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষকের মধ্যে একজন দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা ছুটিতে। দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী তাদের দুজনকে চালাতে হচ্ছে। এ ছাড়া ১৯৭৩ সালে নির্মিত হওয়া জরাজীর্ণ উপকূলীয় বিদ্যালয় ভবনটি কর্তৃপক্ষ দুই বছর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। রায়পুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) টিপু সুলতান বলেন, ‘এখানকার ২৪টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। ৫টি এইউইও পদের বিপরীতে আছেন ৩ জন। সহকারী শিক্ষক ৫২ জন নেই। অফিস সহকারী ১ জন নেই। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের দিয়ে সবকিছু ঠিকভাবে করা যায় না। একদিকে এ অঞ্চলটি উপকূলীয়, অন্যদিকে আমাদের জনবল-সংকট থাকায় খুবই সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া ২০টি বিদ্যালয়ের ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলোর কোনোটার ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে, কোনোটার ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। আমি জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ ও ভবন সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছি।’
জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ফিরোজ আলম বলেন, রায়পুরে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য থাকার বিষয়টি বিভাগীয় উপপরিচালক, সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই এর সমাধান মিলবে। এ ছাড়া পুল ও প্যানেলভুক্ত সহকারী শিক্ষকদের পর্যায়ক্রমে নিয়োগ হওয়ায় সহকারী শিক্ষকের সংকট কিছুটা কমছে।