পীরজাদা মাসুদ হোসাইন, স্টাফ রিপোর্টার :
লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার একমাত্র মহিলা কলেজ 'রায়পুর মহিলা কলেজ '। চারদলীয় সরকারের সাবেক বিএনপি সংসদ সদস্য আবুল খায়ের ভূইয়ার উদ্যোগে কলেজটি স্থাপিত হয়।
২০০২ সালে মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন পর্যন্ত তা এমপিওভুক্ত হয়নি। ফলে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা আর্থিক সংকটে দিনযাপন করছেন। শিক্ষা অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী নারী শিক্ষার অগ্রগতি ও উন্নয়নের জন্য প্রত্যেক উপজেলায় অন্তত একটি করে মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার বিধান থাকলেও বার বার আবেদন করলেও গত ২০ বছরে এমপিওভুক্ত হয়নি এ কলেজটি। ফলে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে কলেজটির শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে।
তবে বর্তমানে কলেজের স্থানটি খাস খতিয়ান ভুক্ত। তাতেই বেঁধেছে জটিলতা। দুই যুগেও পায়নি এমপিও। নতুন করে সমস্যা তৈরি হয়েছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ নিয়ে জটিলতা। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজহারুল আনোয়ার টিপু কে কেন্দ্র করে ' টিপু হঠাও ' আন্দোলনে একাট্রা প্রতিষ্ঠাতা খায়ের ভূইয়া সমর্থিত শিক্ষকরা। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কলেজের প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিএনপি সমর্থিত ও খায়ের ভূইয়ার ঘনিষ্ঠ কিছু শিক্ষক সহ সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উম্মে হানী।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রায়পুর মহিলা কলেজ বর্তমানে কাগজ - কলমে সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত তালিকায় ভূমি জরিপ অধিদপ্তর কতৃক অন্তভুর্ক্ত হয়েছে। ২০০২ সালে কলেজটি যাত্রা শুরু করলেও ২০০৬ সালে সরকার থেকে ১.৭ একর জায়গা ১ লক্ষ ৪২ হাজার টাকায় ক্রয় করে প্রতিষ্ঠানটি ডাকাতিয়া নদীর পাঁড়ে।তবে এমপিওভূক্ত করন থমকে দাঁড়ায় ভূমি জরিপ এর ভূল অন্তভুর্ক্তে। আপিলের সুযোগ পেলেও তিন বছরেও আপিল করেনি কলেজ কতৃপক্ষ। ফলস্বরূপ ভূমি কর বকেয়া থাকায় মহিলা কলেজ এমপিওভুক্ত করন বাতিল হয়ে যায়। যদিও খাজনা ২০১২ সাল পর্যন্ত পরিশোধিত হয়। বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। কলেজটিতে প্রায় শিক্ষক সহ কর্মচারী রয়েছেন অর্ধশতাধিক। প্রতিমাসে বেতনের জন্য খরচ হয় প্রায় ৩লাখ টাকা।উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত দুটি শাখায় অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা।
কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উম্মে হানী বর্তমান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিষয় বলেন, টিপু নিজের ইচ্ছেমত কলেজ পরিচালনা করছেন। শিক্ষক - শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণ করেন প্রতিনিয়ত। কলেজের সকল শিক্ষকরা তার বিরুদ্ধে কলেজ কমিটির সভাপতি ও এমপি মহোদ্বয়ের কাছে অভিযোগ ও অনাস্থা পত্র দেয়া হয়েছে। তার অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতার জন্য কলেজের দূর্নাম হচ্ছে। তাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজহারুল আনোয়ার টিপু বলেন,আমার অনুপস্থিতে ক্লাস বন্ধ করে দেয়া, আমার নাম ধরে হুমকি প্রাণনাশের, সিসি ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া, নেম প্লেট নিয়ে যাওয়া, অডিট কমিটির অডিটের সময় লাইন বিচ্ছিন্ন করা সহ বিশৃঙ্খলা করছেন উম্মে হানীর নেতৃত্বে মিরাজ সহ কিছু বিপথগামী শিক্ষকরা। বর্তমানে আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কলেজের আধুনিকীকরণে কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষকদের রুম, ল্যাব, শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষকদের অনিয়মরোধে কঠোর ভূমিকা রেখেছি। আমি দায়িত্বে থেকে কোন অনিয়মের প্রশ্নই উঠে না। এগুলো কিছু শিক্ষক আমার কলেজের সহকর্মীদের ভুলবাল বুজিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চায়, দায়িত্ব নিয়ে ফের অনিয়ম করতে চায়। অনিয়মের সুযোগ না দেয়ায়, পড়াশোনার ব্যাপারে কঠোরতার কারনেই একটি চক্র আমার বিরোধে উঠেপড়ে লেগেছে।
রায়পুর মহিলা কলেজ সংক্রান্ত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লুবনা চৌধুরী বলেন, এমপিওভুক্ত সমস্যাটি দীর্ঘদিনের তবুও আমরা এবার আবেদন করেছিলাম, তবে কলেজের প্রশাসনিক জটিলতায় এমপিও হয়নি। জায়গা নিয়ে সমস্যার বিষয়ে আমরা আদালতে মামলা করেছি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়ে জটিলতা চলছে এটি সত্য। খুব শীগ্রই স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। শিক্ষার্থী ও কলেজের স্বার্থে সর্বোচ্চ ভালো কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক-কর্মচারীরা বিনা বেতনে চাকরি করে আসছেন। কলেজটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।