ঢাকা ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রায়পুরে বন্ধুকে হত্যার দায়ে ৩ বন্ধুর যাবজ্জীবন করাদন্ড প্রদান।

রায়পুরে মো. নিশান (৩০) নামে এক যুবককে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে তার তিন বন্ধুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।

জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জেলার রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চারকাছিয়া গ্রামের ওসমান গনি ছৈয়ালের ছেলে নুর মোহাম্মদ ছৈয়াল (৩৬), একই গ্রামের মৃত খোরশেদ মোল্লার ছেলে নোমান হোসেন (৩২) এবং চরলক্ষ্মী গ্রামের সেকান্দার সর্দারের ছেলে আবদুল্যা ওরফে জাইল্যা আবদুল্যা (৩৪)।

তাদের মধ্যে রায়ের সময় নুর মোহাম্মদ ছৈয়াল ও নোমান হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।অন্যজন পলাতক। ভিকটিম নিশান সদর উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামের আবদুল বারেক বেপারীর পালক ছেলে। নিশান তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রায়পুর উপজেলার চরকাছিয়া গ্রামে বসবাস করতেন।
মামলার এজাহার ও পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি রাতে নিশান তার স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। রাত ১০টার দিকে তার বন্ধু নুর মোহাম্মদ ও আবদুল্লাহ বাড়িতে তাকে ডেকে নিয়ে যান। ওই রাতে নিশান আর বাড়ি না ফেরায় স্ত্রী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। স্বনজ ও স্থানীয় লোকজন অনেক খোঁজার পর ৮ জানুয়ারি বিকেলে বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ের একটি গাছের ডালে গলায় গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় নিশানের মৃতদেহ পাওয়া যায়। পরে পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করায়। এতে জানা যায় যে নিশানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ৮ জানুয়ারি রায়পুর থানায় তিন বন্ধু নুর মোহাম্মদ, নোমান হোসেন ও আবদুল্লাহর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও দুই/তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিশানের স্ত্রী বিউটি আক্তার। পরে পুলিশ নুর মোহাম্মদ এবং নোমানকে গ্রেফতার করে।

শুরুতে রায়পুর থানাধীন হাজিমারা পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা মামলাটি তদন্ত করলেও পরে নোয়াখালী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) হত্যা মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেন আদালত।

২০২১ সালের ৩১ আগস্ট নোয়াখালী পিবিআইর সেই সময়ের পরিদর্শক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম উল্লিখিত তিন আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন৷

পিবিআইর তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিশান এবং অভিযুক্তরা পরস্পর বন্ধু। তাদের নির্দিষ্ট কোনো পেশা ছিল না। মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা, চুরি এবং অসামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তারা জড়িত ছিলেন। নিশান তাদের পুকুর থেকে ১৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছিলেন। ওই টাকা এবং মাদক বিক্রির টাকার ভাগকে কেন্দ্র করে নিশানের সঙ্গে আসামিদের মনোমালিন্য হয়েছিল। এর জের ধরে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে নিশানকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন।

মামলার শুনানি শেষে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় মঙ্গলবার এ রায় দেন আদালত।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

লক্ষ্মীপুরের উত্তরচরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির বিলুপ্ত  

রায়পুরে বন্ধুকে হত্যার দায়ে ৩ বন্ধুর যাবজ্জীবন করাদন্ড প্রদান।

আপডেট : ০৮:১৮:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০২৩

রায়পুরে মো. নিশান (৩০) নামে এক যুবককে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে তার তিন বন্ধুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।

জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জেলার রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চারকাছিয়া গ্রামের ওসমান গনি ছৈয়ালের ছেলে নুর মোহাম্মদ ছৈয়াল (৩৬), একই গ্রামের মৃত খোরশেদ মোল্লার ছেলে নোমান হোসেন (৩২) এবং চরলক্ষ্মী গ্রামের সেকান্দার সর্দারের ছেলে আবদুল্যা ওরফে জাইল্যা আবদুল্যা (৩৪)।

তাদের মধ্যে রায়ের সময় নুর মোহাম্মদ ছৈয়াল ও নোমান হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।অন্যজন পলাতক। ভিকটিম নিশান সদর উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামের আবদুল বারেক বেপারীর পালক ছেলে। নিশান তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রায়পুর উপজেলার চরকাছিয়া গ্রামে বসবাস করতেন।
মামলার এজাহার ও পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি রাতে নিশান তার স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। রাত ১০টার দিকে তার বন্ধু নুর মোহাম্মদ ও আবদুল্লাহ বাড়িতে তাকে ডেকে নিয়ে যান। ওই রাতে নিশান আর বাড়ি না ফেরায় স্ত্রী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। স্বনজ ও স্থানীয় লোকজন অনেক খোঁজার পর ৮ জানুয়ারি বিকেলে বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ের একটি গাছের ডালে গলায় গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় নিশানের মৃতদেহ পাওয়া যায়। পরে পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করায়। এতে জানা যায় যে নিশানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ৮ জানুয়ারি রায়পুর থানায় তিন বন্ধু নুর মোহাম্মদ, নোমান হোসেন ও আবদুল্লাহর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও দুই/তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিশানের স্ত্রী বিউটি আক্তার। পরে পুলিশ নুর মোহাম্মদ এবং নোমানকে গ্রেফতার করে।

শুরুতে রায়পুর থানাধীন হাজিমারা পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা মামলাটি তদন্ত করলেও পরে নোয়াখালী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) হত্যা মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেন আদালত।

২০২১ সালের ৩১ আগস্ট নোয়াখালী পিবিআইর সেই সময়ের পরিদর্শক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম উল্লিখিত তিন আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন৷

পিবিআইর তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিশান এবং অভিযুক্তরা পরস্পর বন্ধু। তাদের নির্দিষ্ট কোনো পেশা ছিল না। মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা, চুরি এবং অসামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তারা জড়িত ছিলেন। নিশান তাদের পুকুর থেকে ১৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছিলেন। ওই টাকা এবং মাদক বিক্রির টাকার ভাগকে কেন্দ্র করে নিশানের সঙ্গে আসামিদের মনোমালিন্য হয়েছিল। এর জের ধরে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে নিশানকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন।

মামলার শুনানি শেষে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় মঙ্গলবার এ রায় দেন আদালত।