ঢাকা ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রামগঞ্জে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সংরক্ষণ হয়নি গণকবরগুলো, সংরক্ষণের আশ্বাস ইউএনও’র

  • ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট : ০৯:৫১:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২২
  • ০ জন পড়েছেন

মহান স্বাধীনতা দিবসের ৫০ বছর পূর্ণ হলেও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে এখনো যুদ্ধকালীন গণকবরগুলো সংরক্ষণ করা হয়নি। হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের পর লাশগুলো যেসব স্থানে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে, সেসব স্থান সরকারিভাবে সংরক্ষণের দাবি উঠেছে সচেতন মহল থেকে।

মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় সচেতন বলছেন এসব গণকবর চিহ্নিত হলে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে আগামী প্রজন্মের জন্য সহজ হবে। তা না হলে আগামী প্রজন্মের কাছে যুদ্ধের ইতিহাস অজানাই থেকে যাবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন পাকিস্তানীরা হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা বর্তমান রামগঞ্জ পৌরসভার রতনপুর এলাকার রামগঞ্জ সরকারি কলেজে ক্যাম্প স্থাপন করে। এসময় তারা নিরীহ শত শত মানুষকে ক্যাম্পে এনে গুলি করে হত্যা করেছিল।

পরে কলেজের উত্তর পাশে রতনপুর এলাকার একটি ডোবায় ফেলে মাটি চাপা দিয়ে দেয়। যুদ্ধের একদিন হানাদার বাহিনী রায়পুরের মীরগঞ্জ এলাকা থেকে ২০-২৫ জনকে ধরে এনে হত্যা করে। পরে লাশগুলো ওয়াপদা বেড়িবাঁধে মাটি চাপা দিয়ে দেয়। এসব স্থান সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন সময় দাবি করা হলেও ৫০ বছরেও তা করা হয়নি। ২৫ মার্চ দেশের অন্যান্য স্থানে গণহত্যা দিবসের স্মৃতিস্তম্ভ বা গণকবরে ফুলেল শ্রদ্ধা জানালেও রামগঞ্জে তা সম্ভব হচ্ছে না। একটি স্মৃতি স্তম্ভ থাকলে আনুষ্ঠানিকভাবে গণহত্যা দিবস পালন করা যাবে বলে গণমাধ্যমকর্মী মাহমুদ ফারুক দাবি করেন।

এদিকে রতনপুর এলাকার গণকবরের ওই জমির মালিক লিয়াকত হোসেন বলেন, জমিটি শুনেছি গণকবর হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে। এজন্য আমি জমিটি বিক্রিও করতে পারছি না। সরকারও জমিটি অধিগ্রহণ করছে না। এতে আমি বিপাকে রয়েছি।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের সঙ্গেই আমাদের কথা হয়। এজন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। কিন্ত আগামি প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা হুমকিতে রয়েছে। যুদ্ধকালীন রামগঞ্জে গণকবরগুলো এখনো চিহ্নিত করা হয়নি। যুদ্ধের ইতিহাস আগামি প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে গণকবরগুলো সরকারিভাবে সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি। স্থানগুলো চিহ্নিত হলে আমরা গণহত্যা দিবসসহ বিভিন্ন সময় শহীদদের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা জানাতে পারবো।

বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড আমির হোসেন জানান, যুদ্ধকালীন শত শত মানুষকে হত্যা করে রতনপুর এলাকা ডোবা ও পাশের একটি ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয়। পরে সেখানেই লাশগুলো মাটি ছাপা দিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় ৫ বছর আগে ওই ডোবার একাংশে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি যে অংশ এখনো খালি আছে, তা যুদ্ধের ইতিহাস হিসেবে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম রুহুল আমিনের সঙ্গে এনিয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, রতনপুর ও ওয়াপদা সড়কের পাশে হানাদার বাহিনীরা শত শত মানুষকে হত্যা করে মাটি ছাপা দিয়ে রেখেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও ওইসব স্থান সংরক্ষণ করা হয়নি। এজন্য সরকারিভাবে দ্রুত ওই স্থানগুলোতে গণকবর স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করার দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে স্বাধীনতার ইতিহাস আগামি প্রজন্মের কাছে অজানাই থেকে যাবে।

রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে হাবিবা মিরা বলেন, যুদ্ধকালীন গণকবরগুলো সংরক্ষণে আমাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি। গণকবরগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

চুরির অপবাদে প্রকাশ্যেই খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন,জড়িতদের ধরতে অভিজান চলছে – ওসি সদর

রামগঞ্জে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সংরক্ষণ হয়নি গণকবরগুলো, সংরক্ষণের আশ্বাস ইউএনও’র

আপডেট : ০৯:৫১:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২২

মহান স্বাধীনতা দিবসের ৫০ বছর পূর্ণ হলেও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে এখনো যুদ্ধকালীন গণকবরগুলো সংরক্ষণ করা হয়নি। হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের পর লাশগুলো যেসব স্থানে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে, সেসব স্থান সরকারিভাবে সংরক্ষণের দাবি উঠেছে সচেতন মহল থেকে।

মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় সচেতন বলছেন এসব গণকবর চিহ্নিত হলে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে আগামী প্রজন্মের জন্য সহজ হবে। তা না হলে আগামী প্রজন্মের কাছে যুদ্ধের ইতিহাস অজানাই থেকে যাবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন পাকিস্তানীরা হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা বর্তমান রামগঞ্জ পৌরসভার রতনপুর এলাকার রামগঞ্জ সরকারি কলেজে ক্যাম্প স্থাপন করে। এসময় তারা নিরীহ শত শত মানুষকে ক্যাম্পে এনে গুলি করে হত্যা করেছিল।

পরে কলেজের উত্তর পাশে রতনপুর এলাকার একটি ডোবায় ফেলে মাটি চাপা দিয়ে দেয়। যুদ্ধের একদিন হানাদার বাহিনী রায়পুরের মীরগঞ্জ এলাকা থেকে ২০-২৫ জনকে ধরে এনে হত্যা করে। পরে লাশগুলো ওয়াপদা বেড়িবাঁধে মাটি চাপা দিয়ে দেয়। এসব স্থান সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন সময় দাবি করা হলেও ৫০ বছরেও তা করা হয়নি। ২৫ মার্চ দেশের অন্যান্য স্থানে গণহত্যা দিবসের স্মৃতিস্তম্ভ বা গণকবরে ফুলেল শ্রদ্ধা জানালেও রামগঞ্জে তা সম্ভব হচ্ছে না। একটি স্মৃতি স্তম্ভ থাকলে আনুষ্ঠানিকভাবে গণহত্যা দিবস পালন করা যাবে বলে গণমাধ্যমকর্মী মাহমুদ ফারুক দাবি করেন।

এদিকে রতনপুর এলাকার গণকবরের ওই জমির মালিক লিয়াকত হোসেন বলেন, জমিটি শুনেছি গণকবর হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে। এজন্য আমি জমিটি বিক্রিও করতে পারছি না। সরকারও জমিটি অধিগ্রহণ করছে না। এতে আমি বিপাকে রয়েছি।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের সঙ্গেই আমাদের কথা হয়। এজন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। কিন্ত আগামি প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা হুমকিতে রয়েছে। যুদ্ধকালীন রামগঞ্জে গণকবরগুলো এখনো চিহ্নিত করা হয়নি। যুদ্ধের ইতিহাস আগামি প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে গণকবরগুলো সরকারিভাবে সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি। স্থানগুলো চিহ্নিত হলে আমরা গণহত্যা দিবসসহ বিভিন্ন সময় শহীদদের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা জানাতে পারবো।

বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড আমির হোসেন জানান, যুদ্ধকালীন শত শত মানুষকে হত্যা করে রতনপুর এলাকা ডোবা ও পাশের একটি ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয়। পরে সেখানেই লাশগুলো মাটি ছাপা দিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় ৫ বছর আগে ওই ডোবার একাংশে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি যে অংশ এখনো খালি আছে, তা যুদ্ধের ইতিহাস হিসেবে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম রুহুল আমিনের সঙ্গে এনিয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, রতনপুর ও ওয়াপদা সড়কের পাশে হানাদার বাহিনীরা শত শত মানুষকে হত্যা করে মাটি ছাপা দিয়ে রেখেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও ওইসব স্থান সংরক্ষণ করা হয়নি। এজন্য সরকারিভাবে দ্রুত ওই স্থানগুলোতে গণকবর স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করার দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে স্বাধীনতার ইতিহাস আগামি প্রজন্মের কাছে অজানাই থেকে যাবে।

রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে হাবিবা মিরা বলেন, যুদ্ধকালীন গণকবরগুলো সংরক্ষণে আমাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি। গণকবরগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।