ঢাকা ১১:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষকলীগ নেতা রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ,তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা – জেলা প্রশাসক।

মাহমুদুর রহমান মনজু: লক্ষ্মীপুর

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হিজবুল বাহার রানার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তার অপসারণ চেয়ে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আবুল বাছেদসহ গভর্নিং বডির ১১ জন সদস্য।

লিখিত অভিযোগপত্রে সভাপতি হিজবুল বাহার রানার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, নিয়োগ বাণিজ্যের চেষ্টা, বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ ও সংসদ সদস্যের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করার অভিযোগ আনা হয়।

হিজবুল বাহার রানা কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের বশিকপুর গ্রামের মানিক বাড়ির বাসিন্দা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে বশিকপুর স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের জন্য স্থানীয় লোকজন, অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। তাদের সাথে যোগ দেন কৃষকলীগ নেতা হিজবুল বাহার রানা। পরে তিনি রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে এবং স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে গভর্নিং বডির সভাপতির পদ পান। শুরু থেকেই তিনি বহিরাগত লোক নিয়ে কলেজে মহড়া দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেন। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষ নুরুল হুদা বকুলের চাকুরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে প্রতিষ্ঠানে ২৯ বছর ধরে কর্মরত সিনিয়র শিক্ষক আবদুল বাছেদকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু সভাপতি হিজবুল বাহার রানা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে শিক্ষকসহ প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বাণিজ্যের অপচেষ্টা চালান। প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে টাকা তোলেন। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্যের কাছ থেকে এক লাখ টাকা একটি প্রকল্পের মধ্যে ২৭ হাজার টাকা প্রতিষ্ঠানে জমা দেন। বাকী টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। আরও একটি প্রকল্প বরাদ্দ নিলেও প্রতিষ্ঠানের কাউকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করা হয়নি।

এছাড়া রানার বিরুদ্ধে মসজিদের টাকা আত্মসাৎ ও সনদ জালিয়াতির অভিযোগে আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। ।
তার বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে ইতোমধ্যে অভিভাবক সদস্য এবং স্থানীয়রা কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হলেও তদন্ত প্রতিবেদন দৃশ্যমান হয়নি। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগের জন্য তিনি একটি বিজ্ঞপ্তি ছাড়েন। যা বহুল প্রচারিত পত্রিকায় না দিয়ে নামসর্বস্ব একটি পত্রিকায় চাপা হয়। ফলে বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি কেউ অবগত হয়নি। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তার পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে এমন পাঁয়তারা করেছেন তিনি। এনিয়ে কমিটির অন্য সদস্যদের সাথে তার হট্রগোল দেখা দেয়।

গত ১২ এপ্রিল এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানের ব্যানারে তার নাম না থাকায় তিনি শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। ফলে তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আবদুল বাছেদ দাবি করেন, অনৈতিক কর্মকান্ড প্রশ্রয় না দেওয়ায় তাকে বিভিন্ন হুমকি দেন সভাপতি রানা। এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভয় দেখিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে রেজুলেশন বই ও গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে যান তিনি।

হিজবুল বাহার রানার ঔদ্ধত্তপূর্ণ আচরণের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় লোকজন অভিভাবক সদস্যরা। ফলে তারা গভর্নিং বিডির সভাপতির পদ থেকে রানার অপসারণ দাবি করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হিজবুল বাহার রানা বলেন, রেজুলেশান বইয়ের মালিক সভাপতি দাবি করে বলেন, বিএনপি জামায়াতের মদদে অধ্যক্ষ এধরনের কাজ করছেন। রেজুলেশান বই তার কাছে রাখা কতটুকু যুক্তিযুক্ত এমন প্রশ্ন করলে তিনি বইয়ের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। নিয়োগ বাণিজ্যসহ সব ধরনের অভিযোগ ষড়যন্ত্র দাবি করে তিনি বলেন, শিক্ষা বোর্ড যে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি তা মেনে নিবেন।

সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, রেজুলেশান বই থাকবে প্রতিষ্ঠানে, এটি কারো কাছে রাখার কোন ভিত্তি নেই।

পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, প্রতিষ্ঠান প্রধানকে হুমকি দেয়ার বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন এসপি।

জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

লক্ষ্মীপুরের উত্তরচরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির বিলুপ্ত  

© All rights reserved © লক্ষ্মীপুর বুলেটিন
কারিগরি সহযোগিতায়ঃ Diggil Agency

কৃষকলীগ নেতা রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ,তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা – জেলা প্রশাসক।

আপডেট : ০৪:৪৬:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৩

মাহমুদুর রহমান মনজু: লক্ষ্মীপুর

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হিজবুল বাহার রানার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তার অপসারণ চেয়ে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আবুল বাছেদসহ গভর্নিং বডির ১১ জন সদস্য।

লিখিত অভিযোগপত্রে সভাপতি হিজবুল বাহার রানার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, নিয়োগ বাণিজ্যের চেষ্টা, বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ ও সংসদ সদস্যের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করার অভিযোগ আনা হয়।

হিজবুল বাহার রানা কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের বশিকপুর গ্রামের মানিক বাড়ির বাসিন্দা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে বশিকপুর স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের জন্য স্থানীয় লোকজন, অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। তাদের সাথে যোগ দেন কৃষকলীগ নেতা হিজবুল বাহার রানা। পরে তিনি রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে এবং স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে গভর্নিং বডির সভাপতির পদ পান। শুরু থেকেই তিনি বহিরাগত লোক নিয়ে কলেজে মহড়া দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেন। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষ নুরুল হুদা বকুলের চাকুরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে প্রতিষ্ঠানে ২৯ বছর ধরে কর্মরত সিনিয়র শিক্ষক আবদুল বাছেদকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু সভাপতি হিজবুল বাহার রানা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে শিক্ষকসহ প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বাণিজ্যের অপচেষ্টা চালান। প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে টাকা তোলেন। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্যের কাছ থেকে এক লাখ টাকা একটি প্রকল্পের মধ্যে ২৭ হাজার টাকা প্রতিষ্ঠানে জমা দেন। বাকী টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। আরও একটি প্রকল্প বরাদ্দ নিলেও প্রতিষ্ঠানের কাউকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করা হয়নি।

এছাড়া রানার বিরুদ্ধে মসজিদের টাকা আত্মসাৎ ও সনদ জালিয়াতির অভিযোগে আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। ।
তার বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে ইতোমধ্যে অভিভাবক সদস্য এবং স্থানীয়রা কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হলেও তদন্ত প্রতিবেদন দৃশ্যমান হয়নি। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগের জন্য তিনি একটি বিজ্ঞপ্তি ছাড়েন। যা বহুল প্রচারিত পত্রিকায় না দিয়ে নামসর্বস্ব একটি পত্রিকায় চাপা হয়। ফলে বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি কেউ অবগত হয়নি। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তার পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে এমন পাঁয়তারা করেছেন তিনি। এনিয়ে কমিটির অন্য সদস্যদের সাথে তার হট্রগোল দেখা দেয়।

গত ১২ এপ্রিল এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানের ব্যানারে তার নাম না থাকায় তিনি শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। ফলে তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আবদুল বাছেদ দাবি করেন, অনৈতিক কর্মকান্ড প্রশ্রয় না দেওয়ায় তাকে বিভিন্ন হুমকি দেন সভাপতি রানা। এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভয় দেখিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে রেজুলেশন বই ও গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে যান তিনি।

হিজবুল বাহার রানার ঔদ্ধত্তপূর্ণ আচরণের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় লোকজন অভিভাবক সদস্যরা। ফলে তারা গভর্নিং বিডির সভাপতির পদ থেকে রানার অপসারণ দাবি করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হিজবুল বাহার রানা বলেন, রেজুলেশান বইয়ের মালিক সভাপতি দাবি করে বলেন, বিএনপি জামায়াতের মদদে অধ্যক্ষ এধরনের কাজ করছেন। রেজুলেশান বই তার কাছে রাখা কতটুকু যুক্তিযুক্ত এমন প্রশ্ন করলে তিনি বইয়ের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। নিয়োগ বাণিজ্যসহ সব ধরনের অভিযোগ ষড়যন্ত্র দাবি করে তিনি বলেন, শিক্ষা বোর্ড যে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি তা মেনে নিবেন।

সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, রেজুলেশান বই থাকবে প্রতিষ্ঠানে, এটি কারো কাছে রাখার কোন ভিত্তি নেই।

পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, প্রতিষ্ঠান প্রধানকে হুমকি দেয়ার বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন এসপি।

জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।