মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ :
ভোলা (ইলিশা) - রায়পুর - ঢাকা নদী পথে লঞ্চ চলাচলের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। রায়পুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাষ্টার আলতাফ হোসেন মাছ ঘাটকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অঘোষিত পর্যটন কেন্দ্র। তবে রায়পুর জুড়ে কোথাও স্থায়ী সরকারি লঞ্চ ঘাট না থাকায় এই উপজেলার মানুষের সাথে নদী পথে যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন আধুনিক পরিবর্তন হয়নি।
সম্প্রতি চাঁদপুর নৌ -বন্দর উপপরিচালক শাহাদাৎ হোসেন এর নেতৃত্বে একটি টিম অক্টোবর মাসে আলতাফ মাষ্টার ঘাট পরিদর্শনে আসেন। প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে তারা জনগনের সাথে কথা বলে ঘাট ও রাস্তা দূরত্ব দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন লঞ্চ ঘাট স্থাপনে।
স্থানীয় অনলাইন এক্টিভিটস পশ্চিমাঞ্চল পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা তাহসিন হাওলাদার বলেন, সড়কপথে ঢাকা থেকে কুমিল্লা হয়ে লক্ষ্মীপুর শহর পর্যন্ত দূরত্ব ২০৪ কিলোমিটার ( ঢাকা-কুমিল্লা ১০৪ কিমি+কুমিল্লা-চৌমুহনী ৬৪ কিমি+চৌমুহনী-লক্ষ্মীপুর ৩৫ কিমি) । কিন্ত রামগঞ্জ-গৌরিপুর কুমিল্লা হয়ে দূরত্ব ১৪০ কিমি।তবে নৌপথে এ দূরত্ব ১২৫ কিলোমিটার রায়পুর পর্যন্ত।
হায়দরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী ইলিয়াস হাওলাদার বলেন,
ভোলা, চাঁদপুর সরকারি ঘাট ও ঢাকায় নদী পথে লঞ্চ চলাচল করলেও আমাদের রায়পুরে নৌপথ চালু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এর সুবিধা পাচ্ছে না রায়পুরবাসী। ফলে রায়পুর সহ অন্যান্য উপজেলা বাসীর প্রধান দাবি হয়ে উঠেছে, যত দ্রুত সম্ভব লঞ্চ চালু করা। বর্তমানে চাঁদপুর হয়ে মেঘনা নদীর ধরে লক্ষ্মীপুরের বিপুলসংখ্যক জনগণ ভোলা - ইলিশা - হিজলা - শরীয়তপুর সহ ঢাকা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। চাঁদপুরের পর রায়পুর হয়ে লক্ষ্মীপুর আসতে সিএনজি সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে বিপুল কষ্ট পায় এবং অর্থ অপচয় হয় সাধারণ মানুষের।লঞ্চ চলাচল শুরু হলে সয়াবিন, সুপারি, নারিকেল, পান, ফসল, মাছ পরিবহণে সুবিধা হবে জনসাধারণের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুরে তৎকালীন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামালের লঞ্চ সার্ভিস উদ্বোধন করার কথা ছিল। তিনি লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য। কিন্তু ওই সময় লঞ্চ চালু করা সম্ভব হয়নি। সব শেষ গত বছরের ৩ মার্চ বিআইটিডাব্লিউটিএ চিঠি দিয়ে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এমভি লক্ষ্মীপুর - ঢাকা রুটে বোগদাদিয়া-৮ লঞ্চ চালুর অনুমতি দেয়। সেখানে বলা হয়, পরীক্ষামূলকভাবে এটি চলবে। এর মধ্যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে; কিন্তু নাব্যতা সংকটে লঞ্চটি চালু করা সম্ভব হয়নি।
লঞ্চ ঘাট স্থাপনের বিষয় আলতাফ হোসেন হাওলাদার বলেন, বিআইডাব্লিও চাঁদপুরের কর্মকর্তারা নতুন নৌপথ চালু করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমার ঘাটে এসেছিলেন পরিদর্শন করে গিয়েছেন। আমিও পুরোপুরি বুজার জন্য আলোচনা করেছি অফিসে যেয়ে। দুপক্ষের আলোচনা সাপেক্ষে প্রাথমিক আবেদন দিয়েছি। আমাদের এমপির ডিও দিয়ে আরেকটি আবেদন জমা দিলেই লঞ্চ ঘাটের অনুমোদন ২ মাসের মধ্যে হতে পারে। এর আগেও লঞ্চ চলাচল করতো তবে পলি পড়ে চর জেগে যাওয়ায় আসেনা লঞ্চ। সরকারি ভাবে লঞ্চ ঘাট স্থাপন হলে পাশবর্তী উপজেলার সাথে আমাদের যোগাযোগ আরো উন্নত হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। টেকসই বাঁধ নির্মাণ হবে।
চাঁদপুর নৌ বন্দর উপপরিচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, রায়পুর এর আলতাফ মাষ্টার ঘাট থেকে আশেপাশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। এখানে অনুমোদন সাপেক্ষে স্থায়ী লঞ্চ ঘাট হলে, নদী শাসন শুরু হবে। নাব্যতা সংকট কাটিয়ে অন্যতম একটি নৌপথ চালু হতে পারে।এখানে স্থায়ী ঘাট হলে এতে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে। নদীর গভীরতা বাড়লে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি ও শুষ্ক মৌসুমে ফসলি জমিতে পানি সেচে সহযোগিতাসহ পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাবের সম্ভাবনা রয়েছে। চাঁদপুর হয়ে মেঘনা নদীর এ পথে বিপুলসংখ্যক জনগণ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। প্রতিদিন এ পথে যাত্রীবাহী লঞ্চসহ মালবাহী অসংখ্য কার্গো জাহাজ চলাচল করে।এই সময়ে তিনি বলেআ কয়েক বছর আগে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর এবং লক্ষ্মীপুর-ঢাকা সরাসরি লঞ্চ সার্ভিস ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) প্রিন্স অব রাসেল-৩ নামের একটি লঞ্চ দিয়ে দেশের নতুন এ নৌপথের উদ্বোধন করেন নৌ-ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক রফিকুল ইসলাম। তিনি ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুর লঞ্চ সার্ভিস উদ্বোধন করেন। তবে নাব্যতা সংকটে লঞ্চ মালিকদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তবে আলতাফ মাষ্টার ঘাটে স্থায়ী লঞ্চ স্থাপন হলে ইলিশা থেকে ছেড়ে আসা, শরিয়তপুর থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চ, হিজলা - মূলাদি রুট সময়ে চাহিদানুসারে রায়পুর এর ঘাটটি প্রাধান্য পাবে। আমরা আবেদন পেয়েছি, আবেদন পর্যালোচনা করে আমরা পরবর্তী প্রদক্ষেপ নিবো।রায়পুর-ঢাকা নৌপথের মেঘনা নদীর নাব্যতা সংকট নিরসনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ পথের লক্ষ্মীপুর অংশে প্রায় ১০ কিলোমিটার নদী খননের জন্য ৪৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের কাজ চলমান।