ডেস্ক রিপোর্ট :
বিএনপির মিডিয়া সেলের আয়োজনে চট্টগ্রাম ক্লাব মিলনায়তনে মতবিনিময় সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ছোট ছোট দলের মেধাবী ও প্রাজ্ঞদেরও সরকারে স্থান দেবে। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে সংস্কারের উদ্যোগ নেবে বিএনপি।
‘জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরবর্তীতে জাতীয় সরকার ও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদ অপরিহার্য’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বিএনপি নেতারা।
আজ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম ক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে সভাটি আয়োজন করা হয়। মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সদস্যসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। সভায় জাতীয় সরকার নিয়ে মতামত দেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনেরা।
এ সময় মিডিয়া সেলের সদস্য বিএনপির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯০ আসন পাবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে একটি জাতীয় সরকার গঠন করবে। জাতীয় সরকারটি হবে প্রাজ্ঞ ও মেধাবীদের সম্মিলন।’
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। এ্যানি এ সময় ২০ দফা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র-রূপান্তরমূলক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার কর্তৃক ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্র ও প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কারের লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিএনপি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’
বিএনপির প্রতিশ্রুতিগুলো হলো: সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন; প্রশাসনিক সংস্কারের লক্ষ্যে প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন; ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জুডিশিয়াল কমিশন; গণমাধ্যমের স্বাধীনতার লক্ষ্যে মিডিয়া কমিশন; অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন; নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে প্রবর্তন; রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ সকল প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ন; স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যে ‘নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন’ সংশোধন; আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন; সংসদীয় কমিটির ভেটিং সাপেক্ষে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়োগ; বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণে একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা ও যোগ্যতমদের বিচারপতি নিয়োগে লক্ষ্যে সংবিধানের ৯৫ (গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘বিচারপতি নিয়োগ আইন’ প্রবর্তন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আয়োজনে চট্টগ্রাম ক্লাব মিলনায়তনে মতবিনিময় সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা
এ ছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধে সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ নিয়োগ; প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীর নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ; নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং এই খাতের দায়মুক্তি আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল; বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ নীতি গ্রহণ; সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা; ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীন ও শক্তিশালী গড়ে তোলা; মুক্তিযুদ্ধে শহীদ এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং জাতীয় সংসদে নারী আসন বাড়ানোরও পরিকল্পনা।
উল্লেখ্য, সংবিধানের অনুচ্ছেদটি অবাধ ভোট প্রতিরোধ এবং সংসদ সদস্যদের দল পরিবর্তন করতে প্রভাব ফেলে। সংসদ সদস্যরা তাঁদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাঁদের সংসদীয় আসন হারান। বাংলাদেশের সংসদ মূলত ক্ষমতাসীন দল বা জোটের গৃহীত পদক্ষেপের অনুকূলে থাকা নিশ্চিত করে ৭০ অনুচ্ছেদ। সংসদও প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের জন্য অনাস্থা ভোট দিতে অক্ষম।
অনুচ্ছেদটি যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার আইনসভার মতো ওয়েস্টমিনস্টার সিস্টেমের পাশাপাশি অন্যান্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, যেমন—মার্কিন কংগ্রেস এবং জাপানি ডায়েটের নিয়মের বিপরীত।