ঢাকা ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যা কাটলেও জলবদ্ধতায় নাকাল লক্ষ্মীপুরবাসী,চলছে ত্রাণ বিতরণও

  • ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট : ০৪:৩৯:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ২ জন পড়েছেন

   লক্ষ্মীপুরের অনেক এলাকায় এখনো বন্যা পরিস্থিতি রয়ে গিয়েছে। শুক্রবার জেলার ৫টি উপজেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাপ্ত তথ্যও সচিত্র প্রতিবেদনে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর, রামগতি, রায়পুরের কেরোয়া, সদরের ভবানীগঞ্জ এলাকায় বন্যার পানি নামতে না নামতে হানা দিয়েছে ফের জলাবদ্ধতা। টানা বৃষ্টি ও জলবদ্ধতায় অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়ায় ও তারে গাছ উপড়ে পড়ার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন। আজ শুক্রবার দুপুরে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শুক্রবার (২৭ শে সেপ্টেম্বর ) লক্ষ্মীপুর ক্লাব লিমিটেড এর পক্ষ থেকে লক্ষ্মীপুর সদরের বন্যার্ত এলাকায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের সুতারগুপ্তা নামক স্থানে এখনো পানিবন্দি প্রায় ৫০০ পরিবার। শুক্রবার বেলা ১১টায় লক্ষ্মীপুর ক্লাব লিমিটেডের উদ্যোগে প্রায় ১৫০ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এদিকে পানি বন্দী ফাইভ স্টার স্কুল এন্ড কলেজ এর ৪৮টি বেঞ্চ বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি বন্দী হওয়ার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থাও ব্যাহত হচ্ছে। বন্যার্তদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি ফাইভ স্টার স্কুল এন্ড কলেজকে আর্থিক অনুদান প্রদান করে লক্ষ্মীপুর ক্লাব লিমিটেড। সভাপতি মঈন উদ্দিন চৌধুরী কামরু ও সহ সভাপতি আব্দুর রব শামীমসহ পরিচালক বোর্ডের নির্দেশনায় ও ক্লাবের দেশী প্রবাসী সদস্যদের সহযোগিতায় উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির জুয়েল, সদস্য তায়েফ আলী চৌধুরী, নুরুল আমিন এয়াদ, আব্দুল গনি, নাসির উদ্দিন নিনু, এডভোকেট মুন্তাসিম মুন্না, আব্দুল্লাহ আল খালেদ, এডভোকেট আশিকুর রহমান, মোঃ আমিনুল ইসলাম রাজুসহ প্রমুখ

কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে জেলার মেঘনা নদীসহ খাল-বিলের পানি বেড়ে গেছে। এতে জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। জেলার পাঁচ উপজেলার প্রায় অধিকাংশ ইউনিয়ন এখন পানিতে ডুবে আছে। যেদিকে চোখ যাচ্ছে, শুধু পানি আর পানি। গ্রামের পর গ্রাম, মাঠের পর মাঠ পানিতে ডুবে আছে। এ কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন লাখো মানুষ।

লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের তথ্যমতে, লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৫ লাখ ৩৭ হাজার গ্রাহক আছেন। এর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলার পাঁচটি উপজেলায় অনেক বিদ্যুতের খুঁটি হেলে পড়েছে। অনেক স্থানে গাছ উপড়ে পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। এতে তারগুলো পানিতে ডুবে গেছে। গ্রাহকের নিরাপত্তার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। চার দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। এ সমস্যা সাময়িক জানিয়ে তিনি বলেন, পানি কমে গেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, জেলায় চাষাবাদ করা প্রায় ৫৪ হাজার পুকুর আছে। এর মধ্যে ৪০ হাজার পুকুর ডুবে ৯০ শতাংশ মাছ ভেসে গেছে। ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির চাষের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এতে মৎস্যচাষিদের প্রায় ৮০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হতে পারে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, নদীতে ভাটা এলে জলাবদ্ধতা নিরসনে সব কটি স্লুইচ গেট খুলে দেওয়া হয়। আবার জোয়ারের সময় গেটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সার্বক্ষণিক তাঁদের কর্মীরা পর্যবেক্ষণে আছেন। এখনো মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বৃষ্টি ও জোয়াররে নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এক-দুই দিনের মধ্যে পানি ধীরে ধীরে কমতে পারে।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক বলেন রাজীব কুমার রায় বলেন , বন্যার পর থেকে লক্ষ্মীপুরে প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। প্রায় দুই শতাধিক বাধ রয়েছে বিভিন্ন খালে -বিলে। সেগুলি অপসারণ শুরু করেছি। আশা রাখি দ্রুত পানি নেমে যাবে। এসব এলাকা এখনো জলবদ্ধতা রয়েছে সেখানে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

লক্ষ্মীপুরের উত্তরচরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির বিলুপ্ত  

বন্যা কাটলেও জলবদ্ধতায় নাকাল লক্ষ্মীপুরবাসী,চলছে ত্রাণ বিতরণও

আপডেট : ০৪:৩৯:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

   লক্ষ্মীপুরের অনেক এলাকায় এখনো বন্যা পরিস্থিতি রয়ে গিয়েছে। শুক্রবার জেলার ৫টি উপজেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাপ্ত তথ্যও সচিত্র প্রতিবেদনে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর, রামগতি, রায়পুরের কেরোয়া, সদরের ভবানীগঞ্জ এলাকায় বন্যার পানি নামতে না নামতে হানা দিয়েছে ফের জলাবদ্ধতা। টানা বৃষ্টি ও জলবদ্ধতায় অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়ায় ও তারে গাছ উপড়ে পড়ার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন। আজ শুক্রবার দুপুরে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শুক্রবার (২৭ শে সেপ্টেম্বর ) লক্ষ্মীপুর ক্লাব লিমিটেড এর পক্ষ থেকে লক্ষ্মীপুর সদরের বন্যার্ত এলাকায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের সুতারগুপ্তা নামক স্থানে এখনো পানিবন্দি প্রায় ৫০০ পরিবার। শুক্রবার বেলা ১১টায় লক্ষ্মীপুর ক্লাব লিমিটেডের উদ্যোগে প্রায় ১৫০ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এদিকে পানি বন্দী ফাইভ স্টার স্কুল এন্ড কলেজ এর ৪৮টি বেঞ্চ বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি বন্দী হওয়ার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থাও ব্যাহত হচ্ছে। বন্যার্তদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি ফাইভ স্টার স্কুল এন্ড কলেজকে আর্থিক অনুদান প্রদান করে লক্ষ্মীপুর ক্লাব লিমিটেড। সভাপতি মঈন উদ্দিন চৌধুরী কামরু ও সহ সভাপতি আব্দুর রব শামীমসহ পরিচালক বোর্ডের নির্দেশনায় ও ক্লাবের দেশী প্রবাসী সদস্যদের সহযোগিতায় উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির জুয়েল, সদস্য তায়েফ আলী চৌধুরী, নুরুল আমিন এয়াদ, আব্দুল গনি, নাসির উদ্দিন নিনু, এডভোকেট মুন্তাসিম মুন্না, আব্দুল্লাহ আল খালেদ, এডভোকেট আশিকুর রহমান, মোঃ আমিনুল ইসলাম রাজুসহ প্রমুখ

কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে জেলার মেঘনা নদীসহ খাল-বিলের পানি বেড়ে গেছে। এতে জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। জেলার পাঁচ উপজেলার প্রায় অধিকাংশ ইউনিয়ন এখন পানিতে ডুবে আছে। যেদিকে চোখ যাচ্ছে, শুধু পানি আর পানি। গ্রামের পর গ্রাম, মাঠের পর মাঠ পানিতে ডুবে আছে। এ কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন লাখো মানুষ।

লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের তথ্যমতে, লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৫ লাখ ৩৭ হাজার গ্রাহক আছেন। এর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলার পাঁচটি উপজেলায় অনেক বিদ্যুতের খুঁটি হেলে পড়েছে। অনেক স্থানে গাছ উপড়ে পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। এতে তারগুলো পানিতে ডুবে গেছে। গ্রাহকের নিরাপত্তার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। চার দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। এ সমস্যা সাময়িক জানিয়ে তিনি বলেন, পানি কমে গেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, জেলায় চাষাবাদ করা প্রায় ৫৪ হাজার পুকুর আছে। এর মধ্যে ৪০ হাজার পুকুর ডুবে ৯০ শতাংশ মাছ ভেসে গেছে। ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির চাষের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এতে মৎস্যচাষিদের প্রায় ৮০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হতে পারে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, নদীতে ভাটা এলে জলাবদ্ধতা নিরসনে সব কটি স্লুইচ গেট খুলে দেওয়া হয়। আবার জোয়ারের সময় গেটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সার্বক্ষণিক তাঁদের কর্মীরা পর্যবেক্ষণে আছেন। এখনো মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বৃষ্টি ও জোয়াররে নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এক-দুই দিনের মধ্যে পানি ধীরে ধীরে কমতে পারে।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক বলেন রাজীব কুমার রায় বলেন , বন্যার পর থেকে লক্ষ্মীপুরে প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। প্রায় দুই শতাধিক বাধ রয়েছে বিভিন্ন খালে -বিলে। সেগুলি অপসারণ শুরু করেছি। আশা রাখি দ্রুত পানি নেমে যাবে। এসব এলাকা এখনো জলবদ্ধতা রয়েছে সেখানে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে।