ঢাকা ১২:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফের শুরু হলো লক্ষ্মীপুর জুড়ে মা ইলিশ রক্ষায়  সরকারি নিষেধাজ্ঞা, কারেন্ট জাল ধ্বংস। 

  • ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট : ০২:০২:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর ২০২২
  • ০ জন পড়েছেন

ফয়সাল কবির, বিশেষ প্রতিনিধি।

  মৎস্য অধিদপ্তর, লক্ষ্মীপুর কর্তৃক সদর উপজেলার মজু চৌধুরী হাট এলাকার বেইজ্জা টেক  হতে প্রায় ৫০,০০০ মিটার কারেন্ট জাল আটক করা হয় ও তা জনসম্মুখে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয় আজ বৃহস্পতিবার সকালে। জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময়ে বরাদ্ধ করা চাল লুটপাট না করে সঠিক তালিকা তৈরি করে দ্রুত তা বাস্তবায়ন করার দাবি জানান জেলেরা।

 

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৫২ হাজার জেলে রয়েছে। এদের মধ্যে ৪৩ হাজার জেলে নিবন্ধিত রয়েছে। এসব জেলে মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় ৬ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন নদীতে সব ধরনের জাল ফেলা ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

 

লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এই ১০০ কিলোমিটার মেঘনা নদী এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

 

এ সময় সব রকমের ইলিশ সংরক্ষণ, আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও মজুতকরণ নিষিদ্ধ রয়েছে। জেলেদের সচেতন করার জন্য নদী এবং উপকূলবর্তী এলাকায় মাইকিং ও পোস্টারিংসহ সব ধরনের প্রচার অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য বিভাগ। নিষেধাজ্ঞার সময় প্রতি জেলেকে ২০ কেজি হারে খাদ্য সরবরাহ করা হবে।

 

মজুচৌধুরীর হাটের জেলে কালাম মাঝি ও মতিরহাট এলাকার সফিক মাঝি জানান, জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় এবং উৎপাদন বাড়াতে সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটা মেনে জেলেরা নদীতে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। জেলেদের পুনর্বাসন করার কথা সেটা এখন পর্যন্ত হয়নি। যে পরিমাণ জেলে রয়েছে, সে পরিমাণ সরকারি খাদ্য সহায়তা দেয়া হয় না বলে অভিযোগ করেন তারা।

 

আড়তদার মিন্টু ও লিটন বলেন, ‘অসহায় জেলেরা বারবার নদীভাঙন ও বিভিন্ন প্রতিকূলতা এবং বারো মাসে নদীতে অভিযান চালিয়ে জাল পুড়ে নষ্ট করে। যারা জাল তৈরি করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের জন্য বরাদ্ধকৃত চাল লুটপাট না করে সঠিক তালিকা তৈরি করে দ্রুত যেন তা পেতে পারে, সেটা নিশ্চিত করার দাবি জানাই।’

 

অন্যদিকে  রায়পুরে মেঘনা নদী অংশে অতীতে রায়পুরে কোস্টগার্ড থাকলেও এবারই অদৃশ্য কারনে রাখা হয়নি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে আবেদনসহ একাধিকবার মোবাইলে জানালে কর্তৃপক্ষ তা না দেয়ায় চরম বিপাকে মৎস্য অফিস।

 

রায়পুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মোঃ এমদাদুল হক জানান, হাইমচরের কাটাখাল থেকে সদর উপজেলার সাহেবের চর পর্যন্ত মেঘনার রায়পুর অংশের ১২ কি:মি: এলাকায় নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে সচেতনতামূলক সভা করা হয়েছে। পৌরসভাসহ মেঘনা সংলগ্ন ১২টি বরফকলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, গ্রাম পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান ও টহল চলবে। সড়কগুলোতে বসানো হবে পুলিশের চেকপোস্ট।নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৭৫০০ হাজার। এদের মধ্যে জাটকা বা নদীর উপর নির্ভরশীল জেলে ৬৮৫০ জন। তাদেরকে এই সময় সরকারিভাবে জনপ্রতি ২০ কেজি হারে চাউল দেওয়া হবে

 

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনজন দাশ জানান,  চিঠির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। মেঘনার পাঁড়ের ৬টি মাছ ঘাটে সচেতনতামুলকসভা এবং ১৬টি কাঁচা বাজারে পোষ্টার লাগানো- মাইকিং করা হয়েছে।এসময় জেলা ও উপজেলার মৎস কর্মকর্তারাসহ পুলিশ, ইউপি সদস্য ও ৩ শতাধিক জেলে ছিলো। ২২দিনের সময় ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, মজুদ ও ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতি বছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে ইলিশের ডিম ছাড়ার আসল সময়। এ সময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নদীতে ছুটে আসে। সে বিবেচনায় প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আইন অমান্যকারীকে মৎস্য আইনে সাজা প্রদান করার বিধান রাখা হয়।

 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জানান, এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করার জন্য নদীতে মৎস্য বিভাগ, উপজেলা-জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ সময়ে জেলেদের জন্য ২০ কেজি হারে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে।

 

এরপরও যারা আইন অমান্য করে নদীতে যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। গত বছরের অভিযান সফল হওয়ায় ইলিশের উৎপাদন কয়েক গুণ বেড়েছে। এবারও অভিযান সফল হলে অধিক পরিমাণ ইলিশ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

লক্ষ্মীপুরের উত্তরচরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির বিলুপ্ত  

ফের শুরু হলো লক্ষ্মীপুর জুড়ে মা ইলিশ রক্ষায়  সরকারি নিষেধাজ্ঞা, কারেন্ট জাল ধ্বংস। 

আপডেট : ০২:০২:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর ২০২২

ফয়সাল কবির, বিশেষ প্রতিনিধি।

  মৎস্য অধিদপ্তর, লক্ষ্মীপুর কর্তৃক সদর উপজেলার মজু চৌধুরী হাট এলাকার বেইজ্জা টেক  হতে প্রায় ৫০,০০০ মিটার কারেন্ট জাল আটক করা হয় ও তা জনসম্মুখে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয় আজ বৃহস্পতিবার সকালে। জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময়ে বরাদ্ধ করা চাল লুটপাট না করে সঠিক তালিকা তৈরি করে দ্রুত তা বাস্তবায়ন করার দাবি জানান জেলেরা।

 

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৫২ হাজার জেলে রয়েছে। এদের মধ্যে ৪৩ হাজার জেলে নিবন্ধিত রয়েছে। এসব জেলে মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় ৬ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন নদীতে সব ধরনের জাল ফেলা ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

 

লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এই ১০০ কিলোমিটার মেঘনা নদী এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

 

এ সময় সব রকমের ইলিশ সংরক্ষণ, আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও মজুতকরণ নিষিদ্ধ রয়েছে। জেলেদের সচেতন করার জন্য নদী এবং উপকূলবর্তী এলাকায় মাইকিং ও পোস্টারিংসহ সব ধরনের প্রচার অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য বিভাগ। নিষেধাজ্ঞার সময় প্রতি জেলেকে ২০ কেজি হারে খাদ্য সরবরাহ করা হবে।

 

মজুচৌধুরীর হাটের জেলে কালাম মাঝি ও মতিরহাট এলাকার সফিক মাঝি জানান, জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় এবং উৎপাদন বাড়াতে সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটা মেনে জেলেরা নদীতে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। জেলেদের পুনর্বাসন করার কথা সেটা এখন পর্যন্ত হয়নি। যে পরিমাণ জেলে রয়েছে, সে পরিমাণ সরকারি খাদ্য সহায়তা দেয়া হয় না বলে অভিযোগ করেন তারা।

 

আড়তদার মিন্টু ও লিটন বলেন, ‘অসহায় জেলেরা বারবার নদীভাঙন ও বিভিন্ন প্রতিকূলতা এবং বারো মাসে নদীতে অভিযান চালিয়ে জাল পুড়ে নষ্ট করে। যারা জাল তৈরি করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের জন্য বরাদ্ধকৃত চাল লুটপাট না করে সঠিক তালিকা তৈরি করে দ্রুত যেন তা পেতে পারে, সেটা নিশ্চিত করার দাবি জানাই।’

 

অন্যদিকে  রায়পুরে মেঘনা নদী অংশে অতীতে রায়পুরে কোস্টগার্ড থাকলেও এবারই অদৃশ্য কারনে রাখা হয়নি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে আবেদনসহ একাধিকবার মোবাইলে জানালে কর্তৃপক্ষ তা না দেয়ায় চরম বিপাকে মৎস্য অফিস।

 

রায়পুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মোঃ এমদাদুল হক জানান, হাইমচরের কাটাখাল থেকে সদর উপজেলার সাহেবের চর পর্যন্ত মেঘনার রায়পুর অংশের ১২ কি:মি: এলাকায় নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে সচেতনতামূলক সভা করা হয়েছে। পৌরসভাসহ মেঘনা সংলগ্ন ১২টি বরফকলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, গ্রাম পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান ও টহল চলবে। সড়কগুলোতে বসানো হবে পুলিশের চেকপোস্ট।নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৭৫০০ হাজার। এদের মধ্যে জাটকা বা নদীর উপর নির্ভরশীল জেলে ৬৮৫০ জন। তাদেরকে এই সময় সরকারিভাবে জনপ্রতি ২০ কেজি হারে চাউল দেওয়া হবে

 

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনজন দাশ জানান,  চিঠির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। মেঘনার পাঁড়ের ৬টি মাছ ঘাটে সচেতনতামুলকসভা এবং ১৬টি কাঁচা বাজারে পোষ্টার লাগানো- মাইকিং করা হয়েছে।এসময় জেলা ও উপজেলার মৎস কর্মকর্তারাসহ পুলিশ, ইউপি সদস্য ও ৩ শতাধিক জেলে ছিলো। ২২দিনের সময় ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, মজুদ ও ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতি বছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে ইলিশের ডিম ছাড়ার আসল সময়। এ সময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নদীতে ছুটে আসে। সে বিবেচনায় প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আইন অমান্যকারীকে মৎস্য আইনে সাজা প্রদান করার বিধান রাখা হয়।

 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জানান, এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করার জন্য নদীতে মৎস্য বিভাগ, উপজেলা-জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ সময়ে জেলেদের জন্য ২০ কেজি হারে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে।

 

এরপরও যারা আইন অমান্য করে নদীতে যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। গত বছরের অভিযান সফল হওয়ায় ইলিশের উৎপাদন কয়েক গুণ বেড়েছে। এবারও অভিযান সফল হলে অধিক পরিমাণ ইলিশ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।