ঢাকাবুধবার , ২৮ আগস্ট ২০২৪
  1. International
  2. অপরাধ
  3. আত্মহত্যা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আবহাওয়া
  6. আমাদের সম্পর্কে
  7. ইসলাম
  8. খেলাধুলা
  9. গণমাধ্যম
  10. চিকিৎসা
  11. জাতীয়
  12. ত্রাণ
  13. ত্রাণ বিতরণ
  14. দিনলিপি
  15. দেশজুড়ে
আজকের সর্বশেষ সবখবর

নোয়াখালীর পানির চাপে দিশেহারা লক্ষ্মীপুরবাসী,ত্রাণ  থেকে বঞ্চিত দুর্গম গ্রামের বাসিন্দারা 

নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ২৮, ২০২৪ ৬:৩৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নতি নেই এক সপ্তাহ ধরে। আশ্রয়ের খোঁজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটছেন বানভাসীরা। 

ফেনী-নোয়াখালীর বন্যার পানি গত তিন দিন থেকে ঢুকছে লক্ষ্মীপুরে। এ ছাড়াও, টানা ভারী বর্ষণে লক্ষ্মীপুরের সর্বত্র জলাবদ্ধতায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ মানুষ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ইউনিয়নগুলোতে পানি নামতে শুরু করার পর গত শুক্রবার থেকে নোয়াখালীর বন্যার পানি রহমতখালীসহ খালসহ বিভিন্নভাবে ঢুকছে লক্ষ্মীপুরে। এতে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড ও পূর্বাঞ্চলের প্রায় সব কটি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

পানিবন্দি এলাকা ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের ৪টি পৌরসভা ও ৪৫টি ইউনিয়ন প্রায় সাড়ে ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এতদিন বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মানুষের ঘরবাড়ি ডুবে ছিল। গত দুইদিন ধরে নোয়াখালীর বন্যার পানি রহমতখালী খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরে ঢুকে পড়ছে। এতে সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের চন্দ্রগঞ্জ, চরশাহী, দিঘলী, মান্দারী, বাঙ্গাখাঁ, উত্তর জয়পুর ইউনিয়নসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কোথাও কোথাও প্রায় ৪ ফুট পানিতে ডুবে আছে জনপদ। বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

লক্ষ্মীপুরের প্রায় সবকটি এলাকা এখন পানির নিচে তলিয়ে আছে। রাস্তা-ঘাট, ফসলি মাঠ, বাড়ির উঠোন, রান্না ঘর সবখানে এখন পানি আর পানি। কোথাও বুক পরিমাণ পানি, কোথাও কোমর পর্যন্ত আবার কোথাও হাঁটুপানি। ঘরের ভেতরেও পানি। চারিদিকে থই থই করছে পানি। পানিতে তলিয়ে আছে নলকূপ, শৌচাগার।

প্রায় মসজিদ ও বিভিন্ন উপাসনালয়ের ভেতরেও পানি ঢুকে আছে। কোনো কোনো মসজিদে এখন আর নামাজ হয় না। শুধু আযান হয়। আবার কোনো মসজিদে ব্যবস্থা নেই ওযুর পানির। বাধ্য হয়ে বন্যার অপরিষ্কার পানি দিয়েই ওযু করতে হয়। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে দুর্গত গ্রামের বাসিন্দাদের। বন্যার পানির সঙ্গে শৌচাগার একাকার হয়ে আছে। সুপেয় পানির সংকট তো আছেই।

দুর্গত এলাকার বাসিন্দারা পানিবাহিত রোগসহ নানা জটিল রোগের শঙ্কায় রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বৃদ্ধ এবং শিশুরা। এদিকে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মঙ্গলবারের (২৭ আগস্টের) তুলনায় বুধবার (২৮ আগস্ট) পানি বেড়েছে অন্তত ১ ফুট। 

রামগতি ও কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা-হাজীগঞ্জ বেড়ির পশ্চিম পাশে ভুলুয়া নদীতে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পানিতে ডুবে আছে বিস্তীর্ণ জনপদ। রামগতি-কমলনগর, নোয়াখালীর আন্ডারচর ও চরমটুয়া গ্রামের ৩ লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে জীবন কাটাচ্ছেন। জলাবদ্ধতার কারণে এ পানি কোথাও সরছে না।

সময় যত যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হচ্ছে। নতুন কিরে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। আশ্রয় সংকটের পাশাপাশি বানভাসীরা ভুগছেন ওষুধ, সুপেয় পানি ও খাবার সংকটে।

অন্যদিকে বন্যায় সড়কগুলো তলিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সারাদেশ থেকে ত্রাণ ও উদ্ধার কর্মীরা জেলার ৫টি উপজেলায় প্রবেশ করলেও এখনো অনেক এলাকার মানুুষ ত্রাণ পাচ্ছেন না। শিশু, নারী, বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা সহ সববয়সী মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। 

গত এক সপ্তাহ ধরে ত্রাণ ও আশ্রয়ের খোঁজে ছোটাছুটি করছেন লক্ষ্মীপুরের মানুষেরা। বন্যায় ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় ৫ উপজেলার ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে দিশেহারা। ১৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হয়েছে মাত্র ২৫ হাজার মানুষের। গতকাল (২৭ আগস্ট) মঙ্গলবার রাত থেকে বজ্রপাতের সাথে ভারী বৃষ্টি হয়েছে লক্ষ্মীপুরে এতে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। 

আশ্রয়কেন্দ্রেও স্বস্তি নেই। দিনে ও রাতে বেশিভাগ সময় থাকছে না বিদ্যুৎ। এছাড়া পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নেই পর্যাপ্ত ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সরবরাহ।

বানভাসীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ৬৬টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন। সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে পৌঁছানো হচ্ছে ত্রাণ সহায়তা।

 সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ গ্রামের গৃহবধূ রাবেয়া বেগম। পানিবন্দি হয়েও নিজ ঘরে স্বামী-সন্তানসহ এখনো অবস্থান করছেন মূল্যবান আসবাবপত্র চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে।

তিনি বলেন, থাকার ঘরসহ চারপাশ পানিতে ডুবে আছে। চুরি হওয়ার ভয়ে আমরা ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছি না। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে আমরা কোন সহায়তাও পাচ্ছি না।

রাবেয়ার পরিবারের মতো জেলার বিভিন্ন এলাকায় এমন আরও অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়েও নিজেদের ঘর আঁকড়ে পড়ে আছেন।

স্থানীয়রা জানায়, দুর্গম এলাকায় যারা বাড়িতে অবস্থান করছেন, তাদের অনেকের কাছেই ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিদিন হাজার হাজার প্যাকেট খাদ্য সহায়তা (ত্রাণ) বিতরণ করা হলেও যাতায়াতের দুর্ভোগসহ সমন্বয়হীনতার কারণে দুর্গম এলাকায় অবস্থানকারীরা এর সুফল পাচ্ছে না।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার বন্যার্ত বহু মানুষের ভরসা কলার ভেলা। থাকা খাওয়া সবকিছুই তারা সারছেন কলার ভেলার উপর। ত্রান বিতরণসহ বিভিন্ন কাজও ব্যবহার করা হচ্ছে এই কলা গাছের ভেলা। পর্যাপ্ত কলাগাছ না থাকায় ভেলাও তৈরি করতে পারছেন না অনেকেই।

গত টানা ১০দিন ধরে ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে সৃষ্টি হওয়া বন্যার ভাসছে রায়পুর উপজেলা ১০টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের লক্ষাদিক মানুষ। এসব এলাকার অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিলেও বাকীরা রয়েছেন ঘরে মাচা বেঁধে। অথবা পাশ্ববর্তী উঁচু স্থানে। এই সুযোগটুকুও যাদের নেই তাদের যোগাযোগের প্রধান ভরসাই এখন কলার ভেলা।

যাদের একটু সাধ্য আছে তারা ডিঙি নৌকা সংগ্রহ করলেও অভাবী মানুষ কলার গাছের ভেলা তৈরি করে সারছেন তাদের যাবতীয় কাজ-কর্ম। অনেক এলাকায় কলা গাছের সংকট দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে অনেকে চড়া দামে বিক্রি করছেন কলাগাছ।

 গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে ঘরবাড়ি, চৌকি ও মাচান। অনেকের একমাত্র কলার গাছের ভেলাই ভরসা চলাচলের। বাঁধের রাস্তা ও উঁচু বিদ্যালয়ের দালান ঘরে এবং বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন অনেক বানভাসি। অনেকের ঘরের মজুত খাবার শেষ হয়ে গিয়ে পড়েছেন বিপাকে। পর্যাপ্ত ভেলা না থাকার তাই কলা গাছের ভেলা নিও চলছে এখন টানাটানি। 

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুরে ৭ লাখ ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। ২৭ হাজার ৭০০ মানুষ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। কিছু মানুষ উজানে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন। তবে বন্যায় পানিবন্দি অধিকাংশ মানুষ চুরি-ডাকাতির ভয়ে বাড়িঘর ছাড়ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিঘলী, চরশাহী, বাঙ্গাখাঁ ও মান্দারী ইউনিয়নের দুর্গম এলাকায় পানির কারণে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। এতে সেখানকার পানিবন্দি মানুষগুলোর মাঝে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। এসব এলাকায় ত্রাণ বিতরণে নৌকার কোন বিকল্প নেই। মান্দারী-দিঘলী সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে আছে।

এদিকে বন্যার পানি বেড়েই চলছে লক্ষ্মীপুরে। উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে যোগ হচ্ছে বৃষ্টির পানি। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে জেলাজুড়ে। এতে জেলার সর্বত্রই পানির পরিমাণ অন্তত আরও আধাফুট বেড়ে গেছে। ফলে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। দুর্ভোগও বেড়ে গেছে বহুগুণ।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, নোয়াখালীর পানি লক্ষ্মীপুরে অনবরত ঢুকছে। তবে মেঘনা নদীতে প্রচুর পানি নেমেছে রহমতখালী ও ওয়াপদা খাল হয়ে। এছাড়া রায়পুর ও রামগঞ্জেও পানি কমছে। রামগতি ও কমলনগরে বেড়িবাঁধের বাইরে ভুলুয়া নদী এলাকায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। সেখানে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে নোয়াখালীর পানি এসে ভুলুয়ার নদীতে যুক্ত হচ্ছে।

জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা মোঃ ইউনুস মিয়া বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৪১৯ মেট্রিক টন জিআর চাল ও ১০ লাখ নগদ টাকা (জিআর ক্যাশ) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে প্রত্যেক উপজেলার জন্য দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। জেলা বর্তমানে প্রায় ১০লাখ পানি বন্দি এবং আশ্রয়ন কেন্দ্রতে ৩০হাজার মানুষ অবস্থান করছে। এ সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন সরকারিভাবে যে পরিমাণ চাল ও অর্থ বরাদ্দ রয়েছে তাও অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান। বুধবার সকালে নিজ কার্যালয়ে এক বিশেষ সভায় তিনি বলেন, জেলায় ৭ লাখ ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ

তিনি জানান, বন্যা দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ৭০০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিশু খাদ্যের জন্য ৫ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫০৯ মেট্রিকটন চাল ও ১৬ লাখ টাকার ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় এই বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আরও ৩০ লাখ টাকার চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে।আমরা সিভিল সার্জনের সাথেও যোগাযোগ রেখেছি। আমাদের স্বাস্থ্যসেবাগুলো যেন অব্যাহত থাকে, সে বিষয়ে তিনি কাজ করছেন। এ বিষয়ে ৬৬টি মেডিকেল টিম রয়েছে। সরকারিভাবে যে বরাদ্দ আমরা পেয়েছি, তা ইউএনওদের ভাগ করে দিচ্ছি। ইউএনওরা চাল ও শুকনো খাবার কিনে প্যাকেট করে বিভিন্ন জায়গায় বিতরণ করছে।’

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
error: Content is protected !!