লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেছেন। রবিবার (১৯ই নভেম্বর) বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর মনোনয়ন ফরম বিক্রয় কেন্দ্র থেকে ফরম সংগ্রহ করেন। এই সময়ে তার সাথে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামীলীগ ও সসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিগত উপনির্বাচনে পাপুলের কুয়েতে কারাগারে রায়ের পর সংসদ সদস্য পদ খারিজ হয়ে গেলে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপ নির্বাচনে জয় পেয়ে তিনি হয়েছেন সংসদ সদস্য। লক্ষ্মীপুর জেলায় স্থানীয় পর্যায়ে রাজনীতি করে তিনিই প্রথম এমপি হয়েছেন। সততা, দক্ষতা আর নিজের সংকল্পের প্রতি একাত্বতাই তাকে আজ এই পর্যায় নিয়ে এসেছে বলে মনে করছেন মেয়র নির্বাচনে কাউন্সিলর ভোটে জিরো থেকো হিরো বনে যাওয়া মেয়র পদে নৌকা প্রতীক বিজয়ী রায়পুর পৌর মেয়র গিয়াসউদ্দীন রুবেল ভাট।
লক্ষ্মীপুর-২ (সদর আংশিক ও রায়পুর) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন তার নির্বাচনী এলাকায় বিনামূল্যে ১১৭টি গভীর নলকূপ স্থাপন করছেন। প্রতিটি গভীর নলকূপের জন্য সরকারি বরাদ্দ ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা।উপকারভোগীরা এ সুবিধা নিতে প্রতিটি গভীর নলকূপের জন্য সরকারি ফি ৭ হাজার টাকা করে জমা দেওয়ার কথা। এমপি নয়ন নিজের ব্যক্তিগত অর্থ থেকে সরকারি ফি (কন্ট্রিবিউশন মানি) পরিশোধ করেন। ৭ হাজার টাকা করে ১১৭ জনের মোট হিসাবে ৮ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে সরকারি কোষাগারে পরিশোধ করেছেন এমপি।গভীর নলকূপ স্থাপনের স্থানীয় বাস্তবায়ন সংস্থা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর লক্ষ্মীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীর অনুকূলে এমপি নয়ন ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের চেকের মাধ্যমে তা জমা দেন।তার এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ স্বাগত জানিয়ে তার নির্বাচনী এলাকার সর্বোচ্চ বুজুর্গ আন্দার কিল্লাহ শাহী জামে মসজিদের খতিব আনোয়ার হোসেন তাহের আল জাবেরী আল মাদানী। তিনি বলেছেন, জনগণকে দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রাখলেন এমপি নয়ন খুবই অল্প সময়ে। জনসেবায় তিনি নবদিগন্তের সূচনা করলেন। এই প্রথম কোনো এমপি নিজ সংসদীয় এলাকায় সরকারি বরাদ্দকৃত গভীর নলকূপের জন্য সরকারি ফি নিজস্ব অর্থায়নে পরিশোধ করে জনগণের পানির ব্যবস্থা করলেন।এমপি নিজেই উপকারভোগীদের সরকারি ফি জমা দেওয়ার বিষয়টি বিরল।এছাড়াও মডেল মসজিদ নির্মাণে কার্যক্রম, স্টেডিয়াম, মসজিদ – মাদ্রাসায় অনুদান, ব্রীজ ও সড়ক নির্মাণে তার মতো অতীতে কেউ এত পরিশ্রম করেননি।
লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি চৌধুরী মাহমুদুন নবী সোহেল বলেন, নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন ভাই শুধু রাজনৈতিক জীবনেই সফল নয় ব্যক্তি জীবনেও তিনি একজন সফল মানুষ। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত দুর্দিনে নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো থেকে শুরু করে সব জায়গায় উনার সরব উপস্থিতি। দলের শৃঙ্খলা রক্ষা থেকে শুরু করে সামাজিক অঙ্গনে সবখানেই তিনি সমানতালে কাজ করে গেছেন। কঠোর পরিশ্রম ও সততার মাধ্যমে তিনি যেমন নেতাকর্মীদের আস্থা অর্জন করেছেন ঠিক তেমনই শেখ হাসিনার আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
২০১৫ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা ৮ বছর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। তার এই ৬ বছরে তিলে তিলে কর্মীদেরকে গড়ে তুলেছেন নিজের সেরাটা দিয়ে। কর্মীবান্ধব এই নেতার এক ডাকেই পঙ্গপালের মতো ছুটে আসে হাজারো নেতাকর্মী। শুধু দল নয় জনতার মাঝেও সমানতালে জনপ্রিয় এই নেতা।
রায়পুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন মাস্টার বলেন, নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি করে আসছেন। তিনি দলের একজন ত্যাগী ও পরিক্ষিত নেতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তার প্রশংসা করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নয়নকে মনোনয়ন দিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আনন্দের জোয়ারে ভাসিয়েছেন। নেতাকর্মীরা উৎসাহ উদ্দিপনার মাধ্যমে নয়ন ভাইয়ের নির্বাচন করেছে এবং তাকে নির্বাচিত করেই ঘরে ফিরেছে।আগামীতেও মনোনয়ন দিবেন এটিই প্রত্যাশা করি।
তিনি আরও বলেন, নয়ন ভাই তৃণমূলেরে রাজনীতি করার কারণে দলের খুঁটিনাটি থেকে শুরু করে এই জনপদের সমস্যা-সম্ভাবনা সবকিছু সম্পর্কেই অবগত রয়েছেন। আমার বিশ্বাস উনি সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের পাশাপাশি সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করবেন। যেভাবে উনি দলের নেতাকর্মীদের পাশে ছায়া হয়ে থেকেছেন ঠিক সেভাবেই এই জনপদের জনতার ছায়া হয়ে থাকবেন।
রায়পুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আবু সাইদ জুটন বলেন, অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন একজন দক্ষ সংগঠক। তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগকে করেছেন সুসংগঠিত। তার দক্ষ নেতৃত্বের কারণে এক সময় দেশব্যাপী বিএনপির ঘাটি হিসেবে স্বীকৃত এই জেলায় এখন আওয়ামী লীগের জয়জয়কার। যা সম্ভব হয়েছে দলীয় কোন্দল থেকে বেরিয়ে এসে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে। যার পুরো কৃতিত্বই এডভোকেট নয়নের। জনপ্রতিনিধি হওয়ার মাধ্যমেই তার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি মানুষের সুখে-দুখে পাশে থেকে খুব শিগগিরই দক্ষ জননেতার পরিচয়ও তিনি দিবেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মামুন বিন জাকারিয়া বলেন , নয়ন ভাই জেলা আ.লীগের নেতৃত্বের পাশাপাশি সহযোগী ও উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গুলো চমৎকার ভাবে সম্মেলন করে কর্মীদের মূল্যায়ন করেছেন। উন্নয়ন ও নেতৃত্বে তিনি জেলায় ব্রান্ডিং লিডার।
রায়পুর উপজেলা আ.লীগের সাধারন সম্পাদক রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠান বলেন , অতীতের যে কোন এমপির চেয়ে বর্তমান এমপির টিআর, কাবিখা, কাবিটা, সামাজিক উন্নয়ন, মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা সহ নানান সহযোগিতা তিনি একাই করেছেন। বিএনপির সাবেক এমপি খায়ের ভূইয়ার প্রতিষ্ঠিত মহিলা কলেজও তিনি দলমতের উপরে যেয়ে এটি এমপিওভূক্ত করার চেষ্টা করেছেন।আগামীতেও নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকা তুলে দিয়ে উন্নয়ন তরান্বিত করবেন।
নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নের (এমপি) রাজনৈতিক জীবন :
ছাত্রলীগের মাধ্যমেই তার রাজনৈতিক জীবন শুরু। ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছর লক্ষ্মীপুর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রলীগের রাজনীতি শেষে ১৯৮৮ সালেই যোগ দেন আওয়ামী লীগে। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই চমক দেখান এই নেতা। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯৪ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ২০০৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এই নেতা। এরপর ২০১৫ থেকে এখন পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন,অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন এর সহসভাপতি পদে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে এই সফলতার পিছনে দলীয় নেতাকর্মীদের অবদানের কথা তুলে ধরে এই নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, নেতাকর্মীদের ভালবাসায় আজ আমি এতদূর। তাদের পরিশ্রম ও ত্যাগের কথা আমি কখনো ভুলতে পারবো না। জননেতা বানানোর জন্য নেতাকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে যেভাবে আমাকে সমর্থন করে সাহস যুগিয়েছে তাতে আমি মুগ্ধ। তাদের পরিশ্রমে আজকে আমি নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হতে পেরেছি। নয়ন বলেন, প্রশংসা পাওয়ার জন্য নয়। নির্বাচনী ওয়াদা পূরণের জন্যই ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এ টাকা জমা দিয়েছি এবং উন্নয়ন করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি দলকে সামনে এগিয়ে নেয়ার। আমার বিশ্বাস ছিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিবেন। তিনি আমার উপর আস্থা রেখেছেন।প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ, তিনি আমাকে নৌকা প্রতীক উপহার দিয়েছিলেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর আস্থার প্রতিদান দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। পাশাপাশি লক্ষ্মীপুর-২ (লক্ষ্মীপুর-রায়পুর) আসনের উপনির্বাচনে নৌকার বিজয়ে বিগত বছর মাঠে কষ্ট করেছেন, বৃষ্টি ও করোনা উপেক্ষা করে ভোট দিয়েছেন এবং বিভিন্ন অবস্থান থেকে সহযোগিতা করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। জনগণের জন্য কাজ করে এর প্রতিদান দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য ,গত ২০২০ সালের জুন মাসে লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর-সদরের একাংশ) আসনে ভোট হয়। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুর উদ্দিন চৌধুরী ১ লাখ ২২ হাজার ৫৪৭ ভোট এবং জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী শেখ ফায়েজ উল্যাহ শিপন পেয়েছেন ১ হাজার ৮৮৬ ভোট।
উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র ক্রয় করেন ২০ জন নেতা। আবেদনপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিয়া মো. গোলাম ফারুক পিংকু, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগসের এমডি ডা. এহসানুল কবির জগলুল, মোহাম্মদ আলী খোকন, কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক সামছুল ইসলাম পাটওয়ারী, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রানা আফছারী, আমরা কজন মুজিব সেনার প্রতিষ্ঠাতা এ এফ এম জসিম উদ্দীন, রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম নবী নেওয়াজ করিম চৌধুরীর স্ত্রী রেশমা আক্তার, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আবুল কাশেম, অ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন রিগান ও চট্টগ্রাম এক্স শাহীন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাঈদুল বাকীন ভুঁইয়া।