জেলার সীমানা বিরোধের জেরে লক্ষ্মীপুরের রামগতি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল আলম চৌধুরী ও রামগতি থানার ওসি আলমগীর হোসেনকে পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দারা।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কয়েক হাজার লোকের উপস্থিতিতে টাংকির ঘাট এলাকায় পুলিশ ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে। পরে নোয়াখালী সদর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
উত্তেজিত জনতা অবরুদ্ধ করে রাখার প্রায় ৪ ঘণ্টা পর নোয়াখালী জেলা পুলিশের হস্তক্ষেপে রামগতি নিজ স্টেশনে ফিরে গেলেন রামগতি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল আলম চৌধুরী ও রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার হরনি ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড টাংকিরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) রাত ১০টার দিকে রামগতির উদ্দেশে রওনা দেন অবরুদ্ধ থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা। এর আগে নোয়াখালী জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) বিজয়া সেন উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টির সমাধান করেন।
বিজয়া সেন বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমরা টাংকির বাজার পুলিশ ক্যাম্পে পৌঁছাই। স্থানীয় ইউপি মেম্বারের সঙ্গে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে বিষয়টি স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন রামগতি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল আলম চৌধুরী। পরে বিষয়টি নিয়ে আমি স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলি। তাঁদের দাবি ছিল, রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের পাশাপাশি নোয়াখালীর পুলিশ ওই ক্যাম্পে থাকতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমি তৎক্ষণাৎ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে স্থানীয়দের দাবিকৃত নোয়াখালীর ১০ জন পুলিশ সদস্যকে ওই ক্যাম্পে সংযুক্ত করেছি। যার মধ্যে একজন ইন্সপেক্টর, একজন উপ-পরিদর্শক, একজন সহকারি উপ-পরিদর্শক ও ৭ জন কনেস্টবল থাকবেন।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘টাংকির বাজার পুলিশ ক্যাম্পটি রেঞ্জের অধীনে। ওই ক্যাম্প কখনও রামগতি বা লক্ষ্মীপুরের অধীনে ছিল না। এটা নিয়ে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা ছিল। আজকের পর থেকে ওই এলাকায় রামগতি পুলিশের কোনো কার্যক্রম থাকবে না।’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিকেলে লক্ষ্মীপুর জেলা সহকারী পুলিশ সুপার (রামগতি সার্কেল) সাইফুল আলম চৌধুরী ও রামগতি থানার ওসি আলমগীর হোসেন টাংকির বাজার পুলিশ ক্যাম্পে আসেন। পরে তাঁরা ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ক্যাম্পের গোল ঘরে বসেন। এর কিছুক্ষণ পর ওই গোল ঘরে আসেন স্থানীয় ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাইন উদ্দিন, ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. বাবুল হোসেন সুজন ও টাংকির বাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখওয়াত হোসেন। পরে পুলিশ গোল ঘর থেকে তাঁদের বের করে দিলে বিষয়টি বাজারে উপস্থিত লোকজনের নজরে আসে এবং তাঁরা উত্তেজিত হয়ে ক্যাম্প ঘেরাও করেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কয়েক হাজার লোকের উপস্থিতিতে টাংকির ঘাট এলাকায় পুলিশ ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে। পরে নোয়াখালী সদর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ অ্যান্ড অপস) বিজয়া সেন রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘রাতে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে টাংকিরঘাট গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করি। পরে লক্ষ্মীপুর জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (রামগতি সার্কেল) সাইফুল আলম চৌধুরী ও রামগতি থানার ওসি আলমগীর হোসেনকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে আছে।’
পরে পুলিশ গোল ঘর থেকে তাদের বের করে দিলে বিষয়টি বাজারে উপস্থিত লোকজনের নজরে আসে এবং তারা উত্তেজিত হয়ে ক্যাম্প ঘেরাও করে। কিছু সময়ের মধ্যে স্থানীয় কয়েক হাজার লোকজন একত্রিত হয়ে অবরুদ্ধ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। যা রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলে।
ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. বাবুল হোসেন সুজন অভিযোগ করে বলেন, ‘বিকেলে টাংকিরঘাট বাজার পুলিশ ক্যাম্পে আসেন রামগতি সার্কেল ও রামগতি থানার ওসি। উনাদের দেখে আমি, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সালাউদ্দিন মেম্বার, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাইন উদ্দিন মেম্বার ও সাখাওয়াত মাস্টার ক্যাম্পের গোল ঘরে যাই। ওই সময় আমাদের দেখে উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে বের হয়ে যেতে বলেন সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল আলম চৌধুরী। একপর্যায়ে তিনি আমাদের দিকে তেড়ে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ওই কক্ষ থেকে বের করে দেন ।
তিনি আরও বলেন, ‘উনারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে রামগতি থেকে হাতিয়ায় এসেছেন। এর আগেও একাধিক বার রামগতির পুলিশ ও লোকজন বিভিন্ন সময় সীমানায় এসে আমাদের লোকজনকে মারধর করেছে। আমাদের লাঞ্ছিত করা ও তাদের কর্তৃক হয়রানি থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পেতে লোকজন তাদের অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ মিছিল করছে।’
টাংকির ঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখওয়াত হোসেন বলেন, ‘মেম্বররাসহ আমি ক্যাম্পের গোল ঘরে গেলে সার্কেল সাহেব মেম্বাদের ওপর উত্তেজিত হয়ে সবাইকে বের হয়ে যেতে বলেন। পরে আমরা দ্রুত ওইস্থান থেকে বের হয়ে চলে আসি।’
রামগতি থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সন্ধ্যায় আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে টাংকির ঘাট ক্যাম্পে যাই। ক্যাম্পে আমাদের মিটিং চলাকালে স্থানীয় মেম্বাররা এলে আমরা উনাদের পরে আসতে বলি। উনারা বাইরে গিয়ে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে উত্তেজিত করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছে। এর পেছনে সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর ইন্দন রয়েছে।’
রামগতি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল আলম চৌধুরী মেম্বারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও ধাক্কা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘টাংকির বাজার ক্যাম্পের পাশে নোয়াখালী অঞ্চলে আরও একটি আরআরএফ (রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স) ক্যাম্প রয়েছে। আমরা ক্যাম্পের গোল ঘরে রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সদের নিয়ে মিটিং এ বসার কিছুক্ষণ পর কোনো কিছু না বলে একজন লোক বসে পড়েন। আমি ওনার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি মাইন উদ্দিন মেম্বার বলে পরিচয় দেন।
‘মেম্বার ও উনার সঙ্গে থাকা লোকদের পরে আসার জন্য বললে তারা বিষয়টিকে ভিন্নখাতে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজনকে উত্তেজিত করে তুলে সহস্রাধিক লোক জড়ো করে ফেলেন। এ ঘটনাটি রামগতি ও হাতিয়ার সীমানা বিরোধের যোগসূত্র থাকতে পারে। নোয়াখালী থেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আসছেন, উনারা আসার পর বিষয়টি নিয়ে কথা হয়।’
এ বিষয়ে হাতিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এর আগেও রামগতির পুলিশ এসে আমাদের লোকজনকে নানাভাবে হয়রানি করেছে। আজও তারা আগের কায়দায় লোকজনকে হেনস্তা করায় স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।’