হাসান আহমেদ, প্রতিনিধি।
রায়পুরে পরিত্যক্ত রান্না ঘরে রহস্যময় আগুন লাগার ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস বলছে শট সার্কিট থেকে এই অগ্নিকান্ড সংগঠিত হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনায় বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা দম্পতির নামে রায়পুর থানায় দায়ের করা হয়েছে ঘর পোড়ানোর মামলা।
গত ৮ অক্টোবর এ ঘটনার ৩ দিন পর রাহেলা বেগম বাদী হয়ে একই বাড়ির বয়স্ক দম্পতি ও তার ঢাকায় চাকুরীরত ছেলের বিরুদ্ধে ঘর পোড়ানোর মামলাটি দায়ের করেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ৬ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ২০২২ গভীর রাতে রায়পুর পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের হারুন সাংবাদিকের বাড়ির (সুলতান মাষ্টার এর বাড়ির) মামলার বাদি রাহেলা বেগমের নির্মানাধীন বিল্ডিং এর পাশে পরিত্যক্ত একটি রান্নাঘরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রায়পুর ফায়ার সার্ভিস দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
রায়পুর ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বরত কমান্ডার ছলিম উদ্দিন জানান, “খবর পাওয়ার সাথে সাথে আমরা টিম ও গাড়িসহ ছুটে যাই এবং আধাঘন্টার মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আমাদের ধারণা পুরাতন ফ্রিজ থেকে বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে। তবে এটি একটি ঝুপড়ি ঘর ছিল। তিনি অরো বলেন, “দুই বালতি পানি দিলে এই আগুন নিভে যেত; কিন্তু কেউ চেষ্টা করেনি বলে মনে হয়।”
মামলাটি মিথ্যা ও আগুন লাগানোর ঘটনা ষড়যন্ত্র দাবী করে বিবাদী বৃদ্ধ নিজাম হায়দার (৭৫) জানান, “এজমালি জমি ও পৌরসভার অনুমোদন এর বাহিরে বাদী রাহেলা বেগম বিল্ডি করতে গেলে আমরা সামাজিকভাবে তাদের নিজেদের ভিটিতে ঘর করার জন্য বারবার বললেও রাহেলার দেবর তছলিম ও দেলোয়ার মৃধা আমাকে ও আমার স্ত্রীকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দিতে থাকে। আমরা বিজ্ঞ আদালতের সরনাপন্ন হলে আদালত কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়পুরকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদনের দায়িত্ব দেন, এতে বাদী পক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। আগুনের নাটক সাজিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক এ মিথ্যা মামলা দায়ের করে।”
নিজাম হায়দার আরও জানান, “আমি এবং আমার স্ত্রী দু’জনেই বয়স্ক মানুষ এবং অসুস্থ। আমার একমাত্র ছেলে ঢাকায় চাকরি করে, বৌ বাচ্চা নিয়ে ঢাকায় থাকে, ঈদ ছাড়া বাড়িতে আসেনা, তাকেও মামলার আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী রাহেলা বেগম বলেন, “বিবাদি নিজে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছে, আমার আড়াই লাখ টাকা ক্ষতি করেছে”। কিন্তু মামলায় চৌচালা ঘর পড়ানো ও ১২ লাখ টাকা ক্ষতি উল্লেখ আছে। সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে বাদী রাহেলা আর কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি।
একই বাড়ির বাহার পাটোয়ারী, সেলিম পাটোয়ারী ও সাজ্জাদ পাটোয়ারী বলেন, ফায়ার সার্ভিস বলেছে বৈদ্যুতিক শট সার্কিটে অগ্নিকান্ডটি ঘটেছে। তখন থানার পুলিশ ও আমরা বহু লোক উপস্থিত ছিলাম, থানা কিভাবে তদন্ত ছাড়া সরাসরি এজাহার নিয়ে ওয়ারেন্ট হয়েছে বলে এই অসুস্থ বয়োবৃদ্ধদের ধরে নিতে আসলো তা দেখে আমরাও হতভম্ভ। তারা দাবী করেন, বিষয়টি নিয়ে অধিকতর তদন্ত করে আসল রহস্য বের করা উচিৎ।
অন্যদিকে এ রহস্যময় আগুন লাগার ঘটনায় মামলার বিষয়ে রায়পুর থানার ওসি (তদন্ত) জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এ ঘটনায় ৪৩৬ ধারায় অগ্নি সংযোগের একটি মামলা হয়েছে। মামলা নং ৩, তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২। তবে বাদী ও বিবাদীর মধ্যে পূর্ব থেকেই বাড়ি নির্মানে ১৪৪ ধারা জারি সহ জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও মামলা রয়েছে বলে আমরা শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।