ঢাকাবুধবার , ২৬ এপ্রিল ২০২৩
  1. International
  2. অপরাধ
  3. আত্মহত্যা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আবহাওয়া
  6. আমাদের সম্পর্কে
  7. ইসলাম
  8. খেলাধুলা
  9. গণমাধ্যম
  10. চিকিৎসা
  11. জাতীয়
  12. ত্রাণ
  13. ত্রাণ বিতরণ
  14. দিনলিপি
  15. দেশজুড়ে
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জামায়াত থেকে আওয়ামীলীগে এসেই ত্রাসের রাজত্ব কাশেম জিহাদীর।

নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ২৬, ২০২৩ ১২:২৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নোমান – রাকিব হত্যাকান্ডে ঘুরে ফিরে কাশেম জিহাদী

লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমানকে মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এ সময় রাকিব ইমাম নামে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গুলিবিদ্ধ হলে ঢাকা নেয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন । মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) রাত ১০ টার দিকে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দারবাজার নাগের হাট এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

নিহত যুবলীগ নেতা নোমান এর বড় ভাই মাহফুজুর রহমান চেয়ারম্যান সদর হাসপাতালে বিলোপ করতে করতে ইউপি নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী বশিকপুরের সন্ত্রাসের গডফাদার চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগ এর সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম জিহাদিকে অভিযুক্ত করে তাকে গ্রেপ্তারের দাবী জানান।

নোমানের ভাই মাহফুজুর রহমান আরো বলেন, চিহ্নিত সন্ত্রাসী আবুল কাশেম জিহাদী পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে হত্যা করেছে। কাশেম আমার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও হেরেছিল। এরপর থেকে আমাদের হুমকি দিয়ে আসছে। বশিকপুরের ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম জিহাদী গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মাহফুজুর রহমান। এতে আবুল কাশেম জিহাদীর ভরাডুবি হয়। ওই নির্বাচন নিয়েই কাশেম জিহাদী হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ।নোমানের বড় ভাই ও বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বলেন, কাশেম জিহাদী ছাড়া আমাদের কোনো শত্রু নেই। তিনিই আমার ভাই ও রাকিবকে হত্যা করেছেন। ১৯৯৬ সালের পর থেকে বশিকপুরে যত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সবগুলো এই কাশেম জিহাদীই ঘটিয়েছেন। আমি চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দিতাম প্রয়োজনে, কিন্তু কেন আমার ভাইকে খুন করা হলো? প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ভাই হত্যার বিচার চাই। নির্বাচনে হারার পর থেকে বিভিন্ন সময় কাশেম জিহাদী হুমকি দিয়ে আসছিল। পরিকল্পিতভাবেই আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে।

অন্যদিকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমামকেও মৃত্যু নিশ্চিত করার অন্যতম কারন সরেজমিনে যেয়ে জানা যায়, কাশেম জিহাদীর না হওয়ায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে গতবছরও মারধর করার অভিযোগ উঠেছিলো আবুল কাশেম জিহাদী এই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। গত ডিসেম্ভরে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পোদ্দার বাজারের কায়কোবাদ অডিটোরিয়ামে এ ঘটনা ঘটে। তিনি উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের নন্দী গ্রামের বাসিন্দা রফিক উল্যাহর ছেলে ও লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। অভিযুক্ত আবুল কাশেম জিহাদী চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

রাকিবের বাবা রফিক উল্যা বলেন, নির্বাচনের পর থেকেই জিহাদী আমার ছেলেকে হুমকি দিয়ে আসছে। গেল বছর ২০ ডিসেম্বর পোদ্দার বাজার কায়েকোবাদ অডিটোরিয়ামে জিহাদী আমার ছেলেকে প্রকাশ্যে মারধর করেছে। তখন মামলা দিতে চাইলে পুলিশ নেয়নি। আমার ছেলেকে জিহাদীই হত্যা করেছে। নির্বাচনে তার বিরোধিতা করায় আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমি কাশেম জিহাদীর বিচার চাই।

স্থানীয় সূত্র ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত রাকিব তখন জানিয়েছিলেন, ২৭ ডিসেম্বর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। সম্মেলনকে ঘিরে পোদ্দারবাজার ভাই ভাই ক্লাবে ছাত্রলীগের প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে রাকিবের উপস্থিতি দেখেই অতর্কিত হামলা চালায় আবুল কাশেম জিহাদিসহ বেশ কয়েকজন। এ সময় তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। এ ছাড়া অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করারও অভিযোগ ওঠে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

পুলিশ সূত্র জানায়, পাঁচটি হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামী আবুল কাশেম জিহাদী ।লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এবং বশিকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান।বর্তমানে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দত্তপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান নূর হোসেন শামীম, দত্তপাড়ার আবু তাহের, বশিকপুরের নন্দীগ্রামের মোরশেদ আলম, করপাড়ার মনির হোসেন, উত্তর জয়পুরের সেলিম ভূইঁয়া ও কামাল হোসেন হত্যার অভিযোগে মামলা রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ, অপহরণসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া ২০০০ সালে লক্ষ্মীপুরের বিএনপির নেতা ও আইনজীবী নুরুল ইসলামকে হত্যা মামলারও আসামি ছিলেন তিনি। যদিও পরে সাক্ষী-প্রমাণের অভাবে তিনি মামলা থেকে খালাস পান।

কাশেম জিহাদী একসময় জামায়াতে ইসলামীর কর্মী ছিলেন। পরে তিনি লক্ষ্মীপুর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একজন নেতার ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তাঁর আসল নাম আবুল কাশেম। ১৯৯৭ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় প্রতিপক্ষের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে তিনি অনুসারীদের কাছ থেকে ‘জিহাদী’ উপাধি পান। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, খুন, ডাকাতি, বাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এলাকায় ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হয় তাঁর নেতৃত্বাধীন জিহাদী বাহিনী। এ বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন সময় লক্ষ্মীপুর সদর থানা ও দত্তপাড়া ফাঁড়ির পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হয়। এ বাহিনীর গুলির মুখে পুলিশ প্রতিবারই পিছু হটে। ২০১১ সালে অস্ত্র আর বাহিনীর জোরে ‘ভোট ডাকাতি’ করে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বলে তাঁর বিরুদ্ধে তখনই অভিযোগ উঠেছিল।

লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত হত্যার ঘটনায় থানায় কোনো মামলা করা হয়নি।

বুধবার (২৬ এপ্রিল) সকালে সদর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক তাফাজ্জল হোসেন চৌধুরী টিটু এ আল্টিমেটাম দেন। সদর হাসপাতালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু বলেন, নোমান ও রাকিবের মরদেহের সুরতহাল শেষ হয়েছে। সদর হাসপাতালে মর্গে তাদের ময়নাতদন্ত চলছে। বিকেল ৫টায় বশিকপুর মাদ্রাসা মাঠে তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। খুনি যেই হোক পুলিশ তা শনাক্ত করবে। দ্রুত খুনিদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বুধবার সকালে কাশেম জিহাদীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাব বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। কাশেম জিহাদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে অবশ্যই তদন্ত করা হবে। তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজ্জামান আশরাফ সাংবাদিকদের বলেন, দুষ্কৃতকারীরা গুলি করে নোমান ও রাকিবকে হত্যা করেছে। ঘটনাটি তদন্ত চলছে। কারা, কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে আশা করি তা বের হয়ে আসবে। র‌্যাবকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) রাত পৌনে ১০টার দিকে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট এলাকায় সন্ত্রাসীরা যুবলীগ নেতা নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিবকে গুলি করে। এর আগে নোমান পোদ্দার বাজারে ছিলেন। তার সঙ্গে থাকা অন্যদেরকে বিদায় দিয়ে তিনি রাকিবকে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে নাগেরহাটের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে নাগেরহাটের কাছাকাছি পৌঁছলে সন্ত্রাসীরা তাদের গুলি করে। তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও মোবাইল নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। গুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থল গিয়ে স্থানীয় লোকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদেরকে পড়ে থাকতে দেখে। মাথায় ও মুখে গুলিবিদ্ধ হয়ে নোমান মারা যান। গুলিবিদ্ধ রাকিবকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনিও মারা যান।

নোমানের পরিবার সূত্র জানায়, ৫ এপ্রিল ওমরা করার জন্য নোমান সৌদি আরব যান। ২০ এপ্রিল তিনি দেশে ফেরেন। এরপর ঢাকার বাসা থেকে তিনি ঈদের দিন বশিকপুর গ্রামে আসেন। নোমানের স্ত্রী ও দুই শিশু ছেলে সন্তান রয়েছে।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
error: Content is protected !!