ঢাকা ১১:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘুম নেই চোখে,দস্যুদের সব সম্পত্তি দিয়েও সন্তানকে ফেরত চায় স্বামী হারা নারী

 এডেন উপসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ‘এমভি আব্দুল্লাহ’ নামক জাহাজের ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের মা হুমায়ারা বেগম (৫৯) অপহরণের খবর পেয়ে দুশ্চিন্তায় গতকাল সারারাত ঘুমাতে পারেননি। ছেলে সুস্থ অবস্থায় তার বুকে ফিরে আসবে- এমনটাই প্রত্যাশা তার।

আইয়ুব খানের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের রাখালিয়া গ্রামের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। তার বাবা মৃত আজহার মিয়া।

এক বছর আগে ইন্টার্নি করতে ‘এমভি আব্দুল্লাহ’ নামক জাহাজে ওঠেন আইয়ুব।
আইয়ুব খানের মা হুমায়ারা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে যে জাহাজে ছিল, সেটি অপহরণ করেছে দস্যুরা।

সঙ্গে আমার ছেলেকেও জিম্মি করে রাখা হয়েছে। শুরুতে কেউ আমাকে জানায়নি।
আমি গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে জানতে পেরেছি। এরপর ছেলের চিন্তায় সারারাত আমার ঘুম হয়নি। ছেলে কোথায় আছে, কি অবস্থায় আছে- সে টেনশনে আছি।
ছেলের জন্য দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে গত সোমবার (১১ মার্চ) বিকেলে কথা হয়েছে। বলেছে- ভালো আছে। গত মাসের ১০ ফেব্রুয়ারি তার বাবা মারা যায়। কিন্তু সে আসতে পারেনি, তখন জাহাজে ছিল। বাবার লাশ দেখতে পারেনি, মাটিও দিতে পারেনি। এ নিয়ে তার মধ্যে খুবই দুঃখ ছিল। বলছে- আমি আর সে মিলে তার বাবার জন্য কোরআন খতম করবো। তার বাবা মারা যাওয়ার ২০-২৫ দিন আগে সে বাড়িতে আসে। এরপর আবার জাহাজে চলে যায়।

তিনি বলেন, চার ভাইবোনের মধ্যে পরিবারের সবার ছোট আইয়ুব, তাই সবার আদরের। এক বছর হলো সে লেখাপড়া শেষ করে ইন্টার্নি করার জন্য জাহাজে যায়। মাত্র শুরু করেছে, শুরুতেই দস্যুর কবলে পড়েছে আমার ছেলেটা। আল্লাহ তায়ালা যেন তাকে সুস্থ অবস্থায় আমার কোলে ফিরিয়ে আনে- সেই দোয়া করি। দেশবাসীর কাছেও সেই দোয়া চাই। স্বামীকে হারিয়ে আমি সন্তানদের নিয়ে বুজি আর কাটবে না দিনগুলো । আমার সব সম্পত্তি নিয়ে হলেও আমার আইয়ুবকে আমার কোলে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করেন সরকারের কাছে ।

আইয়ুব খানের ভাতিজা তারেক হোসেন বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদে আমার চাচার অপহরণের বিষয়টি জানতে পারি। তাদের সবাই যেন সুস্থভাবে উদ্ধার করা যায়, সে কামনা করি।

আইয়ুব খানের বন্ধু আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, আমরা একসঙ্গে লেখাপড়া করেছি। সে আমার বাল্যবন্ধু। মঙ্গলবার আইয়ুব তাদের জাহাজে জলদস্যুর হামলার ঘটনা জানিয়ে তার ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেন। সেখান থেকেই বিষয়টি জানতে পারি। আমার বন্ধুসহ ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক সোমালিয়ার অস্ত্রধারী দস্যুদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। তাদের জাহাজটিও অপহরণ করা হয়েছে। আমরা চাই- সব জিম্মিকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আরা হোক।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আমিন মুঠোফোনে জানান, আইয়ুবের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসন থেকে সন্তানের মুক্তির ব্যাপারে তথ্য জানানো হচ্ছে । আমরা তার ও পরিবারেরর নিয়মিত খোজখবর রাখছি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে । যতটুকু জেনেছি দস্যুরা এখনো কোন মুক্তিপণ দাবী করেনি। তবে জাহাজ ও নাবিকরা নিরাপদে জাহাজে আটক অবস্থায় সোমালিয়া উপতক্যায় আছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে এ জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জাহাজে থাকা ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিককে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। সমুদ্রগামী জাহাজটি কয়লা নিয়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। পথে এডেন উপসাগরে জাহাজটিতে হামলা চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ নেয় অস্ত্রধারী জলদস্যুরা।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

লক্ষ্মীপুরের উত্তরচরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির বিলুপ্ত  

ঘুম নেই চোখে,দস্যুদের সব সম্পত্তি দিয়েও সন্তানকে ফেরত চায় স্বামী হারা নারী

আপডেট : ০৩:২১:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪

 এডেন উপসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ‘এমভি আব্দুল্লাহ’ নামক জাহাজের ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের মা হুমায়ারা বেগম (৫৯) অপহরণের খবর পেয়ে দুশ্চিন্তায় গতকাল সারারাত ঘুমাতে পারেননি। ছেলে সুস্থ অবস্থায় তার বুকে ফিরে আসবে- এমনটাই প্রত্যাশা তার।

আইয়ুব খানের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের রাখালিয়া গ্রামের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। তার বাবা মৃত আজহার মিয়া।

এক বছর আগে ইন্টার্নি করতে ‘এমভি আব্দুল্লাহ’ নামক জাহাজে ওঠেন আইয়ুব।
আইয়ুব খানের মা হুমায়ারা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে যে জাহাজে ছিল, সেটি অপহরণ করেছে দস্যুরা।

সঙ্গে আমার ছেলেকেও জিম্মি করে রাখা হয়েছে। শুরুতে কেউ আমাকে জানায়নি।
আমি গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে জানতে পেরেছি। এরপর ছেলের চিন্তায় সারারাত আমার ঘুম হয়নি। ছেলে কোথায় আছে, কি অবস্থায় আছে- সে টেনশনে আছি।
ছেলের জন্য দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে গত সোমবার (১১ মার্চ) বিকেলে কথা হয়েছে। বলেছে- ভালো আছে। গত মাসের ১০ ফেব্রুয়ারি তার বাবা মারা যায়। কিন্তু সে আসতে পারেনি, তখন জাহাজে ছিল। বাবার লাশ দেখতে পারেনি, মাটিও দিতে পারেনি। এ নিয়ে তার মধ্যে খুবই দুঃখ ছিল। বলছে- আমি আর সে মিলে তার বাবার জন্য কোরআন খতম করবো। তার বাবা মারা যাওয়ার ২০-২৫ দিন আগে সে বাড়িতে আসে। এরপর আবার জাহাজে চলে যায়।

তিনি বলেন, চার ভাইবোনের মধ্যে পরিবারের সবার ছোট আইয়ুব, তাই সবার আদরের। এক বছর হলো সে লেখাপড়া শেষ করে ইন্টার্নি করার জন্য জাহাজে যায়। মাত্র শুরু করেছে, শুরুতেই দস্যুর কবলে পড়েছে আমার ছেলেটা। আল্লাহ তায়ালা যেন তাকে সুস্থ অবস্থায় আমার কোলে ফিরিয়ে আনে- সেই দোয়া করি। দেশবাসীর কাছেও সেই দোয়া চাই। স্বামীকে হারিয়ে আমি সন্তানদের নিয়ে বুজি আর কাটবে না দিনগুলো । আমার সব সম্পত্তি নিয়ে হলেও আমার আইয়ুবকে আমার কোলে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করেন সরকারের কাছে ।

আইয়ুব খানের ভাতিজা তারেক হোসেন বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদে আমার চাচার অপহরণের বিষয়টি জানতে পারি। তাদের সবাই যেন সুস্থভাবে উদ্ধার করা যায়, সে কামনা করি।

আইয়ুব খানের বন্ধু আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, আমরা একসঙ্গে লেখাপড়া করেছি। সে আমার বাল্যবন্ধু। মঙ্গলবার আইয়ুব তাদের জাহাজে জলদস্যুর হামলার ঘটনা জানিয়ে তার ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেন। সেখান থেকেই বিষয়টি জানতে পারি। আমার বন্ধুসহ ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক সোমালিয়ার অস্ত্রধারী দস্যুদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। তাদের জাহাজটিও অপহরণ করা হয়েছে। আমরা চাই- সব জিম্মিকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আরা হোক।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আমিন মুঠোফোনে জানান, আইয়ুবের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসন থেকে সন্তানের মুক্তির ব্যাপারে তথ্য জানানো হচ্ছে । আমরা তার ও পরিবারেরর নিয়মিত খোজখবর রাখছি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে । যতটুকু জেনেছি দস্যুরা এখনো কোন মুক্তিপণ দাবী করেনি। তবে জাহাজ ও নাবিকরা নিরাপদে জাহাজে আটক অবস্থায় সোমালিয়া উপতক্যায় আছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে এ জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জাহাজে থাকা ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিককে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। সমুদ্রগামী জাহাজটি কয়লা নিয়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। পথে এডেন উপসাগরে জাহাজটিতে হামলা চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ নেয় অস্ত্রধারী জলদস্যুরা।