খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে সংসার নিয়ে লক্ষ্মীপুরে ফিলিপাইনি আমিরা।
-
ডেস্ক রিপোর্ট :
-
আপডেট :
০৭:৩৩:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
-
১
জন পড়েছেন
প্রেমের টানে নিজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন অনেকেই। তাদের একজন যোয়ান ডিগুসমান লেগুমবাই। ৩৩ বছর বয়সী এ তরুণী সুদূর ফিলিপাইন থেকে ছুটে এসেছেন লক্ষ্মীপুরে।
নিজের জন্মভূমি ছেড়ে, ধর্ম ত্যাগ করে ৩১ বছর বয়সী প্রেমিক নাইমকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেন তিনি। তার বর্তমান নাম নাজিফা রাশিদ আমিরা।
বিয়ের পর বিগত এক বছর থেকে সুখেই সংসার করে চলছেন নাইম-নাজিফা দম্পতি। এর মধ্যে তাদের কোলজুড়ে এসেছে এক পুত্র সন্তান। ৩ মাস বয়সী ওই সন্তানের নাম নুর মোহাম্মদ নিহাল। সন্তানসহ স্বামী,শ্বশুর-শাশুড়ি,দেবর-ননদের সাথে হাসিখুশি দিন কাটছে ফিলিপাইনি নাজিফার।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী গ্রামের বাসিন্দা স্বামী নাইমুর রশিদ। এ গ্রামের পৈতৃক বাড়িতেই এখন বসবাস নাইম-নাজিফা দম্পতির।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ওই বাড়িতে গেলে তাদের সাথে কথা হয় বার্তা২৪.কম -এর। সেখানে দেখা যায় বাঙালি কালচারেই সংসারের নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
বাড়িতে কোনো অতিথি এলেই দশজন বাঙালি নারীর মতো হাসিমুখে সালাম জানিয়ে অভ্যর্থনায় ঘরে তুলে নেয় ফিলিপাইনি নাজিফা। সংসারের সবার সাথেই দায়িত্ব ভাগাভাগি করে মিলেমিশে চলেন তিনি। এজন্য বিদেশি পুত্রবধূকে নিয়ে সন্তুষ্ট বাড়ির লোকজন। প্রতিবেশী ও আত্মীয়রাও মুগ্ধ তাতে।
জানা যায়, এক বছর আগে সুদূর ফিলিপাইন থেকে বাঙালি প্রেমিকের বাড়িতে ছুটে আসলে ওই বাড়ির লোকজনসহ আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা সাদরে গ্রহণ করে নেয় বিদেশি কন্যা নাজিফাকে। গেল বছর ৬ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ধুমধাম করে বিয়ে হয় নাজিফা-নাইমের। বিয়ের পর আত্মীয়দের বাড়ি বাড়ি নিমন্ত্রিত হন এ দম্পতি।
বিয়ের ৬ মাস পরে তারা ফিলিপাইনে নাজিফার মায়ের বাসায় বেড়াতে যান। সেখানেও সাদরে সমাদৃত হন তারা। সেখান থেকে ফিরে যান কর্মস্থল মালয়েশিয়ায়। নভেম্বরে তারা আবার বাংলাদেশের বাড়িতে ফেরেন। ডিসেম্বরের কাছাকাছি সময়ে পুত্র সন্তান প্রসব করে নাজিফা। বর্তমানে সংসারের দেখভাল করে বেশিরভাগ সময় কাটে তাদের।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বসন্তের শুরুর দিনে নাজিফা বাঙালি নারীদের মতো করে স্বামী নাইমকে ফুল দিয়ে বসন্তের শুভেচ্ছাও বিনিময় করেন।
আলাপ আলোচনায় জানা যায়, বাংলাদেশি স্বামীর সংসার ভাল লাগে তার। স্বামীকে ভালোবাসতে বাসতে তিনি ভালোবেসে ফেলেছে বাংলাদেশ ও বাঙালি কালচারকেও। তবে ছোট ছোট এক-দুইটি বাংলা কথা ছাড়া বাংলা ভাষার তেমন কিছুই এখনো রপ্ত করতে পারেননি নাজিফা। চেষ্টা করছেন বাংলাভাষা ও আরবি শেখার।
নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি শুরুতে আাসসালামু আলাইকুম বলে সালাম প্রদান করেন। তারপর তিনি ইংরেজিতে ছোট ছোট বাক্যে বলেন, ‘আমি এখন এই দেশকে ভালোবেসে ফেলেছি। স্বামীর পরিবারের সবার সাথেই সংসার জীবন কাটছে মধুর। এদেশেই থাকতে চাই, এদেশের নাগরিক হয়ে।’
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে এসে তার খুবই ভালো লাগছে। এখানকার মানুষের সাথে খুব সহজেই মিশতে পারছেন। বাংলাদেশের খাবার ও এখানকার সংস্কৃতি তার খুব পছন্দ হয়েছে।
স্বামী মো.নাইমুর রশিদ বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ্। নাজিফাকে নিয়ে বেশ সুখেই কেটে যাচ্ছে সংসার জীবন। প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি নিয়ে সে আমাদের সকলের সাথেই নিজেকে মানিয়ে নিয়ে চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো কিছু নিয়েই তার উপর কেউ অসন্তুষ্ট হয়নি। সেও সন্তুষ্ট নতুন এ জীবন নিয়ে।’
তিনি আরও জানান, বিয়ের আগে ৮ বছর ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এরমধ্যে তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্তে ছুটি নিয়ে আসেন বাংলাদেশে। নিজের এবং ওই তরুণীর বাবা মায়ের সম্মতিতে তাকে বিয়ে করেছেন।
এসময় এ দম্পতি তাদের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য সবার দোয়া প্রার্থনা করেন।
নাইমের মামাতো ভাই তারেক বলেন, ‘নাজিফা ভাবি খুবই মিশুক প্রকৃতির। তিনি সবার সাথেই হাসিখুশি চলেন। আমরা তার সাথে সময়গুলো দারুণভাবে উপভোগ করি।’
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী গ্রামের বাসিন্দা মো. নাইমুর রশিদ মালেশিয়া প্রবাসী। তিনি সেখানে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। চাকরির সুবাদে তার সাথে পরিচয় হয় ফিলিপাইনের আরনেসতা লেগুমবাই ও ইমেলদা লেগুম বাই দম্পতির মেয়ে যোয়ান ডিগুসমান লেগুমবাইয়ের। পরিচয় থেকে শুরু হয় তাদের প্রেম। আর সেই প্রেমের টানে বাংলাদেশে পাড়ি জমিয়েছেন এই ফিলিপাইনের তরুনী। এখানে এসে খ্রিষ্টান ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন। তার নতুন নাম রাখা হয়েছে নাজিফা রশিদ আমিরা।
২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী গ্রামে প্রেমিক নাঈমের বাড়িতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হয়। সেখানে বিদেশি ওই তরুণীকে দেখতে শতশত মানুষ ভিড় জমায়। এর আগে একই বছর ৩ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) নাইমের বাড়িতে আসেন ফিলিপাইনের ওই তরুণী। ৬ জানুয়ারি শুক্রবার ওই বাড়িতে আনুষ্ঠানিক ধুমধাম করে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
নাইমের স্বজনেরা জানান, উভয় পক্ষের সম্মতিতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। ফিলিপাইনের ওই তরুনী আসার পর থেকে সবার সাথে মিলেমিশে চলছে। এখানকার খাবার দাবার তার খুব পছন্দ।
ওই সময় লক্ষ্মীপুরের ছেলের সঙ্গে ফিলিপাইন মেয়ের বিয়ের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। দূরদূরান্ত থেকে কৌতূহলী মানুষ ছুটে এসেছেন তাদের এক নজর দেখতে।
ট্যাগ :