ঢাকা ০৯:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাদের হাতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব দিলেন?

কাদের হাতে দায়িত্ব দিলেন?

একবার দেখুন, যে সকল উপদেষ্টা র হাতে দেশের দায়িত্ব দিলেন তারা আসলে কেমন যোগ্যতা সম্পন্ন? লেখা পড়া কি করেছেন? কিংবা কার কি ইতিহাস? অনেক অনেক গল্প একেক জনের। কিছু কিছু তুলে ধরবো। প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে সবাই জানেন। তাই বাকি ১৬ জন কে নিয়েই লিখবো।

সালেহউদ্দিন আহমেদ :
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্ণর। মানে যেই ব্যাংক বাংলাদেশের র সকল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ করে তিনি তার প্রধান ছিলেন। বাংলাদেশের মাত্র ১২ জন ব্যাক্তি এই পদে কাজ করেছেন ১৯৭২ থেকে আজ অব্দি। তিনি সেই ১২ জনের একজন। একজন অর্থনীতিবিদ । তিনি BRAC এর অধ্যাপক ও বটে। তিনি তৎকালীন পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিস ( পি এস পি) ক্যাডারে যোগ দিয়েছিলেন।

এম সাখাওয়াত হোসেন :
উনি একজন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল। মানে হলো জেনারেল যদি সর্বোচ্চ পদবী হয় তিনি উপর থেকে চার নাম্বার। মানে এক তারকা। তার লিখা বই এর সংখ্যা ২০ টি এর বেশী। শুধু তাই না, তিনি একজন গবেষক এবং বিশ্লেষক। এবার তার গবেষনার বিষয় বস্তু টা শুনেন
” জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা “… উনি একজন সাবেক নির্বাচন কমিশমার।

ড. আসিফ নজরুল :
তিনিও একজন আইনের অধ্যাপক। তাও বাংলাদেশ এর শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি একাধারে State University র আইন বিভাগের উপদেষ্টা। তিনি বাংলাদেশ সরকারের একজন সরকারি কর্মকর্তা ( ম্যাজিস্ট্রেট) হিসেবেও কাজ করেছেন। অনেকের নাও জানা থাকতে পারে। উনি প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ এর জামাতা।

এ এফ হাসান আরিফ :
উনি একজন অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। সম্ভবত উনি ই এই উপদেষ্টা দের মাঝে এমন একজন যিনি এর আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও উপদেষ্টা ছিলেন। বুঝলাম না কতটা জ্ঞানী আর নির্ভরযোগ্য হলে দুই টা সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে তাকে রাখা হয়। কলকাতার সেইন্ট জেভিয়ার কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল এল বি পাশ করেন।

( উল্লখ্য, যদিও এবার তিনি প্রধান উপদেষ্টা, তবে ড.মুহাম্মদ ইউনুস ১৯৯৬ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা ছিলেন)

মো: তৌহিদ হোসেন :
বাংলাদেশের বিসিএস কর্মকর্তাদের মাঝে যাদের প্রথম সারির ধরা হয় তার মাঝে পররাষ্ট্র ক্যাডার অন্যতম। তো সেই ক্যাডারের প্রশিক্ষন হয় যে প্রতিষ্ঠানে তার নাম ফরেন সার্ভিস একাডেমী। তো এই ভদ্র লোক এই প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল ছিলেন। ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব। ছিলেন কলকাতায় ডেপুটি কমিশনার। উনার স্নাকোত্তর করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে। উনি 1st class 1st হয়েছিলেন ঢাবি থেকে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান : বলুন তো এশিয়ার নোবেল পুরস্কার কোনটিকে বলা হয়? জ্বী ঠিক ভাবছেন। এর নাম ” রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার “। এই মানুষ টি ২০১২ সালে এই পুরস্কার পেয়েছেন। উনার স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বড়ই ঈর্ষনীয়। SSC পাশ ভিকারুননিসা থেকে। HSC পাশ হলিক্রস থেকে। ব্যাচেলর আর মাস্টার্স করলেন আইনের উপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কি একটা অবস্থা। BELA ( বেলা) র নাম হয়তো শুনেছেন
এটা হলো বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি। উনি এই সংস্থা র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

শারমীন মুরশিদ :
ব্রতী নামক সমাজ কল্যান সংস্থার CEO তিনি। শুধু তাই না, তিনি বিভিন্ন দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষনকারী হিসেবে কাজ করেছেন। ব্রতী সংস্থা টি প্রায় ২০ বছরের অধিক সময় ধরে কাজ করছেন। তিনি নদী রক্ষা কমিশন এর সাবেক সদস্য। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের উপর বানানো প্রামাণ্য চিত্র ” মুক্তির গান” এ যে কজন গানে কন্ঠ দিয়েছেন তাদের একজন তিনি। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় ” মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা ” র সদস্য ছিলেন তিনি।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সমাজ কল্যান মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ মহিলা সমিতির প্রথম সভাপতি নুরজাহান মুরশীদ এর মেয়ে তিনি।

ফারুক ই আজম :
উনি বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর প্রতীক।
অপারেশান জ্যাকপট এর চট্টগ্রাম বন্দর আক্রমণ কারী অভিযানিক দলের উপ- অধিনায়ক ছিলেন তিনি। চট্টগ্রামে যে বিখ্যাত বিজয় মেলা হয়ে আসছে ১৯৮৯ সাল থেকে তার সংগঠক/ প্রবর্তক ছিলেন তিনি।

আদিলুর রহমান খান :
এরশাদের শাসন বিরুদ্ধে যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয়েছিলো তাতে এই সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন সামনের সারিতে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ওপর পড়াশুনা করেন। মানবাধিকার সংস্থা ” অধিকার ” এর প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮৪ সালের পর থেকে আজ অব্দি যারা এই Robert F. KENNEDY HUMAN RIGHTS AWARD পেয়েছেন তিনি তাদের মাঝে একমাত্র বাঙালী। এটা দেয়া হয় তাদের যারা তাদের দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছেন সাহসিকতার সাথে।

সুপ্রদীপ চাকমা :
তিনি সাবেক রাষ্ট্রদূত। তিনি বিসিএস ক্যাডার ( পররাষ্ট্র -৭ম ব্যাচ)। তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মার্কেটিং বিভাগ। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি মেক্সিকো, ভিয়েতনাম এ রাষ্ট্রদূত ও ছিলেন।

ফরিদা আক্তার :
উনার পড়াশুনা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে। উনি ফরহাদ মাজহার সাহেবের স্ত্রী। নারী আন্দোলন এর সাথে কাজ করে যাচ্ছেন ৩ দশকের বেশী সময় ধরে। এখন তিনি ঊবীনিগ ( উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারনী গবেষনা) এর নির্বাহী পরিচালক। দিনাজপুরের ইয়াসমিন হত্যাকাণ্ড ( ২৪ শে আগস্ট, ১৯৯৫) এর সময় তিনি তীব্র আন্দোলন করেছিলেন। কেও চাইলে এই লোমহর্ষক ঘটনা দেখে আসতে পারেন ইতিহাস থেকে। জাতীয় সংসদে যে নারীদের সংরক্ষিত সীট তা প্রতিষ্ঠার পেছনের একজন কারিগর তিনি। একটা মজার ব্যাপার হলো, উনি ড. ইউনুস কে সরাসরি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে পড়ার সময়।

বিধান রঞ্জন রায় :
এই মানুষ টি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এম বি বি এস পাশ করেন। (আমারও এই মেডিকেলে পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো)। তিনি বিখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। অধ্যাপক ও পরিচালক হিসেবে বহু বছর কাজ করেছেন দেশের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে মানসিক রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন।

আ ফ ম খালিদ হোসেন :
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে বিএ ও এম এ পাশ করেন। একই বিষয়ে ওমরগনি এম ই এস কলেজে অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। ছাত্র জীবনেই ৪ টি পত্রিকার সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। ইসলামি বিশ্বকোষ ২য় সংস্করনের ৩ থেকে ৯ খন্ড ও সীরাত বিশ্বকোষ সম্পাদনা করেন। তার বর্তমান রাজনৈতিক পরিচয় হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর, ইসলামী আন্দোলনের শিক্ষা উপদেষ্টা। নেজামে ইসলামী পার্টির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। সময় থাকলে তার শ্বশুর ছিদ্দিক আহমদ সম্পর্কে পড়ে আসতে পারেন। মজা পাবেন।

নূরজাহান বেগম :
তিনিও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তিনি ২০১০ সালে গ্রামীন ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ২০১১ সালে ড.ইউনুস গ্রামীন ব্যাংক ছেড়ে দেবার পর থেকে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। আজ থেকে ৪৮ বছর আগে যখন জোবরা গ্রামে গ্রামীন ব্যাংকের কাজ কেবল শুরু সেই দিন গুলোতে তিনি ড. ইউনুস এর প্রথম সারির যোদ্ধা। গ্রামের মহিলাদের সংগঠিত করা ও প্রশিক্ষণ দেয়া ছিলো তার মূল কাজ। শুরু র দিকের গ্রামীন ব্যাংক ট্রেনিং ইন্সটিটিউট এর প্রিন্সিপাল ছিলেন তিনি। সত্যি বলতে গ্রামীন ব্যাংকের গোড়া থেকে সব কিছুতেই এই মানুষ জড়িত। তার ই ধারাবাহিকতায় বিগত শাসনামলে যে চার জন গ্রামীন ব্যাংক সম্পর্কিত মামলার আসামী ছিল তাদের একজন এই উপদেষ্টা।

নাহিদ ইসলাম :
ছাত্র এবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক। বিজ্ঞান কলেজের ছাত্র। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স পাস। এখন মাস্টার্স এর ছাত্র। তিনি কিন্তু ২০১৯ এর ডাকসু নির্বাচনে নুরুল – রাশেদ – ফারুক প্যানেল থেকে সংস্কৃতি সম্পাদক পদে দাড়াইছিলেন। যদিও তখন জয়ী হন নি। তবে এবার হয়েছেন। সবশেষ “গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি” নামম ছাত্র সংগঠন এর সদস্য সচিব হিসেবে দায়ত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।

আসিফ মাহমুদ :
ছাত্র ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্র ছিলেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স শেষ করে এখন মাস্টার্স এ পড়ছেন। ২০২৩ সালের ঢাবির ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রথম সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। যদিও পরে তা ছেড়ে দিয়ে ২০২৩ এ গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি ঢাবি কমিটির আহবায়ক হয়েছিলেন।

……..

কেমন মনে হচ্ছে?? যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন খুব সহজে তোলা যাবে না। তবে কিছু ফ্যাক্ট সামনে আসে। যেমন
>গ্রামীন ব্যাংক এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত খুব গুরুত্বপূর্ণ ২ জন এই ১৭ জনের মাঝে আছে।

> এই ১৬ জনের মাঝে ৭ জন ই কোনও না কোনও NGO সাথে জড়িত। খেয়াল করছেন? যেমন – গ্রামীন ব্যাংক ( নুরজাহান বেগম), আর্টিকেল ১৯ ( ড. আসিফ নজরুল), অধিকার ( আদিলুর রহমান), বেলা ( রেজওয়ানা হাসান), ব্রতী ( শারমীন মুরশিদ) , উবিনীগ (ফরিদা আক্তার)। আর প্রধান উপদেষ্টা তো গ্রামীন ব্যাংক এর প্রতিষ্ঠাতা ই।

> এই ১৭ জনের মাঝে বেশ কজন কিন্তু জেল/ কোর্ট / গ্রেপ্তার এইসব ঘটনার মধ্যে দিয়েও গিয়েছেন। যেমন ড. আসিফ নজরুল কে ২০১২ সালে হাইকোর্ট তলব করেছিলো এই জন্যে যে তিনি টক শো তে অগণতান্ত্রিক কথা বলেছেন। ২০১৭ তে তার নাম এ সেই মানহানির মামলা ও করা হয়েছিলো।
আদিলুর রহমান মানবাধিকার নিয়ে কথা বলায় জেল খেটেছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও নুরজাহান বেগম তো গ্রামীন ব্যাংক নিয়েই মামলার সম্মুখীন হয়েছেন।
আসিফ এবং নাহিদ ও সম্প্রতি ডিবি তে আটক ছিলেন।

> ক্ষমতা কাকে বলে। প্রধান উপদেষ্টা পদ নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার প্রায় সমতুল্য। এখন অব্দি সাংবিধানিক ভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে মাত্র ৬ জন এই পদে দায়িত্ব পেয়েছেন।
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, লতিফুর রহমান, ইয়াজউদ্দিন আহমেদ, ফজলুল হক, ফখরুদ্দিন আহমদ, মুহম্মদ ইউনুস। এর মাঝে প্রথম তিন জন মৃত্যু বরন করেছেন। এর মাঝে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ছিলেন একাধারে রাষ্ট্রপতি আবার প্রধান উপদেষ্টা। একমাত্র ফজলুল হক ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

তবে অসাংবিধানিক ভাবে ১৯৯১ সালে একটি তত্ত্ববধায়ক সরকার গঠিত হয়েছিলো। যার প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ। পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকার এসে প্রথম অধিবেশনে ই এই সরকারের কার্যক্রমের বৈধতা দেয়।

> উপদেষ্টা গণ মন্ত্রীর পদমর্যাদা পাবেন। বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সেই হিসেবেই পাবেন। তার মানে আসিফ ও নাহিদ কে আপনি মন্ত্রী ভাবতে পারেন পরোক্ষ ভাবে।

> কেও কি একবারের জন্যে হলেও ভেবেছেন নাহিদ ও আসিফ এর তো বয়স কম। সবার এত বয়স। এত অল্প বয়সে উপদেষ্টা হওয়া যায়? কিংবা আসলে তাদের কি উপদেষ্টা হবার শর্ত পূরণ হয়?
তাহলে দেখি তো উপদেষ্টা হবার যোগ্যতা কি? আপনি কি হতে পারবেন একজন উপদেষ্টা?

** সংসদ সদস্য হবার যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে।
**কোনও রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোনও সংগঠনের সদস্য হবেন না। ( সারজিস কেনো হয়নি একটা ধারনা এখান থেকে পেতে পারেন)
** আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী নন বা হবেন না এই মর্মে লিখিতভাবে সম্মতি দিতে হবে। ( আসিফ ও নাহিদ তাহলে এ পর্যন্তই)
** ৭২ বছরের নীচে বয়স হতে হবে।
কি মনে হচ্ছে তারা কি শুধু আবেগ দিয়েই যোগ্য নাকি নিয়মের মারপ্যাচেও যোগ্য?
উল্লেখ্য সাংসদ হবার জন্য বয়স ২৫ এর বেশী হতে হবে।

অনেক লম্বা হয়ে গেছে। আরেকটু
দেখুন যে কোন এলাকা আর কোন বিদ্যা পীঠ এর জয় জয় কার এই পরিষদে।
অবাক হলেও সত্য ৮ জন ( মানে প্রায় ৫০%) এসেছেন চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে। সিলেট থেকে ৩ জন। বরিশাল থেকে একজন। ঢাকা থেকে একজন। একজন এর জন্ম কোলকাতায়। তৌহদ হোসেন এর জন্মস্থান জানা নাই। মানে চট্টগ্রাম কি দেখালো এটা? ময়মনসিংহ, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরের কেও নেই কিন্তু। না আমি বৈষম্য বলছিনা। পরিসংখ্যান আর কি।

হয়তো অবাক হবার মত নয় তবে ঈর্ষনীয় এটাই যে এই ১৭ জনের পরিষদের ৮ জন ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। একবার ভাবুন? কি একটা মানুষ গড়ার কারিগর এই প্রতিষ্ঠান। এর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন। মেডিকেল, সেনাবাহিনী প্রতিনিধি আছে। তবে কৃষি আর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কৃষিবিদ আর ইঞ্জিনিয়ার দের মাঝে তেমন কেও নাই।

শেষ করি সময়ের আলোচিত শব্দ দিয়ে। কে কোন জেনারেশান থেকে প্রতিনিধিত্ব করছে।
শারমিন মুরশিদ এর জন্মসাল জানা নেই আমার। উনাকে বাদ দিলে বাকি ১৬ জনের
৩ জন এসেছেন ” The silent Genration ( 1928- 1945) ” গ্রুপ থেকে,
৯ জন ই এসেছেন ” Baby Boom Generation or Boomers ( 1945-64) ” গ্রুপ থেকে।
২ জন এসেছেন ” Generation X ( 1965-80 ) এই গ্রুপ থেকে।
২ জন আমাদের প্রিয় ” Generation Z or iGen ( 1997-2010) এই গ্রুপ থেকে।

শুনে অবাক হবেন আমাদের এবারের প্রধান উপদেষ্টা ২৭ টি মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন বা পেয়েছেন। যা আগের কোনও প্রধান উপদেষ্টা পান নি। শুধু সাক্ষর করা ছাড়া পড়ে দেখাও তো কঠিন। সম্ভবত উনি নোবেল লরিয়েট। তাই বাকিরা চাপিয়ে দিয়েছেন। মজা করে বললাম আর কি।

অনেক্ষণ ধরে ঘাঁটাঘাটি করে লিখাটি লিখলাম। কিন্তু, একটা প্রশ্নের উত্তর এখনও পরিষ্কার হলো না, তিন জন এখনও শপথ নিলেন না। তবে কি তারা….

শুভ কামনা নবীন – প্রবীনের মিশেলে গড়া নতুন সরকার। দেশের জন্য কিছু করে যাবেন এই প্রত্যাশা করি।

লেখক : সাহাবুদ্দিন রাজু 

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

লক্ষ্মীপুরের উত্তরচরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির বিলুপ্ত  

কাদের হাতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব দিলেন?

আপডেট : ১০:৫৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৪

কাদের হাতে দায়িত্ব দিলেন?

একবার দেখুন, যে সকল উপদেষ্টা র হাতে দেশের দায়িত্ব দিলেন তারা আসলে কেমন যোগ্যতা সম্পন্ন? লেখা পড়া কি করেছেন? কিংবা কার কি ইতিহাস? অনেক অনেক গল্প একেক জনের। কিছু কিছু তুলে ধরবো। প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে সবাই জানেন। তাই বাকি ১৬ জন কে নিয়েই লিখবো।

সালেহউদ্দিন আহমেদ :
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্ণর। মানে যেই ব্যাংক বাংলাদেশের র সকল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ করে তিনি তার প্রধান ছিলেন। বাংলাদেশের মাত্র ১২ জন ব্যাক্তি এই পদে কাজ করেছেন ১৯৭২ থেকে আজ অব্দি। তিনি সেই ১২ জনের একজন। একজন অর্থনীতিবিদ । তিনি BRAC এর অধ্যাপক ও বটে। তিনি তৎকালীন পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিস ( পি এস পি) ক্যাডারে যোগ দিয়েছিলেন।

এম সাখাওয়াত হোসেন :
উনি একজন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল। মানে হলো জেনারেল যদি সর্বোচ্চ পদবী হয় তিনি উপর থেকে চার নাম্বার। মানে এক তারকা। তার লিখা বই এর সংখ্যা ২০ টি এর বেশী। শুধু তাই না, তিনি একজন গবেষক এবং বিশ্লেষক। এবার তার গবেষনার বিষয় বস্তু টা শুনেন
” জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা “… উনি একজন সাবেক নির্বাচন কমিশমার।

ড. আসিফ নজরুল :
তিনিও একজন আইনের অধ্যাপক। তাও বাংলাদেশ এর শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি একাধারে State University র আইন বিভাগের উপদেষ্টা। তিনি বাংলাদেশ সরকারের একজন সরকারি কর্মকর্তা ( ম্যাজিস্ট্রেট) হিসেবেও কাজ করেছেন। অনেকের নাও জানা থাকতে পারে। উনি প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ এর জামাতা।

এ এফ হাসান আরিফ :
উনি একজন অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। সম্ভবত উনি ই এই উপদেষ্টা দের মাঝে এমন একজন যিনি এর আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও উপদেষ্টা ছিলেন। বুঝলাম না কতটা জ্ঞানী আর নির্ভরযোগ্য হলে দুই টা সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে তাকে রাখা হয়। কলকাতার সেইন্ট জেভিয়ার কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল এল বি পাশ করেন।

( উল্লখ্য, যদিও এবার তিনি প্রধান উপদেষ্টা, তবে ড.মুহাম্মদ ইউনুস ১৯৯৬ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা ছিলেন)

মো: তৌহিদ হোসেন :
বাংলাদেশের বিসিএস কর্মকর্তাদের মাঝে যাদের প্রথম সারির ধরা হয় তার মাঝে পররাষ্ট্র ক্যাডার অন্যতম। তো সেই ক্যাডারের প্রশিক্ষন হয় যে প্রতিষ্ঠানে তার নাম ফরেন সার্ভিস একাডেমী। তো এই ভদ্র লোক এই প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল ছিলেন। ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব। ছিলেন কলকাতায় ডেপুটি কমিশনার। উনার স্নাকোত্তর করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে। উনি 1st class 1st হয়েছিলেন ঢাবি থেকে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান : বলুন তো এশিয়ার নোবেল পুরস্কার কোনটিকে বলা হয়? জ্বী ঠিক ভাবছেন। এর নাম ” রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার “। এই মানুষ টি ২০১২ সালে এই পুরস্কার পেয়েছেন। উনার স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বড়ই ঈর্ষনীয়। SSC পাশ ভিকারুননিসা থেকে। HSC পাশ হলিক্রস থেকে। ব্যাচেলর আর মাস্টার্স করলেন আইনের উপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কি একটা অবস্থা। BELA ( বেলা) র নাম হয়তো শুনেছেন
এটা হলো বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি। উনি এই সংস্থা র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

শারমীন মুরশিদ :
ব্রতী নামক সমাজ কল্যান সংস্থার CEO তিনি। শুধু তাই না, তিনি বিভিন্ন দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষনকারী হিসেবে কাজ করেছেন। ব্রতী সংস্থা টি প্রায় ২০ বছরের অধিক সময় ধরে কাজ করছেন। তিনি নদী রক্ষা কমিশন এর সাবেক সদস্য। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের উপর বানানো প্রামাণ্য চিত্র ” মুক্তির গান” এ যে কজন গানে কন্ঠ দিয়েছেন তাদের একজন তিনি। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় ” মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা ” র সদস্য ছিলেন তিনি।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সমাজ কল্যান মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ মহিলা সমিতির প্রথম সভাপতি নুরজাহান মুরশীদ এর মেয়ে তিনি।

ফারুক ই আজম :
উনি বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর প্রতীক।
অপারেশান জ্যাকপট এর চট্টগ্রাম বন্দর আক্রমণ কারী অভিযানিক দলের উপ- অধিনায়ক ছিলেন তিনি। চট্টগ্রামে যে বিখ্যাত বিজয় মেলা হয়ে আসছে ১৯৮৯ সাল থেকে তার সংগঠক/ প্রবর্তক ছিলেন তিনি।

আদিলুর রহমান খান :
এরশাদের শাসন বিরুদ্ধে যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয়েছিলো তাতে এই সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন সামনের সারিতে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ওপর পড়াশুনা করেন। মানবাধিকার সংস্থা ” অধিকার ” এর প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮৪ সালের পর থেকে আজ অব্দি যারা এই Robert F. KENNEDY HUMAN RIGHTS AWARD পেয়েছেন তিনি তাদের মাঝে একমাত্র বাঙালী। এটা দেয়া হয় তাদের যারা তাদের দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছেন সাহসিকতার সাথে।

সুপ্রদীপ চাকমা :
তিনি সাবেক রাষ্ট্রদূত। তিনি বিসিএস ক্যাডার ( পররাষ্ট্র -৭ম ব্যাচ)। তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মার্কেটিং বিভাগ। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি মেক্সিকো, ভিয়েতনাম এ রাষ্ট্রদূত ও ছিলেন।

ফরিদা আক্তার :
উনার পড়াশুনা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে। উনি ফরহাদ মাজহার সাহেবের স্ত্রী। নারী আন্দোলন এর সাথে কাজ করে যাচ্ছেন ৩ দশকের বেশী সময় ধরে। এখন তিনি ঊবীনিগ ( উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারনী গবেষনা) এর নির্বাহী পরিচালক। দিনাজপুরের ইয়াসমিন হত্যাকাণ্ড ( ২৪ শে আগস্ট, ১৯৯৫) এর সময় তিনি তীব্র আন্দোলন করেছিলেন। কেও চাইলে এই লোমহর্ষক ঘটনা দেখে আসতে পারেন ইতিহাস থেকে। জাতীয় সংসদে যে নারীদের সংরক্ষিত সীট তা প্রতিষ্ঠার পেছনের একজন কারিগর তিনি। একটা মজার ব্যাপার হলো, উনি ড. ইউনুস কে সরাসরি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে পড়ার সময়।

বিধান রঞ্জন রায় :
এই মানুষ টি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এম বি বি এস পাশ করেন। (আমারও এই মেডিকেলে পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো)। তিনি বিখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। অধ্যাপক ও পরিচালক হিসেবে বহু বছর কাজ করেছেন দেশের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে মানসিক রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন।

আ ফ ম খালিদ হোসেন :
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে বিএ ও এম এ পাশ করেন। একই বিষয়ে ওমরগনি এম ই এস কলেজে অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। ছাত্র জীবনেই ৪ টি পত্রিকার সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। ইসলামি বিশ্বকোষ ২য় সংস্করনের ৩ থেকে ৯ খন্ড ও সীরাত বিশ্বকোষ সম্পাদনা করেন। তার বর্তমান রাজনৈতিক পরিচয় হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর, ইসলামী আন্দোলনের শিক্ষা উপদেষ্টা। নেজামে ইসলামী পার্টির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। সময় থাকলে তার শ্বশুর ছিদ্দিক আহমদ সম্পর্কে পড়ে আসতে পারেন। মজা পাবেন।

নূরজাহান বেগম :
তিনিও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তিনি ২০১০ সালে গ্রামীন ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ২০১১ সালে ড.ইউনুস গ্রামীন ব্যাংক ছেড়ে দেবার পর থেকে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। আজ থেকে ৪৮ বছর আগে যখন জোবরা গ্রামে গ্রামীন ব্যাংকের কাজ কেবল শুরু সেই দিন গুলোতে তিনি ড. ইউনুস এর প্রথম সারির যোদ্ধা। গ্রামের মহিলাদের সংগঠিত করা ও প্রশিক্ষণ দেয়া ছিলো তার মূল কাজ। শুরু র দিকের গ্রামীন ব্যাংক ট্রেনিং ইন্সটিটিউট এর প্রিন্সিপাল ছিলেন তিনি। সত্যি বলতে গ্রামীন ব্যাংকের গোড়া থেকে সব কিছুতেই এই মানুষ জড়িত। তার ই ধারাবাহিকতায় বিগত শাসনামলে যে চার জন গ্রামীন ব্যাংক সম্পর্কিত মামলার আসামী ছিল তাদের একজন এই উপদেষ্টা।

নাহিদ ইসলাম :
ছাত্র এবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক। বিজ্ঞান কলেজের ছাত্র। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স পাস। এখন মাস্টার্স এর ছাত্র। তিনি কিন্তু ২০১৯ এর ডাকসু নির্বাচনে নুরুল – রাশেদ – ফারুক প্যানেল থেকে সংস্কৃতি সম্পাদক পদে দাড়াইছিলেন। যদিও তখন জয়ী হন নি। তবে এবার হয়েছেন। সবশেষ “গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি” নামম ছাত্র সংগঠন এর সদস্য সচিব হিসেবে দায়ত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।

আসিফ মাহমুদ :
ছাত্র ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্র ছিলেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স শেষ করে এখন মাস্টার্স এ পড়ছেন। ২০২৩ সালের ঢাবির ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রথম সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। যদিও পরে তা ছেড়ে দিয়ে ২০২৩ এ গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি ঢাবি কমিটির আহবায়ক হয়েছিলেন।

……..

কেমন মনে হচ্ছে?? যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন খুব সহজে তোলা যাবে না। তবে কিছু ফ্যাক্ট সামনে আসে। যেমন
>গ্রামীন ব্যাংক এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত খুব গুরুত্বপূর্ণ ২ জন এই ১৭ জনের মাঝে আছে।

> এই ১৬ জনের মাঝে ৭ জন ই কোনও না কোনও NGO সাথে জড়িত। খেয়াল করছেন? যেমন – গ্রামীন ব্যাংক ( নুরজাহান বেগম), আর্টিকেল ১৯ ( ড. আসিফ নজরুল), অধিকার ( আদিলুর রহমান), বেলা ( রেজওয়ানা হাসান), ব্রতী ( শারমীন মুরশিদ) , উবিনীগ (ফরিদা আক্তার)। আর প্রধান উপদেষ্টা তো গ্রামীন ব্যাংক এর প্রতিষ্ঠাতা ই।

> এই ১৭ জনের মাঝে বেশ কজন কিন্তু জেল/ কোর্ট / গ্রেপ্তার এইসব ঘটনার মধ্যে দিয়েও গিয়েছেন। যেমন ড. আসিফ নজরুল কে ২০১২ সালে হাইকোর্ট তলব করেছিলো এই জন্যে যে তিনি টক শো তে অগণতান্ত্রিক কথা বলেছেন। ২০১৭ তে তার নাম এ সেই মানহানির মামলা ও করা হয়েছিলো।
আদিলুর রহমান মানবাধিকার নিয়ে কথা বলায় জেল খেটেছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও নুরজাহান বেগম তো গ্রামীন ব্যাংক নিয়েই মামলার সম্মুখীন হয়েছেন।
আসিফ এবং নাহিদ ও সম্প্রতি ডিবি তে আটক ছিলেন।

> ক্ষমতা কাকে বলে। প্রধান উপদেষ্টা পদ নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার প্রায় সমতুল্য। এখন অব্দি সাংবিধানিক ভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে মাত্র ৬ জন এই পদে দায়িত্ব পেয়েছেন।
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, লতিফুর রহমান, ইয়াজউদ্দিন আহমেদ, ফজলুল হক, ফখরুদ্দিন আহমদ, মুহম্মদ ইউনুস। এর মাঝে প্রথম তিন জন মৃত্যু বরন করেছেন। এর মাঝে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ছিলেন একাধারে রাষ্ট্রপতি আবার প্রধান উপদেষ্টা। একমাত্র ফজলুল হক ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

তবে অসাংবিধানিক ভাবে ১৯৯১ সালে একটি তত্ত্ববধায়ক সরকার গঠিত হয়েছিলো। যার প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ। পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকার এসে প্রথম অধিবেশনে ই এই সরকারের কার্যক্রমের বৈধতা দেয়।

> উপদেষ্টা গণ মন্ত্রীর পদমর্যাদা পাবেন। বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সেই হিসেবেই পাবেন। তার মানে আসিফ ও নাহিদ কে আপনি মন্ত্রী ভাবতে পারেন পরোক্ষ ভাবে।

> কেও কি একবারের জন্যে হলেও ভেবেছেন নাহিদ ও আসিফ এর তো বয়স কম। সবার এত বয়স। এত অল্প বয়সে উপদেষ্টা হওয়া যায়? কিংবা আসলে তাদের কি উপদেষ্টা হবার শর্ত পূরণ হয়?
তাহলে দেখি তো উপদেষ্টা হবার যোগ্যতা কি? আপনি কি হতে পারবেন একজন উপদেষ্টা?

** সংসদ সদস্য হবার যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে।
**কোনও রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোনও সংগঠনের সদস্য হবেন না। ( সারজিস কেনো হয়নি একটা ধারনা এখান থেকে পেতে পারেন)
** আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী নন বা হবেন না এই মর্মে লিখিতভাবে সম্মতি দিতে হবে। ( আসিফ ও নাহিদ তাহলে এ পর্যন্তই)
** ৭২ বছরের নীচে বয়স হতে হবে।
কি মনে হচ্ছে তারা কি শুধু আবেগ দিয়েই যোগ্য নাকি নিয়মের মারপ্যাচেও যোগ্য?
উল্লেখ্য সাংসদ হবার জন্য বয়স ২৫ এর বেশী হতে হবে।

অনেক লম্বা হয়ে গেছে। আরেকটু
দেখুন যে কোন এলাকা আর কোন বিদ্যা পীঠ এর জয় জয় কার এই পরিষদে।
অবাক হলেও সত্য ৮ জন ( মানে প্রায় ৫০%) এসেছেন চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে। সিলেট থেকে ৩ জন। বরিশাল থেকে একজন। ঢাকা থেকে একজন। একজন এর জন্ম কোলকাতায়। তৌহদ হোসেন এর জন্মস্থান জানা নাই। মানে চট্টগ্রাম কি দেখালো এটা? ময়মনসিংহ, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরের কেও নেই কিন্তু। না আমি বৈষম্য বলছিনা। পরিসংখ্যান আর কি।

হয়তো অবাক হবার মত নয় তবে ঈর্ষনীয় এটাই যে এই ১৭ জনের পরিষদের ৮ জন ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। একবার ভাবুন? কি একটা মানুষ গড়ার কারিগর এই প্রতিষ্ঠান। এর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন। মেডিকেল, সেনাবাহিনী প্রতিনিধি আছে। তবে কৃষি আর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কৃষিবিদ আর ইঞ্জিনিয়ার দের মাঝে তেমন কেও নাই।

শেষ করি সময়ের আলোচিত শব্দ দিয়ে। কে কোন জেনারেশান থেকে প্রতিনিধিত্ব করছে।
শারমিন মুরশিদ এর জন্মসাল জানা নেই আমার। উনাকে বাদ দিলে বাকি ১৬ জনের
৩ জন এসেছেন ” The silent Genration ( 1928- 1945) ” গ্রুপ থেকে,
৯ জন ই এসেছেন ” Baby Boom Generation or Boomers ( 1945-64) ” গ্রুপ থেকে।
২ জন এসেছেন ” Generation X ( 1965-80 ) এই গ্রুপ থেকে।
২ জন আমাদের প্রিয় ” Generation Z or iGen ( 1997-2010) এই গ্রুপ থেকে।

শুনে অবাক হবেন আমাদের এবারের প্রধান উপদেষ্টা ২৭ টি মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন বা পেয়েছেন। যা আগের কোনও প্রধান উপদেষ্টা পান নি। শুধু সাক্ষর করা ছাড়া পড়ে দেখাও তো কঠিন। সম্ভবত উনি নোবেল লরিয়েট। তাই বাকিরা চাপিয়ে দিয়েছেন। মজা করে বললাম আর কি।

অনেক্ষণ ধরে ঘাঁটাঘাটি করে লিখাটি লিখলাম। কিন্তু, একটা প্রশ্নের উত্তর এখনও পরিষ্কার হলো না, তিন জন এখনও শপথ নিলেন না। তবে কি তারা….

শুভ কামনা নবীন – প্রবীনের মিশেলে গড়া নতুন সরকার। দেশের জন্য কিছু করে যাবেন এই প্রত্যাশা করি।

লেখক : সাহাবুদ্দিন রাজু