মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ:
আসন্ন ২১ ই নভেম্বর জেলা আওয়ামীলীগ সম্মেলনে গুঞ্জন উঠেছে ফের সভাপতি পদে বহাল থাকার সম্ভাবনা ” জেন্টলম্যান খ্যাত ‘ মিয়া গোলাম ফারুক পিংকু। সম্প্রতি তিনি উন্মুক্ত আলোচনায় বলেছেন নেতা – কর্মীদের উদ্দেশ্যে
বিগত দিনে সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দল ও নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করার চেষ্টা করেছি। আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা যদি মনে করেন, এ জেলার সভাপতির দায়িত্ব আমার কাছে নিরাপদ। তাহলে পুনরায় আমাকেই দায়িত্ব দিবেন। আবার অন্য কাউকে নেত্রীর যোগ্য মনে হলে, জেলার দায়িত্ব দিতে পারেন। এতে আমার বিন্দুমাত্র হিংসা বা ক্ষোভ নেই। তবে পুনরায় দায়িত্ব পেলে লক্ষ্মীপুর জেলাকে ভাইকেন্দ্রিক রাজনীতি থেকে মুক্ত করবো। কারণ বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রিয় সংগঠনের জন্য বিগত দিনে কাজ করেছি এবং আগামীতেও দলকে ভালোবেসে কাজ করে যাবো।
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মিয়া গোলাম ফারুক পিংকু। সাক্ষাতকারে জেলায় আ’লীগকে শক্তিশালী করার কথা উল্লেখ করেন পিংকু বলেন, সংসদ নির্বাচন বেশি দূরে নয়। এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী সামনে অগ্রসর হওয়া জরুরী। লক্ষ্মীপুরের যেকোন কঠিন নির্বাচন মোকাবেলা করা আওয়ামীলীগের জন্য সহজ হবে বলে তিনি মনে করেন। কিন্তু স্বার্থনেশ্বী কিছু নেতার কারণে দলের দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়। তারা নিজেদের স্বার্থে পকেট কমিটির মাধ্যমে প্রকৃত আওয়ামীলীগ না করে নেতাকর্মীদের ভাই লীগের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়। আমি এসব ভাইলীগের চরমভাবে বিরোধী।
আওয়ামীলীগের দুঃসময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ তখন বিরোধীদল। বিএনপি-জামায়াতের হিংসাত্বক রাজনৈতির কবলে জেলায় সক্রিয় নেতাকর্মীরা নিজের বাড়িঘরে থাকতে পারেনি। তারা বিভিন্ন সন্ত্রাস, ষড়যন্ত্র মূলক মামলা-হামলার শিকার হয়ে ঢাকায় গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছিলো। সহায়তার হাত বাড়িয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর মত কোন নেতা ছিলো না। সে মুহুর্তে তৎকালীন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি (বর্তমান সাংসদ) শাহাজাহান কামাল ঢাকায় নেতাকর্মীদের অসহায়ত্বের বিষয় নিয়ে আমার কাছে আসেন। তাৎক্ষনিক ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫ লক্ষ টাকা রমনা হোটেলে বসে তালিকার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ নেতাকর্মীদের মাঝে বিতরণ করি। এরপর ২০০৬ সাল পর্যন্ত ঢাকায় আত্মগোপনকৃত নেতাকর্মীদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা ব্যয় এবং লক্ষ্মীপুর জেলায় হামলায় হাত-পা হারিয়ে পঙ্গু হওয়া কর্মীদের চিকিৎসা ব্যয়, মামলার ব্যয় ও হাইকোট থেকে জামিনের ব্যবস্থা সহ দল বাঁচাতে ২০ কোটি টাকাও বেশি ব্যয় করেছি। সে সময় হাইকোটে কোট ফি দিয়ে (সাবেক আইনমন্ত্রী) এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর মাধ্যমে তাদের জামিনের ব্যবস্থা করা হয়। আল্লাহর রহমতে ব্যক্তিগত তহবিল থাকায় দলের জন্য কাজ করা সম্ভব হয়েছে। তখন আওয়ামীলীগের সভাপতি ঢাকায় স্ব-পরিবারে অবস্থান করলেও দশটা টাকা দিয়ে নেতাকর্মীদের সহযোগীতা করতে পারেনি তিনি। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের (পৌর মেয়র) স-পরিবারে হত্যা মামলায় কারাগারে যান। তারা দাবী করে রাজনৈতিক কারণে তারা কারাবরণ করেছিলো। মুলত, তারা নিজেরদের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার করতে গিয়ে বিভিন্ন মামলার শিকার হয়েছে। তার মধ্যে নুর ইসলাম হত্যাকান্ড উল্লেখযোগ্য। কিন্তু সেই অপবাধের বোঝাও আওয়ামীলীগের কাঁধে দেওয়া হয়েছে।
সভাপতির দায়িত্ব পালন কালে দান-অনুদানের বিষয়ে তিনি বলেন, বিশেষ করে ২০০১ সালে বশিকপুর এলাকর আওয়ামীলীগের কর্মী জাহাঙ্গির আলম হিরন ও ২০১৪ সালে দত্তপাড়া কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মিলনের চোখ নষ্ট করে দেয় বিএনপির সন্ত্রাসী শামীম-আনোয়ার বাহিনী। সে সময় তাদের খোঁজখবর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির-সাধারণ সম্পাদক কেউই নেয়নি। ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে ৩৮ হাজার টাকা দিয়ে মিলনের চোখের অপারেশন করার ব্যবস্থা করেছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত চোখ রক্ষা হয়নি। সম্প্রতি তাদের দু’জনের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সাথে স্বাক্ষাত করিয়ে চাকুরি ও অনুদানের ব্যবস্থা করাই।
প্রধানমন্ত্রীর সাথে নিহত নেতার পরিবারের সাক্ষাত, অনুদান ও চেক বিতরণ।এছাড়াও সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত দত্তপাড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মিরন মেম্বারসহ অনেক নিহত নেতাকর্মীদের পরিবারকেই প্রধানমন্ত্রীর সাথে স্বাক্ষাত ও অনুদানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বর্তমানে অসহায় নেতাকর্মীদের নামে ১শ’ ৫০টিরও বেশি অনুদানের আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুদানের অপেক্ষায় রয়েছে। গত সাড়ে চার বছর সভাপতির দায়িত্বকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৬০ লক্ষ টাকার অনুদান এ জেলার অসহায় নেতাকর্মী দের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে প্রতি মাসে ৫/৬ লক্ষ টাকা এলাকার অসহায় মেয়ের বিয়ে, পঙ্গু, অন্ধ-প্রতিবন্ধী ও দলীয় নেতাকর্মীদের কল্যানে ব্যয় করে আসছেন তিনি। আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের অনেক নেতা আছেন লক্ষ্মীপুর থেকে আয় করে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যয় করেন। আর আমি ঢাকা থেকে আয় করে এনে লক্ষ্মীপুর জেলায় নেতাকর্মীদের কল্যাণে ব্যয় করি। এ জেলা বিএনপির নয়, আওয়ামীলীগের ঘাটি উল্লেখ করে পিংকু বলেন, বিএনপি জামায়াত একত্রে থাকায় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের অবস্থান কমছিলো। যার কারণ বিভিন্ন নির্বাচনে দল থেকে যাদের মনোনায়ন দেওয়া হতো, এ জেলার মাটি ও মানুষের সাথে তাদের সুসম্পর্ক না থাকায় বার বারই হাত ছাড়া হতো আসনগুলো। কিন্তু বর্তমানে তার উল্টো। একদিকে আওয়ামীলীগ সরকারের উন্নয়নের জোয়ার। অন্যদিকে সভাপতি দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা-সম্মেলন করে জেলার মাটি ও মানুষের সাথে সুসম্পর্ক গড়েছি। এজন্য প্রত্যেক মানুষের সাথে আওয়ামীলীগের আত্মার সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়। দলের প্রতি তাদের আস্থা বেড়েছে। বিগত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের অবস্থান ৩০ শতাংশ থাকলেও বর্তমানে তা এখন ৫০শতাংশেরও বেশি। বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগের ভোট ও সমর্থন দুটোই বেশি।
উল্লেখ্য, আওয়ামীলীগের সভাপতি মিয়া গোলাম ফারুক পিংকু ১৯৫৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের চর মোহাম্মদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আলহাজ্ব মৃত মজিবুল হক মিয়া এবং মাতার নাম মৃত আমাতুন নুর। শিক্ষ জীবনে তিনি ১৯৭৫ সালে হাজীরপাড়া হামিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৭৭ সালে নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এছাড়াও ১৯৮১ সালে চৌমুহনী সালেহ আহমদ কলেজ থেরে ডিগ্রী ও ১৯৮৫ সালে ঢাকায় তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। স্কুলছাত্র জীবনে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭৩ সালে তিনি হাজীর পাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি, এরপর পর্যায়ক্রমে নোয়াখালী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, নোয়াখালী পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, চৌমুহনী সালাহ আহমদ কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদ ও পরে জগন্নাথ কলেজ ছাত্রলীগের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কর্মজীবনে পিংকু ১৯৯১ সাল থেকে জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য, ১৯৯৩ সালে থেকে শুরু করে ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর মার্চের ৩ তারিখে সম্মেলনের মাধ্যমে মিয়া গোলাম ফারুক পিংকু জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কর্মজীবনে তিনি সুনাম ধন্য ‘হক ট্রাভেলস্’ এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।